বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইন্টারপোলে রেড নোটিশ দিয়েও ৬১ অপরাধীর খোঁজ মেলেনি

আপডেট : ০১ অক্টোবর ২০২০, ০৯:২৭

ইন্টারপোলের মাধ্যমে কয়েক ধাপে চিঠি চালাচালি করে বিদেশে আত্মগোপন করা সন্ত্রাসীদের আটকের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। এটা নিশ্চিত হতে হতেই আটককৃত অপরাধী ওই দেশের আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে অধরা থেকে যায়। সর্বশেষ গত বছরের ৩ অক্টোবর শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদ মন্টি ওরফে জিসান দুবাইয়ে আটক হওয়ার পরও তাকে দেশে ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। এক সপ্তাহের মাথায় জিসান মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পাওয়ার পর লন্ডনে চলে যায়। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থার (ইন্টারপোল) রেড নোটিশ বা লাল তালিকাভুক্ত ৭৩ জন অপরাধীর সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর সহকারী মহাপরিদর্শক (এনসিবি) মহিউল আলম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, পুলিশ বা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কোনো ইউনিট যদি মনে করে তার আসামি বিদেশে পালিয়ে আছে এবং ফিরিয়ে আনা জরুরি, তখন তার বিষয়ে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়া হয়। সে ক্ষেত্রে ইন্টারপোলের কিছু নিয়ম আছে, সেগুলো মেনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হয়। শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের বিষয়ে দুবাই ইন্টারপোলের সঙ্গে চিঠি চালাচালি করা হয়। জিসানের বিষয়ে এখনো চিঠি চালাচালি চলছে। ইন্টারপোলের এই রেড নোটিশে অপরাধীদের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর তথ্য হালনাগাদ করা হয়। তবে ঐসব অপরাধীদের অবস্থান ও গ্রেফতারের বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। অবস্থান নিশ্চিত জানা গেলে সরাসরি সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। এই পরিস্থিতিতে বিদেশে পালিয়ে গিয়ে আত্মগোপন করা এসব সন্ত্রাসী ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঝুলছে বাংলাদেশের পলাতক ৭৩ শীর্ষ অপরাধীদের নাম ও ছবি। এ তালিকায় রয়েছে—যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীসহ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্তরা। মাঝে মধ্যে রেড নোটিশ বা লাল তালিকাভুক্ত ৭৩ জন অপরাধীর মধ্যে দু-এক জন ভারত, দুবাই, নেপালে আটক হওয়ার তথ্য পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবি শাখা পায়। ভারতে মোল্লা মাসুদ, শাহাদত, তানভীরুল ইসলাম জয়, নেপালে সুব্রত বাইন, দুবাইয়ে জিসান, আতাউর ধরা পড়লেও ওই দেশের আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে তারা এখন মুক্ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশে আত্মগোপন করা সন্ত্রাসীরা একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে ফেরারি থাকছে। বছর দশেক আগে নেপালে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন আটক হওয়ার পর তার কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া যায়। ওই পাসপোর্টের মূলে সুব্রত বাইনকে নেপালের কাঁকরভিটা সীমান্ত দিয়ে ভারতের কাছে পুশ ব্যাক করা হয়। বছর পাঁচেক আগে শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত কলকাতা পুলিশের কাছে আটক হলেও পরবর্তীকালে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। শাহাদত ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাই হয়ে ইটালি চলে যায়। গত বছরের ৩ অক্টোবর দুবাই পুলিশের হাতে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান গ্রেফতার হয়। জিসান ভারতীয় নাগরিক হিসাবে দুবাইয়ে আত্মগোপন করেছিল। পরবর্তীকালে জিসান জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর ভারতীয় পাসপোর্ট ব্যবহার করে লন্ডন চলে যায়। ফেনীর তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী আতাউর রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোল রেড নোটিশ জারি করে। আতাউর বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছে।

ফ্রান্সের লিয়নে অবস্থিত ইন্টারপোল সদর দপ্তর থেকে পরিচালিত সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ‘রেড নোটিশ অব ওয়ান্টেড পারসন্স’ তালিকায় বিভিন্ন দেশের সর্বমোট ৭ হাজার ৩১৫ জন অপরাধীর ছবি, নাম ও জাতীয়তা তথা দেশের নাম উল্লেখ আছে। এই তালিকায় বাংলাদেশের ৭৩ জন অপরাধীর নাম রয়েছে। ৭৩ জনের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে ৬১ জনের তালিকা। বাকি ১২ জন বাংলাদেশি অপরাধীর নাম দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। অর্থাত্ যারা সংশ্লিষ্ট ঐসব দেশে গিয়ে বড় কোনো অপরাধ ঘটিয়েছেন তাদের বিষয়ে সেসব দেশ থেকে ইন্টারপোলে ওই ১২ জনের তালিকা দেওয়া হয়েছে।

ইন্টারপোলের লাল তালিকাভুক্ত বাংলাদেশি ৭৩ অপরাধী (১২ জনসহ) হলো— মো. শহিদ উদ্দিন খান, খোরশেদ আলম, ওয়াসিম, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, গিয়াস উদ্দিন, মিজান মিয়া, অশোক কুমার দাশ, চন্দন কুমার রায়, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত রাতুল আহমেদ বাবু, একই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, মো. লালু সিরাজ মোস্তফা, ‘রাজাকার’ জাহিদ হোসেন খোকন, হোসেন ওরফে সৈয়দ হোসেন, আজিজুর রহমান, সৈয়দ মো. হাসান আলী, অজয় বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম, আব্দুল জব্বার, হানিফ, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ সবুজ ফকির, শফিক-উল, মোহাম্মদ মনির ভূঁইয়া, আমান উল্লাহ শফিক, যুদ্ধাপরাধী আবুল কালাম আজাদ, সাজ্জাদ হোসেন খান, জাহিদুল ইসলাম, রফিকুল ইসলাম, মকবুল হোসেন, মারা গেছে বলে জনশ্রুতি থাকা ‘শীর্ষ সন্ত্রাসী’ কালা জাহাঙ্গীর ওরফে ফেরদৌস, মো. নাঈম খান ইকরাম, মো. ইউসুফ, আব্দুল আলিম শরিফ, নুরুল দীপু, আহমেদ মজনু, মোহাম্মদ ফজলুল আমিন জাভেদ, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আরেক খুনি আব্দুর রশিদ খন্দকার, খুনি শরিফুল হক ডালিম, খুনি এএম রাশেদ চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন খান, আহমেদ শরিফুল হোসেন, নাজমুল আনসার, রউফ উদ্দিন, মোহাম্মদ আতাউর রহমান চৌধুরী, সালাহউদ্দিন মিন্টু, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সাজাপ্রাপ্ত মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দিন, গোলাম ফারুক অভি, আমিনুর রহমান, হারুন শেখ, মিন্টু, চাঁন মিয়া, শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহাদত হোসেন, খোরশেদ আলম, প্রশান্ত সরদার, মোনতাজ বসাক, সুলতান সাজিদ, নাসিরউদ্দিন রতন, আতাউর রহমান, তৌফিক আলম, শামীম আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, জাফর আহমেদ, আমিনুর রসুল, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ, শীর্ষ সন্ত্রাসী প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, নবী হোসেন, তারভীর ইসলাম জয়, আব্দুল জব্বার, জিসান আহমেদ, কামরুল আলম মুন্না ও কামরুজ্জামান।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি