'অনেকেই ভেবেছিলো বড় দুর্ভিক্ষ হবে, স্বাধীনতার প্রথম বছরেই আমরা এভাবে ঘুরে দাঁড়াবো তা কেউ ভাবেনি' বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা উপ-কমিটি আয়োজিত 'স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধু' শীর্ষক ওয়েবিনারে শুক্রবার কথাগুলো বলছিলেন গবেষক, শিক্ষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. রওনক জাহান।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালে যুদ্ধ বিধ্বস্ত এই দেশে প্রাথমিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করলেও অনেকটা ইচ্ছা করেই ১৯৭৩ সালে সহায়তা বন্ধ করে দেয়া হয়। কিউবার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ককে কেন্দ্র করে কাজটি করা হয়। যদিও সে সময় মিশরের সঙ্গে কিউবার বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও তাদের ওপর কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেনি যুক্তরাষ্ট্র। তখন যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়াই খাদ্য কেনার চেষ্টা করে বাংলাদেশ, কিন্তু সেখানেও বাধা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। যার ফলে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষ হয়। কিন্তু মাত্র ১ বছরের মধ্যে ১৯৭৫ সালে মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আবারো পজিটিভ অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু।
তিনি আরো জানান, সহায়তা প্রয়োজন থাকলেও যে কোন শর্ত মেনে নিয়ে সহায়তা নেননি বঙ্গবন্ধু। বরং 'টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন' আমাদের মত করে এবং আমাদের প্রয়োজনের কথা বিবেচনায় নিয়ে সহায়তা নিয়েছেন তিনি।
অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট সৈয়দ বদরুল আহসান বলেন, বঙ্গবন্ধু সর্বদা সবকিছুর জন্য প্রস্তুত ছিলেন। এটা ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলনের দিকে তাকালেই আমরা বুঝতে পারি। সেখানে একটি রাজনৈতিক পরিকল্পনা ছিলো, সেই সঙ্গে একটি অর্থনৈতিক পরিকল্পনাও ছিলো। আর বঙ্গবন্ধু দেশে ফেরার পর আমাদের ভারত বা পাকিস্তানের থেকে ভিন্ন অবস্থা ছিলো। কেননা আমাদের যুদ্ধ করতে হয়েছে। আর যুদ্ধ করলে যা হয়, অনেক কিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো, যা বঙ্গবন্ধু এবং তার সঙ্গে থাকা তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের অন্য বেশ কয়েকজন মিলে তা আবারো নির্মাণ করেছেন। প্রায় ৪৩ লাখ বাড়ি-ঘর ধ্বংস হয়েছিলো। খাদ্য ঘাটতি ছিলো। কিন্তু তা পূরণে খুব স্বল্প সময়ে সক্ষমতা দেখিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান জানান, বিশ্ব ব্যাংক দেশ স্বাধীনের পর যখন আমাদের কাছে পাকিস্তান শাসন আমলে দেয়া ঋণ সহায়তার অর্থ ফেরত চাইতে আসে তখন তাদের কথা মেনে নেননি বঙ্গবন্ধু বরং তাদেরকে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে যুক্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হাটার পরামর্শ দিয়েছিলেন এই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতা। তার নেতৃত্ব গুণাবলী ও তার দেয়া সাহসের কারণে তৎকালীন সয় বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে এভাবে আলোচনা করে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে কার্যকর দ্বিপাক্ষিক সমঝোতায় পৌঁছাতে পেরেছিলো বাংলাদেশ।
ওয়েবিনারের আয়োজন প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই)-এর কোঅর্ডিনেটর তন্ময় আহমেদ জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিভিন্ন উপকমিটি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ওয়েবিনারে আলোচনা করেছে। আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে মাসে কমপক্ষে দুইদিন এ ধরণের ওয়েবিনার আয়োজনের।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন তরুণ লেখক ও গবেষক হাসান মোরশেদ।
ইত্তেফাক/আরএ