শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এবছর বিশ্ব ইজতেমা হবে না

আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০১৮, ০০:০০

টঙ্গীতে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত করেছে সরকার। জাতীয় নির্বাচন ও তাবলিগ জামাতের দুপক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে এবছর বিশ্ব ইজতেমা হবে না। একইসঙ্গে তাবলিগের দুই পক্ষের সব কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। তারা কোনও জোড় (জমায়েত), ওজহাতি জোড় (স্পষ্টকরণ জমায়েত) কিছুই করতে পারবেন না।

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলিগ জামাতের বিবাদমান সাদ কান্ধলভি ও দেওবন্দপন্থী দুপক্ষকে নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তাবলিগ জামাতের বিবদমান দুপক্ষই জানুয়ারিতে পৃথক তারিখে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার ঘোষণা দিয়েছিল। ভারতের তাবলিগের মুরুব্বি মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিরোধ নিরসনে তাবলিগ ও সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত ৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারত যাবে বলে জানা গেছে।

জানাগেছে, টঙ্গী ময়দানে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর ৫ দিনের জোড় এবং আগামী ১১ থেকে ১৩ জানুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত ৩ দিনের বিশ্ব ইজতেমা করার ঘোষণা দেন দিল্লির নিজামুদ্দিন বিশ্ব মার্কাজের অনুসারী তাবলীগ সাথীরা।

হেফাজতের আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বাধীন দেওবন্দপন্থী কওমি মাদ্রাসার সাথীরা পাল্টা বিশ্ব ইজতেমার তারিখ ঘোষণা করেন। তারা ডিসেম্বরের ৭ থেকে ১১ জোড় এবং জানুয়ারির ১৮, ১৯ ও ২০ ইজতেমার তারিখ নির্ধারণ করেন। দুই গ্রুপ হুমকি-পাল্টা হুমকি দিতে থাকে। তাবলিগ জামাতের ইতিহাসে এই প্রথম ইজতেমা ও জোড়ের তারিখ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।

ইজতেমা স্থগিত প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান বলেন, নির্বাচনের আগে সব ধরনের জমায়েত নিষিদ্ধ। একইসঙ্গে তাবলিগের জামাতের মধ্যে চরম বিরোধ রয়েছে। এসব বিবেচনায় তাবলিগের বিশ্ব ইজতেমা স্থগিত করা হয়েছে। একটি প্রতিনিধি দল ভারত যাবে। প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আলাপ-আলোচনা করে সমাধান করার চেষ্টা করবেন।নির্বাচন শেষ হলে দুপক্ষ বসেই নতুন তারিখ নির্ধারণ করতে পারে।

বৈঠকে অংশ নেয়া আলেম প্রতিনিধি শোলাকিয়া ঈদগাহর খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাবলিগ জামায়াতের দুই পক্ষকে নিয়ে বসা বৈঠকের সভাপতিত্ব করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। এছাড়া তাবলিগ জামাতের দুপক্ষের মুরব্বি শুরা সদস্য মাওলানা যুবায়ের আহমদ ও সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। আলেমদের মধ্যে গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মো. জয়নাল আবেদিন, পুলিশের আইজি মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, ধর্মসচিব, সেতু বিভাগের সচিব, আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শেখ আবদুল্লাহ।

প্রসঙ্গত, তাবলিগ জামায়াতের বিশ্ব আমির দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভি ও নিজামুদ্দীন মারকাজের বিরোধিতা করছেন পাকিস্থানের তাবলিগি নেতৃবৃন্দ। তাই তাবলিগের মূল সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে নিজামুদ্দীন মারকাজের সমান ক্ষমতা দাবি করে আলমি শুরা গঠন করে রাইভেন্ড মার্কাজ। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে অংশদারিত্বের বিবাদে দিল্লি-লাহোর জড়িয়ে পড়লে বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে তাবলিগ জামায়াতের প্রধানকেন্দ্র কাকরাইল মসজিদেও ছড়িয়ে পড়ে এ বিভক্তি। এই মসজিদ দখল নিয়ে একাধিকবার সহিংসতা ঘটেছে।

১১ জন শুরা সদস্যের মাঝে ছয়জন নিজামুদ্দীনের পক্ষে থাকলেও বাকি পাঁচজন আলমি শুরা তথা কওমি মাদ্রাসার পক্ষে অবস্থান নেন।

এ অংশের বিরোধিতায় বিগত বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগের আমির মাওলানা সাদ ও নিজামুদ্দীনের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ এসেও ইজতেমায় অংশ নিতে পারেন নি।

ইত্তেফাক/আরকেজি