শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অনুমোদনের দৌড়ে অর্ধশত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৩:০৪

দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার অনুমোদন নিয়েও নানা সংকটে চালু করতে পারছে না কেউ কেউ। আবার নানা অনিয়মে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের উপক্রমও হয়েছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আবার নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেতে দৌড়ঝাঁপও কম নয়। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন পড়েছে ১০৯টি। 

এর মধ্যে অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা অনুমোদনের জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। দীর্ঘদিন ধরে আবেদন জমা দেওয়ার পরও অনুমোদন না পাওয়ায় আশা ছেড়ে দিয়েছেন কেউ কেউ। ইউজিসি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিদিনই নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া জানতে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করেছে এমন সংখ্যাও কম নয়।

দেশে বর্তমানে ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে চালু রয়েছে ৯৬টি। অনুমোদন নেওয়ার পর নানা জটিলতায় কার্যক্রম শুরু হয়নি ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৬২টি। রাজধানীসহ অন্যান্য মহানগরীর অলিগলিতেও জেলা পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় আইন না মানলেও ঐ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না মন্ত্রণালয়।

আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, যে সব জায়গায় ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সে সব জায়গাতেও নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন রয়েছে। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পেয়েছেন, এমন উদ্যোক্তারাও নতুন করে ভিন্ন জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেছেন।

বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর অধীনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের জন্য উদ্যোক্তাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন জমা দিতে হয়। আবেদনের ভিত্তিতে ইউজিসি পরিদর্শন রিপোর্ট জমা দিলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ঢাকায় অবস্থিত রয়েল ইউনিভার্সিটির মালিক সাবেক সংসদ সদস্য ডা. এইচ বি এম ইকবাল। তিনি কিশোরগঞ্জে আরো একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন, যার নাম দিয়েছেন শেখ হাসিনা ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের স্ত্রী ফৌজিয়া আলম আবেদন করেছে ‘লালন বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ ময়মনসিংহে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে চান। প্রস্তাবিত নাম রওশন এরশাদ বিশ্ববিদ্যালয়। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজ পটুয়াখালিতে ‘সাউথ রিজন ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন।

সাবেক এমপি এবং জাতীয় পার্টির নেতা এইচ এম গোলাম রেজা আবেদন রয়েছে ‘সিঙ্গাপুর ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ’ স্থাপনের জন্য। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শামসুল আলম ভুঁইয়া অ্যাপোলো ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি নামে চাঁদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চেয়ে আবেদন করেছেন।

উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপউপাচার্য অধ্যাপক ইয়াসমিন আরা লেখা ‘ইউনিভার্সিটি অব বগুড়া ট্রাস্ট’ নামে বগুড়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আবেদন করেছেন।

শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা আহমদ আল কাবির নামে একজন উদ্যোক্তা আবেদন করেছেন আর টি এম আল কবির টেকনোলজি বিশ্ববিদ্যালয় নামে। বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি ‘ইউনিভার্সিটি অব অতীশ দীপঙ্কর’ মুন্সীগঞ্জে স্থাপনের জন্য আবেদন করেছেন। ব্যবসায়ী মোস্তফা আজাদ চৌধুরী রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নামে রংপুরে, আবু নোমান হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি ইউনিভার্সিটি অব মডার্ন টেকনোলজি নামে ঢাকায়, রংপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল আলম আল আমিন নর্থ বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি নামে রংপুরে, আওয়ামী লীগ নেতা হাসান মাহমুদ চৌধুরী ইন্টারন্যাশনাল ওমেন ইউনিভার্সিটি নামে চট্টগ্রামে, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ সংঘ আন্তর্জাতিক পণ্ডিত বিশ্ববিদ্যালয় নামে চট্টগ্রামে, অ্যাডভোকেট আরমান আলী সোনার বাংলা ইউনিভার্সিটি নামে রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আবেদন করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আবেদন করেছে ‘চিটাগাং মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি’ স্থাপনের জন্য।

এসব বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। ইউজিসির পরিচালক ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, উদ্যোক্তাদের আবেদন পাওয়ার পর মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সরেজমিনে পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তী প্রক্রিয়া মন্ত্রণালয় সম্পন্ন করে। আবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে আবেদন করা ১৭টি প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হলে সেখান থেকে ইতিমধ্যে ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে। ২০১৬ সালের আবেদন জমা থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত ২২টি প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের সরেজমিন প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা রয়েছে।

ইত্তেফাক/বিএএফ