মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক ধাক্কা, বাড়ছে শিশু শ্রমিক

আপডেট : ১২ জুন ২০২১, ০৬:২৫

অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা আর দারিদ্র্যের কারণে ক্রমেই বাড়ছে শিশুশ্রমিক। করোনা মহামারিতে আরো প্রকট হচ্ছে শিশুশ্রম সমস্যা। জীবনের শুরুতেই এসব কোমলমোতি শিশুরা কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছে। মূলত করোনার কারণে অভিভাবকের কাজ এবং আয়ের ওপর প্রভাব পড়ায় নতুন করে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। এমন বাস্তবতার মধ্যে আজ ১২ জুন, সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস’-২০২১।

২২ ঝুঁকিপূর্ণ খাতে রয়েছে শিশুশ্রম

২০০২ সাল থেকে বিশ্বে শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। তবে গত বছরের মতো এবছরও করোনা মহামারির কারণে দিবসটি পালিত হবে ভার্চুয়ালি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে করোনা মহামারিতে অর্থনৈতিক ও শ্রম বাজারে ধাক্কা, মানুষের জীবিকার ওপর বিরাট প্রভাব ফেলছে। দুর্ভাগ্যবশত এই সংকট শিশুদের শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। দারিদ্রের কারণে শিশুদের নামতে হচ্ছে কাজে। করোনা মহামারিতে স্কুল বন্ধ থাকায় নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো তাদের সন্তাদের কাজে পাঠাতে বাধ্য হচ্ছে। কারণ অনেক অভিভাবকেরই মোবাইল ডাটা কিনে সন্তানকে অনলাইনে ক্লাস করানোর সক্ষমতা নেই। করোনাকালের একাধিক গবেষণা প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে এসব তথ্য।

করোনার প্রভাবে শিশুশ্রম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা

শ্যামলী রিং রোডের একটি গাড়ির গ্যারেজে কাজ করে ১০/১২ বছরের সুজন মিয়া। ৫ মাস ধরে সে ঐ গ্যারেজে কাজ করছে। সুজন বলে, ‘আমি মাদ্রাসায় পড়তাম, আব্বায় কাজ শিখানোর লাইগ্যা এইহ্যানে দিয়া গেছে’। গ্যারেজের অন্য এক কর্মচারী বলেন, ‘সুজনের বয়স হয় নাই। এরে দোকানে রাখাই লস, কিন্তু দেশগ্র্যামে অভাব বাড়ছে, মালিক হ্যারে রাখছে কেবল মানবিকতার খাতিরে’। একটু পাশেই চায়ের দোকানে কাজ করে ১০ বছরের মাসুম। সে বলে, ‘আমি কাস্টমাররে চা-পানি দেই, ওস্তাদে চা বানায়। আর কোনো কাম নাই। কাজ শিক্ষা, একটা চায়ের দোকান দিমু।’ মাসুমও গ্রামের স্কুলে পড়ত বলে সে জানায়।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও ইউনিসেফের নতুন এক প্রতিবেদনে, বিশ্বব্যাপী শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা বেড়ে ১৬ কোটিতে পৌঁছেছে। যা গত চার বছরে বেড়েছে ৮৪ লাখ। কোভিড-১৯-এর প্রভাবের কারণে আরো কয়েক লাখ শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অতিরিক্ত ৯০ লাখ শিশু ঝুঁকির মুখে বলে সতর্ক করেছে আইএলও ও ইউনিসেফ।

স্কুল থেকে ঝরে পড়া ও শিশুশ্রম বৃদ্ধির আশঙ্কা

১২ জুন বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবসকে সামনে রেখে প্রকাশিত ‘চাইল্ড লেবার :গ্লোবাল এস্টিমেটস ২০২০, ট্রেন্ডস অ্যান্ড দ্য রোড ফরওয়ার্ড’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, শিশুশ্রম বন্ধে অগ্রগতি গত ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো থমকে গেছে, যা আগের নিম্নমুখী প্রবণতাকে উলটে দিচ্ছে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৬ সালের মধ্যবর্তী সময়ে শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা কমে ৯ কোটি ৪০ লাখে নেমে এসেছিল। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়, মহামারির মধ্যে গত মার্চ ২০২০ থেকে স্কুল বন্ধ থাকা এবং দারিদ্র্য বৃদ্ধি অনেক শিশুকে শিশুশ্রমের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা নিয়ে ইউনিসেফ উদ্বিগ্ন।

নতুন ৬ খাতকে শিশুশ্রম মুক্ত ঘোষণা 

আইএলওর মহাপরিচালক গাই রাইডার বলেন, ‘নতুন এই হিসাব একটি সতর্কসংকেত। যখন নতুন একটি প্রজন্মের শিশুদের ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে, তখন আমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না। এই অবস্থাকে বদলে দিতে এবং দারিদ্র্য ও শিশুশ্রমের চক্র ভেঙে দিতে নতুন প্রতিশ্রুতি ও শক্তির সম্মিলন ঘটানোর এখনই সময়।’

বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুছ শহিদ মাহমুদ বলেন, করোনার কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। যে কারণে একবার যে শিশুটি স্কুল ছেড়ে পূর্ণকালীন কাজে যোগ দিচ্ছে, সেই শিশুটি আর স্কুলে ফিরবে না। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণেও শিশুশ্রম বাড়ছে।

ইত্তেফাক/কেকে