বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তবুও বঞ্চিত ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৫:২৭

আসছে অক্টোবর মাসের মধ্যে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ বিতরণ সম্পন্ন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ব্যাংকগুলোকে। এরই মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলোর বেশিরভাগই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সিংহভাগ ঋণ বিতরণ করেছে। অথচ এখনো উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রণোদনার অর্থ তারা পাচ্ছেন না। তাহলে কারা পাচ্ছেন এই অর্থ। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা মহিউদ্দিনের কাছে জানতে চাওয়া হয় আপনি প্রণোদনার অর্থ পেয়েছেন কি? টেলিফোনে ইত্তেফাককে তিনি জানিয়েছেন, মাসের পর মাস তিনি ব্যাংকের দুয়ারে ঘুরেও কোনো ঋণ পাননি। বেসরকারি খাতের এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের গ্রাহক তিনি। একইভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি অনেক উদ্যোক্তাই বলছেন, তারা প্রণোদনার অর্থ পাননি। তবে কেউ না পেলেও অক্টোবরের মধ্যেই প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রয়েছে। সেই আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

এই তাগিদের পর সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করছে। টেলিফোনে বলছে দ্রুত আবেদন জমা দিন। ব্যবসায়ী আবদুল মান্নান চৌধুরী প্যাকেজ ঘোষণার শুরুতেই ব্যাংকে আবেদন করেছিলেন। ব্যাংক সে আবেদনে সাড়া দেয়নি। হঠাত্ করেই ফোন করে নতুন তারিখ দিয়ে ফের আবেদনপত্র করার তাগিদ পেলেন তিনি। বললেন, সন্দেহ তবু রয়েই যায়। দেখা গেল আবেদন নেওয়ার পর নানা অজুহাতে ঋণ সহায়তা মঞ্জুর নাও করতে পারে ব্যাংক। যাচাইবাছাইয়ের জন্য এ ধরনের আবেদনের কপি বিকল্প কোনো দপ্তরেও সংযুক্তি দেখাতে পারলে ভালো হত।

এ দিকে সরকার ঘোষিত ১৯টি প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে আটটি প্যাকেজের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি জড়িত। এই আটটি প্যাকেজের আওতায় ৮৫ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বিতরণের কথা। ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৩৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ প্যাকেজের মধ্যে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। শতাংশের হিসাবে বিতরণের হার প্রায় ৭৮ শতাংশ। তবে কুটির, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি বা সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের ভাগ্যে জুটছে না প্রণোদনার অর্থ। এর কারণ হিসাবে ব্যাংকাররা বলেছেন, তথ্য ভান্ডার নেই। কেউ বলেছেন, করোনার কারণে অনেক ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে পারেননি।

বিষয়টি অর্থমন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সভায়ও আলোচনা হয়। তাতে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আতাউর রহমান প্রধান বলেন, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের তথ্য ভান্ডার না থাকার কারণে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

ঐ সভায় সিএমএসএমই খাতে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম।

আরও পড়ুন: আঙুলের ছাপে মিলছে ওএমএসের চাল

ব্যাংকভিত্তিক তথ্যে দেখা যায়, প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় সোনালী ব্যাংক ১ হাজার ২৬৬ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ৭৭.৬৩ ভাগ), জনতা ব্যাংক ৪৫৮ কোটি টাকা (৯৩.৪৭ ভাগ), অগ্রণী ব্যাংক ৬৮২ কোটি টাকা (৬৬.৬৬ ভাগ), রূপালী ব্যাংক ৩০৩ কোটি টাকা (৩৭.১৩ ভাগ) ও বেসিক ব্যাংক ৩৪ কোটি টাকা (লক্ষ্যমাত্রার ৩২ ভাগ) বিতরণ করেছে।

রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, সিএমএসএমই গ্রাহকগণ করোনা পরস্থিতিতে ব্যাংকে আসেনি এবং ব্যাংক থেকেও গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে সিএমএসএমই খাতে ঋণ বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি জানান, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত রূপালী ব্যাংক থেকে রপ্তানিমুখী শিল্পের শ্রমিকদের বেতন দেওয়া হয়েছে ১০১ কোটি টাকা যেখানে বরাদ্দ ছিল ৫৮ কোটি টাকা। বৃহত্ শিল্পে বরাদ্দকৃত ৭৭৮ কোটি টাকা থেকে ৪৪৪ কোটি টাকা অর্থাত্ ৫৬ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে।

ইত্তেফাক/এএএম