শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাংলাদেশের করোনা ভ্যাকসিন

হু’র তালিকায় গ্লোব বায়োটেকের ‘ব্যানকোভিড’

আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০২০, ০১:২৩

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক লিমিটেডের আবিষ্কৃত তিনটি ভ্যাকসিনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্লোবের ভ্যাকসিনের ব্র্যান্ড নাম ‘ব্যানকোভিড’। ভ্যাকসিন তিনটি হলো, D614G variant mFNA Vaccine, DNA Plasmid Vaccine, Adonocirus Tzpo-5 Vcctor Vaccine. শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাদের ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করেছে। এর মাধ্যমে করোনার ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তুতিতে সফলতার ক্ষেত্রে ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হলো।

শুধু তাই নয়, তালিকায় অনেক ওপরে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০ নম্বরে বাংলাদেশের অবস্থান। অক্সফোর্ডের অবস্থান ২২ নম্বরে। আমেরিকার মডার্নেরও ওপরে রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড প্রাণীর ওপর চালানো পূর্ণাঙ্গ ট্রায়াল জমা দেয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈজ্ঞানিক কমিটি তা যাচাইবাছাই করে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে তা স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, ‘করোনার তিন ধরনের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য তালিকাভুক্ত হওয়াটা আমাদের জন্য বড় সুখবর, দেশের জন্য গর্বের বিষয়।’ সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, এটা বিরাট সফলতা। দেশের জন্য খুবই খুশির খবর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য সুখবর। কিন্তু বিষয়টি এখনো আমাদের অবহিত করা হয়নি।’

গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপ অব কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্লোব বায়োটেকের ‘ব্যানকোভিড’কে ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকই বিশ্বের একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের সর্বোচ্চ তিনটি ভ্যাকসিনের নাম বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেটের তালিকায় রয়েছে। গ্লোব বায়োটেক কর্তৃক সফলভাবে প্রাণীর ওপর চালানো ট্রায়ালের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও হার্ভার্ডের জার্নালে প্রকাশের জন্য পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তুতির ক্ষেত্রে এটা অনেক সফলতার স্বীকৃতি। এটা শুধু আমাদের একার নয়, বাংলাদেশের জন্যও সুখবর। সামনের কাজ সফলভাবে করার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে জানিয়েছি। আজ রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করা হবে।’

এর আগে গত ৫ অক্টোবর গ্লোব জানায়, গ্লোব সফলভাবে প্রাণিদেহে তাদের ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে, এখন হিউম্যান ট্রায়ালে যওয়ার জন্য প্রস্তুত। সেদিন প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ জানান, সব ঠিকঠাক থাকলে এবং সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে ডিসেম্বরের শেষে অথবা জানুয়ারির শুরুতে আসবে ভ্যাকসিন। তবে এজন্য তিনি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য আবেদন করেন। গত ২ জুলাই প্রতিষ্ঠানটি করোনায় তাদের ভ্যাকসিন আবিষ্কারের কথা ঘোষণা দিয়ে জানায়, গত ৮ মার্চ থেকে তারা এই টিকা আবিষ্কারের কাজ শুরু করেছে। তাদের এই ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়ালের জন্য গত ১৩ অক্টোবর আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ চুক্তি অনুযায়ী আইসিডিডিআরবি এখন প্রটোকল তৈরি করে বিএমআরসিতে (বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল) জমা দেবে। বিএমআরসির অনুমোদন পেলে তারা হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করবে।

করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে বিশ্ব জুড়ে গবেষকেরা একটি ভ্যাকসিন তৈরির লক্ষ্যে ছুটছেন। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৪০টির বেশি ভ্যাকসিনের ওপর নজর রেখেছে। ভ্যাকসিন তৈরি ও পরীক্ষা করতে সাধারণত বেশ কয়েক বছর সময় লাগে। বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তবেই ভ্যাকসিন ব্যবহারের উপযোগী হয়। তবে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে গবেষকেরা ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যেই তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

ইত্তেফাক/এএএম