শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শিক্ষামন্ত্রীর মতবিনিময় আজ

করোনাকালে শিক্ষা : প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা

আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৭:৩৯

করোনা দুর্যোগে থমকে গেছে দেশের শিক্ষা খাত। সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ঘরবন্দি শিক্ষার্থীরা। করোনা সংক্রমণ আরো বাড়বে সরকারি দপ্তরগুলো থেকে এমনই ইঙ্গিত দেওয়ায় শিক্ষা নিয়ে অভিভাবকদের শঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। ফলে নানা প্রশ্ন ভিড় করছে অভিভাবক শিক্ষার্থীদের মনে।

 

এভাবে চলতে থাকলে শিক্ষার ভবিষ্যৎ কী? ডিসেম্বরে শিক্ষাবর্ষ শেষ হওয়ার নিয়ম থাকলেও এবার কী হবে? কীভাবে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে? এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার কী হবে? টেলিভিশেনে পর্দায়, পত্রিকায় পাতায় বা বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার চেষ্টা করছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অফিসে ফোন করেও উত্তর পাওয়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু শিক্ষা বিভাগ থেকে বিষয়ে কোনো তথ্য পাচ্ছে না তারা। পাশাপাশি গণমাধ্যম সোশ্যাল মিডিয়ার কিছু প্রতিবেদনে বিভ্রান্তও হচ্ছেন অনেকে।

 

অভিভাবকরা বলছেন, স্কুল কবে খুলবে, পরীক্ষা কবে হবে, কীভাবে নেবে, সেটার ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণা দেওয়া হয়নি। সিদ্ধান্ত জানানো হোক যাতে আমরা ছেলেমেয়েদের নিয়ম মোতাবেক তৈরি করতে পারি। না হলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। সন্তানরা টেনশনে পড়বে। এমন পরিস্থিতিতে আজ বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। ধারণা করা হচ্ছে, শিক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের মনোভাব তুলে ধরবেন।

 

করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে যদি ছুটি বাড়ানো হয় তাহলে এই শিক্ষাবর্ষ মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ানো নিয়েও আলোচনা হচ্ছিল। চলতি শিক্ষাবর্ষ বাড়ানো হলে আগে যেমন নভেম্বর-ডিসেম্বরে সমাপনী পরীক্ষা হতো, সেই পরীক্ষা হবে সামনের বছরের ফেব্রুয়ারি বা মার্চে। অন্যদিকে সামনের শিক্ষাবর্ষ ১২ মাস থেকে মাসে নামিয়ে আনার কথাও ভাবা হচ্ছে। একমাস আগেও গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশ হচ্ছিল। এখন আবার ভিন্ন খবর প্রচারিত হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ডিসেম্বরেই শিক্ষা বর্ষ শেষ করা হবে। অভিভাবকদের মত, আসলে কী হবে, এটা এখনই ক্লিয়ার করা উচিত।

 

১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। অক্টোবর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। সরকারি বিভিন্ন সূত্র উল্লেখ করে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে ছুটি আবারও বাড়ছে। আসলেই কি ছুটি বাড়বে? কত দিন বাড়বে? যদি করোনার এই অবস্থা চলতে থাকে তাহলে কী করবে শিক্ষামন্ত্রণালয়? এসব বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের প্রেসনোট চায় শিক্ষার্থী অভিভাবকরা।

 

স্থগিত হয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা এইচএসসি। এর পরই ভর্তি হতে হয় ক্যারিয়ার গড়ার শিক্ষায়। এপ্রিলে এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পরীক্ষা শুরু হওয়ার ১৫ দিন আগে পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। একই বই রিভিশন দিতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। অভিভাবকরা বলছেন, পরীক্ষার টেনশনে অসুস্থ হয়ে পড়ছে তার সন্তানরা। কবে এই পরীক্ষা হবে? শিক্ষা বিভাগের সূত্র উল্লেখ করে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, ‘একাধিক বিকল্প ঠিক করা হয়েছে অভিভাবক শিক্ষার্থীরা এই বিকল্পগুলোও জানতে চান। কবে, কীভাবে, কোন পদ্ধতি হবে এই পরীক্ষা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য শুনতে চান শিক্ষা বিভাগের কাছ থেকে।

 

প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষাএসএসসি বছর স্কুল বন্ধ থাকায় এই পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনা মোটেই হয়নি। ফেব্রুয়ারি যতই এগিয়ে আসছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের টেনশন ততই বাড়ছে। সরকার ইতিমধ্যে ৫ম শ্রেণির শিক্ষা সমাপনী অষ্টম শ্রেণির জেএসসি এবং সমমানের পরীক্ষাগুলো বাতিল করেছে। পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই মূল্যায়ন কীভাবে হবে? বাংলাদেশ পরীক্ষা উন্নয়ন ইউনিট (বেডু) জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) থেকে গাইডলাইন তৈরি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এই গাইড লাইন তৈরিতে এত বিলম্ব কেন ? শিক্ষামন্ত্রণালয় বিষয়ে নিয়মিত ব্রিফ করছে না কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাচ্ছে না।

 

করোনায় অনলাইন ক্লাস চালু হলেও গ্রামে এই ধরণের ক্লাস হচ্ছে না। বিভাগীয় শহরের সব স্কুলও এই অনলাইন শিক্ষায় যেতে পারেনি। টেলিভিশনের যে পাঠদান হচ্ছে তার সুফল পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা। আবার অনলাইন ক্লাস পাওয়া না পাওয়াদের মধ্যে একধরণের বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা আরো পিছিয়ে পড়ছে। এই সমতা কীভাবে করা হবে?

 

করোনায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। অনলাইন ক্লাসও নেই। শিক্ষার্থীদের স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট দেওয়ার কথা থাকলেও সব মোবাইল অপারেটরদের এই সেবায় আনা যায়নি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অপেক্ষা করছে বড় আকারের সেশনজট। এই জট মোকাবিলায় কী পরিকল্পনা নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো? করোনায় স্থগিত হয়েছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শতাধিক পরীক্ষা। এই দীর্ঘ পরীক্ষা জট কমাতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কী উদ্যোগ নেবে?

 

স্কুল বন্ধ থাকলে পুরো টিউশন ফি পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের ওপর চাপ দেওয়া হচ্ছে। অথচ করোনাকালে অনেক অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন। কারো বেতন কমেছে। কারো ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। আর্থিক টানাপড়েনের মধ্যে তারা পুরো টিউশন ফি কীভাবে পরিশোধ করবে? টিউশন ফি না দিলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণের সুযোগ দেওয়া হবে না স্কুলগুলোর পক্ষ থেকে এমন হুমকি যাচ্ছে অভিভাবকদের কাছে। মন্ত্রণালয় ক্ষেত্রে নীরব কেন ?

 

অভিভাবক ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, শীতের সময়ে অক্টোবর-নভেম্বর মাসে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আসছে। বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সর্বস্তরে আগাম প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। অভিভাবকরা স্কুল-কলেজ খোলা এইচএসসিসহ সব পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাই কোনোভাবেই শীতের সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা উচিত হবে না বলে তিনি মনে করেন।

 

 

ইত্তেফাক/এসি