অচিরেই প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের হাতে উন্নতমানের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র তুলে দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে প্রথমে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের বেছে নিয়েছে কমিশন। এজন্য সিঙ্গাপুর সরকারের কাছে অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। এর আগে কমিশনের একাধিক প্রতিনিধিদল সিঙ্গাপুরে গিয়ে সফলভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে। আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে প্রবাসীদের ভোটার করার উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি বড়ো পরিসরে করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা ঐ কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। প্রবাসীদের জন্য আলাদা ভোটার ফরমও প্রস্তুত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন) মো. আব্দুল বাতেন ইত্তেফাককে বলেন, প্রবাসীদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সব কার্যক্রম গুছিয়ে আনা হয়েছে। দ্রুত সিঙ্গাপুর প্রবাসীদের অনলাইনে তথ্য সংগ্রহের কার্যক্রম শুরু করা হবে। ইসির প্রতিনিধিদল গিয়ে নির্দিষ্ট রেজিস্ট্রেশন সেন্টারে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ছবিসহ আইরিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট সংগ্রহ করবে। প্রবাসীদের লেমিনেটিং নয়, অচিরেই সরাসরি স্মার্ট কার্ড তুলে দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন: আইন মানছে না বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রবাসী অধ্যুষিত রাষ্ট্রের বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোর রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনারসহ এ-সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে গত বছরের ১৯ এপ্রিল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেমিনার হয়। ঐ সেমিনারে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি এবং দশম জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিরও প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। মেমিনারে সবাই প্রবাসীদের দ্রুত ভোটার করার সুপারিশ করেন। এরপর চলতি বছরের ৩ থেকে ৯ মার্চ নির্বাচন কমিশন সচিবের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধিদলটি সিঙ্গাপুরে যায়। সিঙ্গাপুরে ভোটার নিবন্ধন বিষয়ে ইসির ইন্সপেকশন টিম ফিজিবিলিটি স্টাডি করে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীও সিঙ্গাপুরে যান। প্রবাসীদের ভোটার করার বিষয়ে ইতিবাচক সুপারিশ উপস্থাপন করেন সবাই।
সিঙ্গাপুরের পর যুক্তরাজ্যের প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার করে সেদেশেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরবরাহ করতে উচ্চপর্যায়ের টিম সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পাঠানো হচ্ছে। নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ওই টিম এ-সংক্রান্ত বৈঠক করবে। আগামী ২৪ জুলাই থেকে ৩ আগস্টের এই সফরে তারা ২৮ জুলাই থেকে ১ আগস্ট দেশটিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার, বাংলাদেশের কমিউনিটি ও যুক্তরাজ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করবে। বৈঠকের ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তার আগে মালদ্বীপেও সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০টি দেশে প্রবাসীদের ভোটার করা হবে। পর্যায়ক্রমে বাকি দেশগুলোতে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকার আওতায় আনা হবে। দুবাই, কুয়েত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়ায়ও প্রবাসীদের দ্রুত ভোটার করা হবে। প্রতিটি দেশে তিন মাসব্যাপী ইসির বিশেষজ্ঞ টিম গিয়ে ভোটার নিবন্ধন করবে।
যেভাবে ভোটার হবেন প্রবাসীরা: অনলাইনে ভোটার হওয়ার ফরম ছাড়া হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেই ফরম পূরণ করবেন ভোটারযোগ্যরা। অনলাইনের ফরমগুলো দেশের বিভিন্ন উপজেলা অফিসের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হবে। অনলাইনে পূরণকৃত ফরমের তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট প্রবাসীদের ছবি, আইরিশ ও ফিঙ্গার প্রিন্ট নেবে ইসির পাঁচ সদস্যর একটি টিম। যারা অনলাইনে ফরম পূরণ করতে ব্যর্থ হবেন, তাদের তাত্ক্ষণিক ভোটার করার জন্য ফরম দেওয়া হবে। ওই ফরমগুলো ইসির নির্ধারিত বিশেষজ্ঞ টিমের সদস্যরা প্রবাসীদের সব ডকুমেন্টস দেশে সংশ্লিষ্ট (স্থায়ী ঠিকানায়) উপজেলা নির্বাচন অফিসে অনলাইনের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেবেন। প্রবাসীদের জন্য যে ভোটার ফরম তৈরি করা হয়েছে, তাতে তিনটি ঠিকানা লেখার অপশন রাখা হয়েছে। ফরমে থাকবে দেশের স্থায়ী ঠিকানা, বর্তমান ঠিকানা এবং যে দেশে ভোটার হবেন, সেই দেশে অবস্থানের ঠিকানা।
বাংলাদেশের মতো কয়েকটি নিবন্ধন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে সংশ্লিষ্ট দূতাবাসে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে নিয়ে নিবন্ধনকেন্দ্রে গিয়ে বায়োমেট্রিক দিয়ে আসতে পারবেন প্রবাসীরা। এরপর নির্বাচন কমিশন প্রবাসীদের নামে জাতীয় পরিচয়পত্র ইস্যু করবে। এনআইডিগুলো ছাপিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে পাঠানো হবে। ঐ দূতাবাস থেকে প্রবাসীরা তাদের স্মার্ট এনআইডি সংগ্রহ করতে পারবেন। এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (এনআইডি) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, ভোটাধিকার প্রয়োগ করা নয়, প্রবাসীদের হাতে এনআইডি কার্ড তুলে দেওয়াই তাদের প্রধান লক্ষ্য। প্রবাসীদের ভোটার করায় সম্মতি রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে এবং দুর্নীতি রোধে সব নাগরিকের হাতে এনআইডি পৌঁছানোর বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের পরিচিতিপত্র না থাকায় নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন প্রবাসীরা। এজন্য তাদের ভোটার করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহে সিঙ্গাপুরে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
উল্লেখ্য, ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে বর্তমানে সাড়ে ১০ কোটি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত বাংলাদেশির সংখ্যা ১ কোটির মতো।
ইত্তেফাক/এমআরএম