মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সন্ত্রাস যে বহুমুখী মাত্রা পেয়েছে—এ হামলা তার প্রমাণ

আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০১৯, ০১:৩২

বর্তমানে বিশ্বায়নের যুগে সন্ত্রাসবাদ যে বহুমুখী রূপ পেয়েছে রবিবারের শ্রীলঙ্কার ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা তার প্রমাণ। সব ধরনের বর্ণ, ধর্ম, জাতি, গোষ্ঠীর মধ্যে সন্ত্রাসবাদ ঢুকে পড়েছে। এটি কোনো দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, অঞ্চল পেরিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

শ্রীলঙ্কার এই হামলার কয়েকটি দিক সবার খতিয়ে দেখা দরকার। তিনটি শহরে সাত-আটটি স্থানে একযোগে হামলার পেছনে বড় ধরনের প্রস্তুতি ছিল। এখানে গোয়েন্দা ব্যর্থতা ছিল বলাই যায়। ১০ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার পুলিশ প্রধান যে বার্তা প্রচার করেন তাতে চার্চ, দূতাবাস ও হোটেলে হামলা হতে পারে বলে সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল। পুলিশ প্রধানের এই বার্তা ছিল একটি বিদেশি রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে। প্রশ্ন হলো অন্য দেশের গোয়েন্দা সংস্থা কিভাবে হামলার কথা জানলো। কেন দেশটি নিজ দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেনি। হামলায় ঐ দেশটির নাগরিকও নিহত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ধারাবাহিক হামলা হয়েছে ইস্টার সানডের প্রার্থনার সময় কয়েকটি চার্চে আর তিনটি অভিজাত হোটেলে। গ্রান্ড সিনামন ও কিংস বারি শ্রীলঙ্কার মালিকানা আর সাংরিলা হোটেল মালয়েশিয়ার মালিকানা। এতে স্পষ্ট যে, হামলার লক্ষ্য কেবল ধর্ম নয়, অর্থনীতিও। পর্যটননির্ভর শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে আঘাত করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের পক্ষ থেকে এটা বড় বার্তা বলে মনে করি।

তৃতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে পুলিশ প্রধানের সতর্ক বার্তা তাকে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন। দেশটির পুলিশ ও নিরাপত্তা বিভাগ প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপলা সিরিসেনার সরাসরি নিয়ন্ত্রণে। এবছরই শ্রীলঙ্কায় নির্বাচন হবে। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা গতবছর প্রধানমন্ত্রী রনিলকে সরিয়ে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজা পাকসেকে আনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু পারেননি। পুলিশের সতর্ক বার্তা প্রধানমন্ত্রী রনিলের জানা উচিত ছিল। এখন বোঝা যায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট। এ ধরনের দ্বন্দ্বে পরিকল্পিত হামলাকারীরা সুযোগ পায়। হামলার পেছনে দ্বন্দ্ব কোনো কারণ কিনা খতিয়ে দেখা দরকার।

আর এত বড় ‘পরিকল্পিত ও সফল’ আক্রমণে ব্যবহূত বিস্ফোরক দেশের ভেতরের নয়, বাইরে থেকে আনা। সেগুলো কোথায় তৈরি, কিভাবে আনা হলো, কে বহন করল তা বড় তদন্তের বিষয়।

কেবল নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা তত্পরতা দিয়ে সন্ত্রাসী ঘটনা থামানো যায় না— এটা খুবই পরিষ্কার। জনগণের সম্পৃক্ততা খুবই জরুরি। কারণ বড় হোটেলে নাস্তার সময় ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঢুকে হামলা করা সহজ ব্যাপার নয়।

শ্রীলঙ্কার হামলার জন্য কোনো সংগঠন বা গোষ্ঠী এখনো দায় স্বীকার করেনি। এটা নতুন দিক। হয়তো আমাদের এজন্য আরো সময় অপেক্ষা করতে হবে।