মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পণ্য ছাড়ে বিলম্বের কারণ খতিয়ে দেখার নির্দেশ এনবিআরের

আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২০, ০৬:৪৮

আমদানিকৃত পণ্য ছাড়ে অহেতুক দেরি হওয়া নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা চলছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা ও শুল্ক বিভাগের মধ্যে পালটাপালটি অভিযোগ থাকলেও কাঙ্ক্ষিত সমাধান মেলেনি। বিভিন্ন পণ্যচালান খালাসে এখনো অহেতুক দেরি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ইস্যুটি নিয়ে এবার গুরুত্ব দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সম্প্রতি এনবিআরের এক সভায় পণ্য ছাড়ে বিলম্বের কারণ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর। এজন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ সংক্রান্ত অভিযোগ দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সভায় শুল্ক বিভাগ ছাড়া অন্যান্য বিভাগের কারণেও পণ্য ছাড়ে দেরি হচ্ছে কি-না, সে ইস্যুও উঠে এসেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। রাজস্ব আদায় নিয়ে মাঠ পর্যায়ের শুল্ক বিভাগের অফিসগুলো তাদের বক্তব্য ও মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোর বিদ্যমান পরিস্থিতি ঐ সভায় উঠে আসে।

সভায় অনেক আমদানিকারক আমদানিকৃত পণ্য বন্দরে দীর্ঘদিন ধরে রেখে দেওয়ার প্রসঙ্গও উঠে আসে। বিশেষত আমদানিকৃত মোটর গাড়ি বন্দরে দীর্ঘসময় ধরে রেখে দেওয়ার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এ সময় সিদ্ধান্ত হয়, রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকরা যাতে বন্দরকে ‘গোডাউন’ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে, সেজন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিলের সময়সীমা নির্ধারণ সংক্রান্ত আইনের নতুন (সংশোধিত) বিধান যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া নিলামযোগ্য পণ্য দ্রুত নিলামেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: প্রথমবার মিসরের ঘরে পাম দ’র

আমদানিকারকদের অভিযোগ, আমদানিকৃত পণ্য ছাড় করার ক্ষেত্রে অনেক সময় অহেতুক সময়ক্ষেপণ করা হয়। ক্ষেত্রবিশেষে পণ্য সময়মতো ছাড় করিয়ে নেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করতে হয়। এক জন তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইত্তেফাককে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে তার আমদানিকৃত একটি যন্ত্রাংশের চালান আটকে দেওয়া হয় এইচ এস কোড (পণ্য পরিচিতি কোড) সংক্রান্ত ইস্যুতে। এজন্য বাড়তি শুল্ক দাবি করা হয়। কিন্তু এনবিআরের বিদ্যমান আদেশে ঐ পণ্য ছাড়ে বাড়তি শুল্ক দেওয়ার কথা নয়। তিনি বলেন, এনবিআরের শুল্ক নীতি বিভাগ থেকে নেওয়া আইনি সিদ্ধান্ত মাঠ পর্যায়ে সঠিকভাবে না যাওয়া তথ্যগত বিভ্রাট তৈরি হওয়ায় এ জটিলতা দেখা দেয়। এ নিয়ে তিনি ঢাকায় এনবিআর ও চট্টগ্রামে যোগাযোগ করেন। পরবর্তীতে এনবিআর থেকে নির্দেশনার ভিত্তিতে তার আমদানিকৃত চালানে বাড়তি শুল্ক আরোপ ছাড়াই খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু এর ফলে তিনি যথা সময়ে তা ছাড় করতে না পারায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, তার ক্ষেত্রে বিষয়টি হয়তো গুরুত্ব দিয়ে সমাধান করা হয়েছে, কিন্তু সাধারণ আমদানিকারকদের তো বাড়তি অর্থ পরিশোধ করেই পণ্য খালাস করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তোলেন তিনি।

এনবিআরের শুল্ক বিভাগের এক জন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, অনেক সময় রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার জন্য মিথ্যা ঘোষণার পণ্য আমদানি করে থাকে। এসব ফাঁকি ধরার জন্য পণ্য বিশদ পরীক্ষা করার প্রয়োজন পড়ে। আবার এ নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হলে তা উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আইনি বিধান মানতে গিয়ে চাইলেও এ ধরনের পণ্য খালাস করা সম্ভব হয় না। আবার এনবিআরের অভ্যন্তরে অন্য সংস্থা কিংবা এনবিআরের বাইরের কোনো সংস্থা, বিভাগের পরীক্ষার জন্যও বিলম্ব হতে পারে। তবে অতীতের তুলনায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

ইত্তেফাক/এএএম