শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অক্সফোর্ডের ৫০ লাখ ডোজ এলে শুরু হবে টিকা প্রয়োগের কাজ

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২১, ০৭:৩৪

বাংলাদেশের জনগণের জন্য উপহার হিসেবে দেওয়া করোনা ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজ এসে পৌঁছেছে। করোনা মহামারি মোকাবিলায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এই টিকা প্রদান করেছে ভারত সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছে এই টিকা হস্তান্তর করেন ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। এসময় স্বাস্থ্যসচিব (সেবা) আব্দুল মান্নান ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইট উপহারের এই টিকার চালান নিয়ে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়।

বাংলাদেশ সরকারিভাবেও ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনছে, যার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই টিকা আসার পর টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে। টিকার কার্যক্রম শুরু হবে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতাল থেকে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনার টিকাদান কার্যক্রম ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন। এজন্য ডেটও চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে গঠিত কমিটি সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং করবে। এছাড়া টিকা প্রয়োগের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের কমিটিও প্রস্তুত।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশেও অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সরবরাহ করা হয়েছে। ফল ভালো। অন্যান্য টিকার চেয়ে এই টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কম।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের কাছে ভ্যাকসিন নতুন কিছু নয়, এখানকার মানুষ ভ্যাকসিনকে ভয়ও পায় না। কারণ আমাদের দেশের মানুষ ভ্যাকসিন নিতে অভ্যস্ত।’

আরও পড়ুন: ৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হতে পারে টিকাদান কর্মসূচি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৩ কোটি ডোজ টিকার প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ টিকা ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে আসছে। এখনো পর্যন্ত এই ডেট ঠিক আছে। এই ৫০ লাখ ডোজ টিকা এলে টিকা প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হতে পারে।’ অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘টিকাদান ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৬৪ জেলার সিভিল সার্জন ও পরিবার পরিকল্পনার উপ-পরিচালকদের গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত টিকার ব্যবস্থাপনার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৪ জানুয়ারি বিভাগীয় পরিচালকদের (স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা) টিকার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে অবহিত করা হবে। জেলা প্রশাসক ও পুলিশদেরও অবহিত করা হবে।’ কারণ, তাদের সার্বিক সহযোগিতা লাগবে। তিনি বলেন, ‌‘যেকোনো টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। টিকা দেওয়ার পর জ্বর, ব্যথা ও সর্দি হতে পারে।’

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে করোনা ভাইরাসের ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার দেওয়াটা দুই দেশের বিদ্যমান ‘শক্তিশালী’ সম্পর্কের পরিচয় দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন। করোনা মোকাবিলায় ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে প্রদান করায় ভারত সরকার এবং ভারতের জনগণকে ধন্যবাদ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। ভ্যাকসিন হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি ভ্যাকসিন হস্তান্তরের দিনটিকে ‘ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা সৌভাগ্যবান যে, ভারত আমাদের উপহার স্বরূপ ভ্যাকসিন দিয়েছে। আমাদের দুই দেশের মধ্যে যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তা এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো। এই উপহার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শক্তিশালী সম্পর্কের পরিচয় বহন করে।’ তিনি বলেন, ‘চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে পর্যায়ক্রমে আরো ৩ কোটি টিকা আসবে। এসময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সকলকে করোনা বিষয়ক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।’

আরও পড়ুন: সারাদেশে টিকাদানের দায়িত্বে থাকছেন যারা

হস্তান্তর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘ভারত যেমন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল, এই মহামারিতে তারা ২০ লাখ ডোজ টিকা দিয়ে তেমনি সহযোগিতা করেছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক আরো অনেক বেশি সুদৃঢ় হলো। বিপদের সময় যে বন্ধু এগিয়ে আসে, সেই প্রকৃত বন্ধু তা আবারও প্রমাণিত হলো।’

বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলনের আলোচনার ধারাবাহিকতায় ১৬ জানুয়ারি ভারতে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরুর এক সপ্তাহের মধ্যে দেশটি বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছে।’

ইত্তেফাক/কেকে