শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জ জনসেবায় মডেল

আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৪২

বাংলাদেশ পুলিশের অন্যান্য রেঞ্জ থেকে ব্যতিক্রম ঢাকা রেঞ্জ। ‘ঘুষ লেনদেন, হয়রানি, ডিউটি অফিসারের অসংলগ্ন প্রশ্ন, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ভীতিকর আচরণ ও সাধারণ মানুষকে নাজেহাল করা’—এই রেঞ্জের অধীন থানাগুলোয় এসব দৃশ্য তেমন একটা দেখা যায় না। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের কঠোর মনিটরিংয়ের কারণে ঢাকা রেঞ্জের ৯৬টি থানার দৃশ্য অনেকটাই পালটে গেছে। এ কারণে ঢাকা রেঞ্জকে মডেল হিসেবে গ্রহণ করতে অন্য রেঞ্জগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
 
অ্যাডিশনাল ডিআইজি মো. রেজাউল করিম স্বাক্ষরিত এক আদেশে বলা হয়, নিজ নিজ রেঞ্জ ও মেট্রোপলিটন পুলিশের সেবাকে জনবান্ধব, হয়রানি ও দুর্নীতিমুক্ত করা, পুলিশি কার্যক্রম মনিটরিং ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা রেঞ্জের গৃহীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করে তা অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।

ঢাকা রেঞ্জের অধীনে ১৩টি জেলা, ৯৬টি থানা ও ৪৩টি সার্কেল রয়েছে। দুটি থানা মিলে একটি সার্কেল। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ঢাকা রেঞ্জের অধীন থানাগুলোকে কঠোর মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। জিডি বা মামলা হওয়ার পর বাদীকে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ফোন করা হচ্ছে। মনিটরিংয়ে ঘুষ, হয়রানি ও নাজেহাল হওয়ার ব্যাপারে বাদীদের জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে। মনিটরিংয়ের শুরুতে নানা অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। তবে এখন সেগুলো কমে আসছে। জিডি ও মামলা করার ক্ষেত্রে অর্থ লেনদেন ও হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে না বললেই চলে। থানায় ডিজি বা মামলা করার পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জিডির কার্বন কপি সার্কেল অফিসে দিতে হয়। একই সঙ্গে তা সার্ভারে দিয়ে দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে সেটা সার্কেল, জেলার এসপি ও রেঞ্জের ডিআইজি অফিসের কর্মকর্তারা দেখতে পান। জিডি ও মামলার ক্ষেত্রে অভিযোগকারী ও তদন্তকারী অফিসারের মোবাইল নম্বর থাকে। ডিআইজি অফিসে একটি সেল আছে। সার্ভারে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তারা বাদীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না, জানতে চান। তদন্তকারী কর্মকর্তা অর্থ চেয়েছেন কি না, কিংবা ভালো ব্যবহার করছেন কি না, সেটাও মনিটরিং করা হয়।

এদিকে সাধারণ মানুষকে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও পাসপোর্টের আবেদনের তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এখন অনলাইনে হয়। সার্ভারে তথ্য যাওয়ার পর ডিআইজি অফিস একইভাবে মনিটরিং করে। ডিআইজি অফিস থেকে ফোন করে আবেদনকারীর কাছে জানতে চাওয়া হয়, টাকা লেগেছে কি না। তবে পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি শাখার স্বাক্ষর লাগে। পাসপোর্টের আবেদনের তদন্তে অনেক সময় লাগত আগে। কিন্তু এখন সব তথ্য সার্ভারে দিয়ে দেওয়ার কারণে দ্রুত হচ্ছে। মনিটরিংয়ে থানার কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টাকা নেওয়া, হয়রানি করা ও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। গত জুলাইয়ে দায়িত্বে অবহেলার কারণে ১৮ জন এসআইকে বিভিন্নভাবে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে দায়িত্বে অবহেলার ঘটনা আর ঘটছে না।

ধামরাই থানায় গত ৪ আগস্ট একটি জিডি করেন দেলোয়ারা বেগম। দেলোয়ারা বেগম ইত্তেফাককে বলেন, ‘জিডি করার পর ঢাকা রেঞ্জ আমার কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছে। কোনো টাকাপয়সা লাগেনি। কাজ হয়েছে।’ নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার থানায় গত ৪ আগস্ট জিডি করেছিলেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, কাজ ঠিকমতো হয়েছে। কোনো টাকা লাগেনি। রাজবাড়ী সদর থানায় গত ৪ আগস্ট জিডি করেন শহীদুল ইসলাম। শহীদুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজ ব্যক্তিকে পাওয়া গেছে। টাকা লাগেনি। নরসিংদীর শিবপুর মডেল থানায় জিডি করেন কামাল হোসেন। হুমকির ঘটনার ঐ জিডি নম্বর ৩৬২। কামাল হোসেন বলেন, কাজ হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা সহযোগিতা করেছেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানায় গত ৪ আগস্ট জিডি করেন বুলবুল মিয়া। বুলবুল মিয়া ইত্তেফাককে বলেন, টাকা লাগেনি, কাজ হয়েছে।

এ ব্যাপারে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এ ধরনের কাজ করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সততা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিতে হবে। তাহলে দীর্ঘদিনের হয়রানি বন্ধ হবে। আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এখানে একটা টিম করে দিয়েছি। শক্ত হাতে মনিটরিং করছি। যারা টাকা নিয়েছে কিংবা খারাপ ব্যবহার করেছে, তাদের শাস্তির আওতায় এনেছি। রেঞ্জের ৯৬ থানায় মামলা, জিডি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও পাসপোর্টের আবেদনের তদন্ত প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে হয়রানি শূন্যের কোটায় এনেছি।’

ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আসাদুজ্জামান বলেন, ডিআইজি অফিসের টিমের প্রতিদিনের কাজ হলো ৯৬টি থানার মামলা, জিডি, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও পাসপোর্টের আবেদনের তদন্ত প্রতিদিনের বিষয়টি মনিটরিং করা। ঢাকা রেঞ্জের এই টিম সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছে কি না, সেটাও তিনি নিজে মনিটরিং করেন। ডিআইজির সততা ও নিষ্ঠার কারণে আমূল পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। অপর একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিআইজি, পুলিশ সুপার ও সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপাররা যদি সত্ হন, তাহলে মাঠ পর্যায়ের পুলিশের দুর্নীতি, অনিয়ম ও হয়রানি থাকবে না।

ইত্তেফাক/এএম