সবাই মনে আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে একজন প্রার্থী দেওয়া হবে। কিন্তু আবারো সকলকে হতাশ করে মহাজোটের প্রার্থীকে নমিনেশন দেওয়া হয়।
ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা এক হয়ে আওয়ামী লীগের অসময়ের কাণ্ডারি সাবেক সংসদ সদস্য জনপ্রিয় নেতা এমদাদুল হককে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট যুদ্ধে অংশগ্রহণে উৎসাহ দেয়। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় পরে আওয়ামী লীগের এক পক্ষ এমদাদুলের হয়ে নির্বাচন এর মাঠ গুছানো শুরু করে।
অপরদিকে ইয়াসিন আলী নৌকা প্রতীক নিয়ে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিলে আওয়ামী লীগের একটি শক্তিশালী বিদ্রোহী অংশ তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে।
এদিকে আওয়ামী লীগের ওই বড় অংশটি স্বতন্ত্র প্রার্থী এমদাদুল হকের পক্ষ নিয়ে মাঠে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করলে, মহাজোটের শরিক দল জাপার প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন দলের প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে লড়াই করবেন বলে ঘোষণা দেন।
ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রাণীশংকৈল উপজেলার আংশিক) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য (ওয়াকার্স পার্টির) নেতা মো ইয়াসিন আলী ও মহাজোটের শরিক দল (জাপার) হাফিজ উদ্দিনের মধ্যে দলে দরকষাকষি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ নৌকা মার্কার প্রতীক দেওয়া হয় বর্তমান ওয়াকার্স পার্টির এমপি ইয়াসিন আলীকে।
সবদিকে বিবেচনা করে ও নির্বাচনের মাঠ পর্যালোচনা করে এবং মহাজোটের কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে বিএনপির একক প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম জাহিদ।
ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়ার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী না দেওয়ায় ইতিপূর্বে মহাজোটের প্রার্থী জাপা ও ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছে তারা।
এবার দলীয় প্রার্থীর দাবিতে তারা সভা-সমাবেশ, আন্দোলনও করেছে। কিন্তু তাদের দাবি অপূর্ণই থেকে গেল। এবারও মহাজোটের প্রার্থী করা হয়েছে ওয়ার্কাস পার্টির বর্তমান সাংসদ ইয়াসিন আলীকে।
মহাজোটের তিনজন প্রার্থীর বিপক্ষে একাই বাধা বিএনপি। ফলে দলীয় কোন্দলের কারণে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া বলেন, আমরা আগের থেকে অনেক সু-সংগঠিত হয়েছি। যার প্রমাণ উপজেলা নির্বাচনে আমরা জয়ী হয়েছি। সুষ্ঠু ভোট প্রদানের সুযোগ হলে আসনটি বিএনপি হবে বলে আশা করছি।
বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল ইসলাম বলেন, আসনটি দীর্ঘদিন ধরে মহাজোটের দখলে। আমি তিনবার নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছে। আমাকে শেষ বারের মত জনগণ যদি সুযোগ প্রদান করে তাহলে আসনটিকে উন্নয়নের মডেলে পরিণত করবো। মানুষ এবার পরিবর্তন চায় তাই ধানের শীষের বিজয় হবে বলে মতব্যক্ত করেন এই প্রার্থী।
আরো পড়ুন: আম্বানির টাকায় মঞ্চ মাতালেন বিয়ন্স
জাপার প্রার্থী হাফিজ উদ্দিন বলেন, জোট থেকে মনোনয়ন দিবে বলে আমি অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু মহাজোটের শরিক দল ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থীকে নৌকা মার্কার প্রতীক দিয়েছে। তাই আমি দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে থাকবো। পূর্বে এই আসনে নির্বাচন করে জয়ী হয়ে উন্নয়ন করেছি। এবারো জনগণ আবার ভোট দিয়ে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
মহাজোটের প্রার্থী নৌকা প্রতীক পাওয়া বর্তমান সাংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী বলেন, মহাজোটের সিদ্ধান্ত মতে আমাকে নৌকা প্রতীক দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওয়ার্কাস পার্টি ও আওয়মী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকায় বিজয় নিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। আওয়ামীলীগের বিপক্ষে যেন কোন নেতাকর্মী কাজ না করেন সেজন্য অনুরোধও করেন এই প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করে, দলের যে কেউ মনোনয়ন পেলে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হত। কিন্তু নৌকা প্রতিকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন মহাজোটের প্রার্থী ইয়াসিন আলী। এ খবরে সবচেয়ে বেশি খুশি হয় বিএনপির প্রার্থী জাহিদুল।
ইত্তেফাক/জেডএইচ