শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছি

আপডেট : ২৬ মে ২০১৯, ০৪:২৮

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি, আরো এগিয়ে নেবো। দেশের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত থাকবে। দেশবাসী আমাদের ওপর আস্থা রেখে ভোট দিয়েছে। যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সারাদেশে উন্নয়নের মাধ্যমে তা রক্ষা করছি। সড়ক, নৌ, রেল ও বিমান মিলে সব দিক থেকে সারাদেশে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক সহজ করাই আমাদের লক্ষ্য। যাতে প্রত্যেক অঞ্চলের মানুষ কম সময়ে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে পারেন। তিনি বলেন, দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা যে তারা আমাদের উপর বিশ্বাস রেখেছেন, আস্থা রেখেছেন এবং আমাদের ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন।

গতকাল শনিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশবাসীর ঈদ উপহার হিসেবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত দ্বিতীয় মেঘনা সেতু এবং দ্বিতীয় গোমতী সেতুর উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে ঈদযাত্রায় স্বস্তি দিতে কোনাবাড়ি ও চন্দ্রা ফ্লাইওভার, কালিয়াকৈর, দেওহাটা, মির্জাপুর ও ঘারিন্দা আন্ডারপাস এবং কড্ডা-১, জয়দেবপুর-চন্দ্রা-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়কে বিমাইল সেতু উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পৃথক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাঁশি বাজিয়ে, সবুজ পতাকা উড়িয়ে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ নামে স্বল্প বিরতির আন্তঃনগর ট্রেনের উদ্বোধন করেন।

মেট্রোরেল চালু হলে ঢাকায় যানজট কমবে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার মেট্রোরেলের মাধ্যমে দেশে প্রথম বিদ্যুত্চালিত ট্রেনের ব্যবহার শুরু হবে। এরপর দূরপাল্লায়ও বিদ্যুত্চালিত ট্রেন চালু করা হবে। ঢাকায় যানজটে জনগণ কষ্ট পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেট্রোরেলের কারণে যে জনদুর্ভোগ তার জন্য একটু কষ্ট হবেই। কিন্তু এর সুফল পরে পাওয়া যাবে। মেট্রোরেল নির্মাণ কাজ শেষ হলে ঢাকায় যানজট কমে যাবে বলে জানান তিনি।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অদূর ভবিষ্যতে চালকদের বিশ্রামের জন্য মহাসড়কের পাশে আলাদা ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সড়কে চলাচলের বিষয়ে সকলের মাঝে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে স্কুলজীবন থেকেই ট্রাফিক আইন প্রশিক্ষণে গুরুত্বারোপ করেন। অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সুস্থ হয়ে দেশে ফেরায় তাঁকে দোয়া করার জন্য দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় তাঁর দল আওয়ামী লীগকে একটি পরিবার উল্লেখ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে শুধু রাজনীতিই নয়, আমরা একটা পরিবার। ছোট বেলা থেকে দেখেছি- আমার মা, বাবাকে এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আমরা একটা পরিবারের মতই বড় হয়েছি। যখনই কোন সমস্যা হয় সুখে, দুঃখে আমরা সবসময় সাথী হয়েই চলি। এভাবেই যেন এই সংগঠনটা এগিয়ে যেতে পারে সে বিষয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

ঈদে কাউকে কষ্ট ভোগ করতে হবে না

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি দেশ হিসেবে গড়ে তোলার। তার আদর্শকে ধারণ করে আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখছি। বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সড়ক পথের যে উন্নয়ন করেছি তাতে আগামী ঈদে কাউকে কষ্ট ভোগ করতে হবে না। এ জন্য জাপান সরকার এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে যাত্রী সাধারণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধু গাড়িচালককে দোষ দেবেন না। ট্রাফিক আইন মেনে চলবেন। গাড়িচালক ও পথচারী কেউই যদি ট্রাফিক আইন না মানে তাহলে অহরহ দুর্ঘটনা ঘটবে।’

রেল নিয়ে একগুচ্ছ পরিকল্পনা

প্রধানমন্ত্রী রেলের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বলেন, মানুষ এখন রেলে বেশি চড়তে চায়। চাহিদা মেটানোর জন্য আমাদের আরো বেশি যাত্রীবাহী কোচ দরকার। কাজেই আরো বেশি কোচ আমাদের কিনতে হবে। শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় রেলের উন্নয়নের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন। রেলের ডিজিটালাইজেশন, দক্ষিণবঙ্গে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন, ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্যুরিস্ট ট্রেন চালু করা, বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে যমুনার উপর একটি রেল সেতু নির্মাণের উদোগসহ নানা ভবিষ্যত্ পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে উল্লিখিত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি উদ্বোধন হওয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৃষ্টিশীল নেতৃত্বের সফল ফসল হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, এতে এবার ঈদযাত্রা কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দেবে। এর আগে দ্বিতীয় মেঘনা ও গোমতী সেতু নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান জানান, নতুন দুটি সেতু চালু হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশেষ করে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা কিছুটা হলেও আরামদায়ক হবে।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স কুমিল্লা, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের উপকার ভোগীদের সঙ্গেও কথা বলেন। শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত হিরোইয়াসু ইজুমি বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ক আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংক্ষিপ্ত সূচনা বক্তব্য রাখেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান। ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ ট্রেন উদ্বোধনকালে পঞ্চগড় প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।