শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঘুষ দেওয়া-নেওয়া দুটোই সমান অপরাধ :প্রধানমন্ত্রী

আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৯, ০৪:৪৬

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দুর্নীতি দমনে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেছেন, ‘যে ঘুষ খাবে সে-ই কেবল অপরাধী নয়, যে দেবে সে-ও সমান অপরাধী। এ বিষয়টা মাথায় রেখে পদক্ষেপ নিলে এবং এ বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ হলে অনেক কাজ আমরা দ্রুত করতে পারব।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের সক্রিয় থাকার কথা উল্লেখ করে উপার্জন অনুযায়ী ট্যাক্স প্রদানের বিষয়টিতে লক্ষ রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কে কত ট্যাক্স দিল আর কে কত খরচ করল, তারও একটা হিসাব নেওয়া দরকার।

প্রধানমন্ত্রী ডেঙ্গু থেকে সুরক্ষা পেতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি ব্যক্তি পর্যায়ে সবাইকে আরো সচেতন ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজের ঘরবাড়ি ও কর্মস্থলের চারপাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নিজেকে সচেতন হতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে পিএমও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও সিটি করপোরেশনগুলোর প্রচেষ্টায় সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন।

গতকাল রবিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে এসব কথা বলেন। এসময় প্রধানমন্ত্রী তার সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে সরকারি সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, চোখের চিকিত্সার কারণে তিনি এবার দীর্ঘদিন চিকিত্সকের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হন।

যাদের ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে, তাদের চিকিত্সকদের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এখনো এই রোগের প্রকোপ অনেকটা রয়ে গেছে এবং বিভিন্ন জেলায়ও ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের আরেকটু সতর্ক হতে হবে। জেলা শহরগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী নিজের কাজটি নিজেই করার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘পাশ্চাত্য বিশ্বের অনেক কিছুই আমরা অনুকরণ করতে চাই। কিন্তু তারা যেভাবে নিজেদের কাজটা নিজেরা করে তা আমরা অনুকরণ করি না।’

প্রধানমন্ত্রী যথাযথভাবে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘আমরা বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি। কিন্তু তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প অনুযায়ী তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে।’ 

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়কে (পিএমও) বিষয়টির ওপর লক্ষ রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘এই দপ্তর থেকেই বিষয়টা নিয়ে নজরদারি করা দরকার, যাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারে, আমাদের অর্জনগুলো আমরা ধরে রাখতে পারি।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিশাল বাজেট পেশ করেছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার নিয়ে তাদের ভৌত কাজ বন্যার পরই যাতে শুরু করা যায় সে লক্ষ্যে পেপারওয়ার্ক শেষ করে দ্রুত উন্নয়নকাজ করতে হবে। 

তিনি বলেন, বন্যার পরই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের গতি বাড়াতে হবে, যাতে এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয় এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে আরো সক্রিয় দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি এলাকায় একটু খোঁজ নেওয়া দরকার। আমরা সতর্ক করে দিয়েছি কোনো এলাকায় কেউ গৃহহীন থাকবে না, কেউ ভিক্ষা করবে না। যেখানেই গৃহহীন থাকবে, তাদের একটা ঘর করে দিতে হবে।’ 

প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘যারা ঘরে ফিরে যেতে চায়, তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে আমরা বস্তিবাসীর ওপর সার্ভে করেছিলাম। এই কাজগুলো আবার করতে হবে।’ 

তিনি ‘শান্তি নিবাস’ ও ‘অবসর’ কর্মসূচি পুনরায় চালুর কথা বলেন। তার সরকার প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করেছে এবং এরপর আরো যত ওপরে ওঠার চেষ্টা করা হবে, অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই তা দুরূহ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় কাজের প্রতি সবাইকে যত্নবান হওয়ার পরামর্শ দেন।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা একদা বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করে নাই, তারা বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে একটা বটমলেস বাস্কেট হবে। সেই দেশটার থেকেও আমাদের দারিদ্র্যের হার কমাতে হবে। তাদের চেয়ে অন্তত ১ শতাংশ হলেও দারিদ্র্য কমাতে হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তারা উন্নত দেশ হতে পারে, কিন্তু আমরা যে পারি সেটা আমাদের প্রমাণ করতে হবে।’

দারিদ্র্য বিমোচন এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে যে কোনো কাজে তার কাছে যে কোনো সময় যে কাউকে আসার অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, ‘আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে এটা ঠিক, কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা, কাজেই সেই হিসাবে মনে করি, দেশের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেখানে প্রটোকলের বাধা আমি কখনো মানি না, মানতেও চাই না।’ 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি চাই সবার সঙ্গে মিশতে, জানতে এবং কাজ করতে। আমরা সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করব, যাতে দেশের উন্নয়নটা ত্বরান্বিত হয়।’

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে সবাইকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শোকের মাস এই আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা এবং ১৫ আগস্টের শহিদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। 

তিনি বলেন, পরিবার-পরিজন হারিয়ে এবং শোক ও ব্যথা নিয়ে জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্যই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: স্থবির সংস্কৃতি অঙ্গন

প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান ও ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পিএমওর এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

ইত্তেফাক/নূহু