বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তেলে ভেজাল রোধে নিজস্ব ফিলিং স্টেশন করবে বিপিসি

আপডেট : ০৯ জুন ২০২১, ০৭:২৭

দেশে জ্বালানি তেলের নতুন ফিলিং স্টেশন স্থাপন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটির তেল বিপণনকারী তিনটি কোম্পানি- পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল এ ফিলিং স্টেশনগুলো স্থাপন করবে।

একই সঙ্গে ‘মডেল ফিলিং স্টেশনের’ মানদণ্ড রক্ষা করে নতুন অয়েল পাম্প স্টেশন নির্মাণ করতে পারবেন বেসরকারি উদ্যোক্তরাও। তেলে ভেজাল রোধ এবং এর পরিমাণ ও মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এ ফিলিং স্টেশনগুলো নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এবং বিপিসির দুই পৃথক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দেশে প্রতি বছরই নতুন গাড়ি এবং সড়ক বাড়ছে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নতুন ফিলিং স্টেশন হচ্ছে না। অনেক স্থানে বিপজ্জনকভাবে অবৈধ তেলের পাম্প গড়ে উঠেছে। ভেজাল তেলের বেচাকেনাও কমছে না। এমন অবস্থায় নির্দিষ্ট মানদণ্ড রক্ষা করে বিভিন্ন জেলায় মডেল ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করা হবে।

মুজিববর্ষের কর্মসূচির আওতায় সরকারি তেল বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর চারটি ফিলিং স্টেশন নির্মানাধীন রয়েছে। এখন নিজস্ব অর্থায়নে আরো ফিলিং স্টেশন নির্মাণের প্রস্তাব করেছে বিপিসি। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশনা দিয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, দেশে ২ হাজার ২৬০টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩৬৮টি, ঢাকায় ৫৫৮টি, সিলেটে ১৪৪টি, ময়মনসিংহ ১২০টি, বরিশাল ৬৫টি, খুলনাতে ৩৩০টি, রাজশাহীতে ৩২৭টি, রংপুরে ৩৪৮টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে মেঘনা পেট্রোলিয়ামের ৮২৪টি, যমুনা অয়েল কোম্পানির ৭৩৫টি এবং পদ্মা অয়েল কোম্পানির ৭০১টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে। তিনটি কোম্পানি নিজস্ব অর্থায়নে ও ব্যবস্থাপনায় সব মিলিয়ে ১০টির মতো ফিলিং স্টেশন পরিচালনা করছে।

দেশে ২০১৬ সাল থেকে জ্বালানি তেলের ফিলিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন বন্ধ ছিল। তেলের পাম্প ও ফিলিং স্টেশনগুলোর মধ্যে অন্যায্য প্রতিযোগিতা, ভেজাল ও মানহীন তেল বিক্রি, পরিমাণে কম দেওয়া এবং অবৈধ পথে তেল সংগ্রহের প্রবণতার কারণে নতুন করে পাম্প স্টেশন স্থাপনে এ অচলাবস্থা। বিদ্যমান পাম্পগুলোর মালিকদের অনেকেও নতুন ফিলিং স্টেশন নির্মাণের বিপক্ষে নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করেছেন।

গত বছর বিশেষ বিবেচনায় একটি স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। অনেকগুলো স্টেশন নির্মাণের আবেদন মন্ত্রণালয় ও বিপিসিতে জমা রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে নতুন অয়েল ফিলিং স্টেশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

গত ২৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জ্বালানি বিভাগের মাসিক সমন্বয় সভায় বিপিসির তখনকার চেয়ারম্যান বলেন, পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েলের নিজস্ব অর্থায়নে ফিলিং স্টেশন স্থাপন করা জরুরি। বিভিন্ন জায়গায় বিপণন কোম্পানিগুলোর নিজস্ব অর্থায়নে ফিলিং স্টেশন থাকলে জ্বালানি তেলে ভেজাল রোধ করা সম্ভব হবে। বিপণন কোম্পানিগুলো সেই আর্থিক সক্ষমতা রয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. আজিজুল ইসলাম এতে সহমত বলে জানান।

এ প্রসঙ্গে গত সোমবার সন্ধ্যায় বিপিসির পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ মেহদী হাসান বলেন, মডেল ফিলিং স্টেশনের মানদণ্ড রক্ষা করে স্টেশন স্থাপন করার জন্য প্রয়োজনীয় ও সম্ভাব্য জমি দেখছে কোম্পানিগুলো। বেসরকারি উদ্যোক্তারাও এ ধরনের ফিলিং স্টেশন নির্মাণ করতে চাইলে তাদের অনুমোদন দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, মডেল ফিলিং স্টেশনগুলোতে তেল গ্রহণের সুবিধার বাইরেও আধুনিক রেস্টুরেন্ট, পরিচ্ছন্ন ও মানসম্পন্ন শৌচাগার এবং চালকদের জন্য বিশ্রামাগার থাকবে। বর্তমানে সিংহভাগ স্টেশনের শৌচাগার অপরিচ্ছন্ন। রেস্টুরেন্ট ও বিশ্রামাগার নেই।

ইত্তেফাক/এএএম