বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেদার বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ ৫২ পণ্য

আপডেট : ১৬ মে ২০১৯, ০১:২৫

নিম্নমানের ৫২ পণ্যের উত্পাদন, বাজার-জাতকরণ ও বিপণন বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশ দিলেও এখনো দেদারসে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে ।

গত ১২ মে হাইকোর্ট মান উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত নিম্নমানের এসব পণ্য বাজার থেকে জব্দ করে ধ্বংস করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে। আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে ১০ দিনের মধ্যে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।

এদিকে রায়ের পর চার দিন পার হলেও এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। গতকাল বুধবার রাজধানীর কাওরানবাজার, শান্তিনগরবাজার ও তুরাগ এলাকার বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট স্টোরে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, দেদারসে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। অনেক দোকানি এসব পণ্য বিক্রি নিষিদ্ধের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। আবার অনেকে জেনেও বিক্রি করছেন। এতে ভোক্তারা প্রতারিত ও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।

কাওরানবাজারের জব্বার স্টোরের মোশারফ হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনো এসব পণ্য বিক্রি করছি। তবে পণ্যগুলোর উত্পাদন প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, তারা বাজার থেকে এসব পণ্য উঠিয়ে নেবে। উঠিয়ে নিলেতো আর বিক্রি করব না।’

একই কথা জানান এই বাজারেরই ইয়াছিন জেনারেল স্টোরের এক বিক্রেতা। এই দোকানেও নিম্নমানের নিষিদ্ধ এসব পণ্য বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। এই বিক্রেতা বলেন, ‘আমরা পড়েছি সমস্যায়। ২০ টাকার পণ্য বিক্রি করতে গিয়ে হাজার হাজার টাকা জরিমানা দিতে হয়। অথচ নিম্নমানের পণ্যের সব দায় কোম্পানির’।

তুরাগ এলাকার একটি ডিপার্টমেন্ট স্টোরের স্বত্বাধিকারী বলেন, এসব পণ্য যে বিক্রি করা যাবে না সেটাতো আমরা জানি না। কোম্পানি থেকেও এ ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি।

পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে বাজার থেকে ৪০৬টি পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্য নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষায় ৫২টি পণ্য নিম্নমানের প্রমাণিত হয়। সরিষার তেল, হলুদের গুঁড়া, কারি পাউডার, লাচ্ছা সেমাই, আয়োডিনযুক্ত লবণ, ড্রিংকিং ওয়াটার, স্পেশাল ঘিসহ এসব নিম্নমানের পণ্য দেশের নামি-দামি ব্র্যান্ডের।

তবে হাইকোর্টের রায়ের পর অনেক ভোক্তা সচেতনও হয়েছেন। অনেকে বাজার করতে গিয়ে সাথে নিয়ে গেছেন বিক্রি নিষিদ্ধ ৫২ পণ্যের তালিকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ’র চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, আমরা তিন দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাজার থেকে এসব পণ্য তুলে নিতে বলেছি। এ ব্যাপারে বিভিন্ন পত্রিকাতে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে না নিলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই কাজ বিএসটিআইয়ের করার কথা। কিন্তু কোর্ট যেহেতু আমাদের নির্দেশ দিয়েছে তাই আমরা করেছি। এটা আমাদের করার কথা না।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম লস্কর গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘আগামী রবিবার আমরা নিষিদ্ধ ৫২টি পণ্যের প্রতিষ্ঠানের সাথে বসব। তাদের তিন দিনের মধ্যে এসব পণ্য বাজার থেকে তুলে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে। এছাড়া আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) এ ব্যাপারে পত্রিকাতে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হবে। ’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজারে এসব পণ্য বিক্রি হলেও আমরা এখনো ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করতে পারিনি। কারণ, গতকালই (মঙ্গলবার) আমরা হাইকোর্টের রায় হাতে পেয়েছি। আমরা নিজেরাই রায়ের কপি সংগ্রহ করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাজার থেকে এসব পণ্য তুলে না নিলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বিক্রি বন্ধের নির্দেশ যে ৫২টি পণ্য

তীর, জিবি, পুষ্টি ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের সরিষার তেল, সান ব্র্যান্ডের চিপস, আরা, আল সাফি, মিজান, দিঘী, আর আর ডিউ, মর্ণ ডিউ ব্রান্ডের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকানের ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, প্রাণ, মিষ্টিমেলা, মধুবন, মিঠাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি ব্র্যান্ডের নুডলস, টেস্টি তানি তাসকিয়া ও প্রিয়া সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশ, প্রাণ, ফ্রেস ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, এসিআই পিওর ব্র্যান্ডের ধনিয়া গুঁড়া, প্রাণ ও ড্যানিস ব্র্যান্ডের কারি পাউডার, বনলতা ব্র্যান্ডের ঘি, পিওর হাটহাজারির মরিচের গুঁড়া, এসিআই, মোল্লা সল্টের আয়োডিনযুক্ত লবণ, কিং ব্র্যান্ডের ময়দা, রূপসা ব্র্যান্ডের দই, মক্কা ব্র্যান্ডের চানাচুর, মেহেদি ব্র্যান্ডের বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশালের ঘি, নিশিতা ফুডসের সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিল ফুডের হুলুদের গুঁড়া, মধুমতি ব্র্যান্ডের আয়োডিনযুক্ত লবণ, সান ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, গ্রীনলেনের মধু, কিরণ ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিন ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, ডলফিন ব্র্যান্ডের হলুদের গুঁড়া, সূর্য ব্র্যান্ডের মরিচের গুঁড়া, জেদ্দা ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, অমৃত ব্র্যান্ডের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপার, তিনতীর, মদিনা, স্টারশীপ ও তাজ ব্র্যান্ডের আয়োডিন যুক্ত লবণ।

১১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিএসটিআই’র মামলা

মানহীন পণ্য বিক্রি ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার তৈরি এবং ওজন যন্ত্রের ভেরিফিকেশন সনদ গ্রহণ না করার অপরাধে ১১টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই)।

গতকাল বুধবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এসব মামলা দায়ের করা হয়।