শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বছর জুড়ে অবহেলা, দিবস এলেই যত্ন

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১৩:১৬

১৯৫২ সালে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে ভাষার দাবি আদায় করেছেন ভাষা শহীদরা। সেই ভাষা সৈনিকদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ২০০৭ সালে তাদের নামে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১১টি সড়কের নামকরণ করা হয়। 

তবে বছর জুড়ে সংস্কার না হওয়ায় এসব নামফলকের বেহাল অবস্থা। সড়কের নামফলকগুলো ধুলোবালি, আবর্জনা আর রাজনৈতিক পোস্টারে চাপা পড়েছে। নামফলকের লেখা শহীদদের জীবনবৃত্তান্ত পড়ার উপায় নেই।

তবে ২১ ফেব্রুয়ারি আসলেই যত্ন শুরু হয় ভাষা শহীদদের  নামফলকগুলোর। আর বছর জুড়ে অযত্নে থাকায় এসব সড়কের নাম অনেকেই জানেন না। কোনো কোনো জায়গায় নামফলক ভেঙে পড়ে আছে। আবার কোনো কোনো নামফলকে বোঝাই যাচ্ছে না ভাষা শহীদদের কৃতিত্বগাথা জীবনবৃত্তান্ত।

ভাষা শহীদদের নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ১৫ নম্বর ওয়ার্ডেই রয়েছে ১০টি সড়ক এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মিরপুর-১ নম্বরে রয়েছে একটি।

ছবি: ইত্তেফাক

ধানমন্ডির ৯ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব-এর নামে নামকরণ করা হয়। অথচ সড়কটি ধানমন্ডি ৯ নম্বর সড়ক হিসেবে পরিচিত সবার কাছে। সড়কটির পাশেই চা বিক্রি করেন কালাম মিয়া। সড়কটি তিনি চেনেন ৯ নম্বর সড়ক হিসেবে। তিনি জানান,  এখনকার বেশির ভাগ মানুষই সড়কটি নম্বর হিসেবে চেনেন। খুব কম মানুষই জানেন ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক হিসেবে। এখানকার বাড়িগুলোর নামের পাশেও ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব-এর নাম নেই, আছে সড়ক নম্বর। তাই বেশিরভাগ মানুষ হয়তো চেনেন না।

৭ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন সড়ক। সড়কের মাথায়   রয়েছে তার নামে নামফলকও। পাশেই আছে তার কৃতিত্বগাথা জীবনবৃত্তান্ত। এ সড়ক সম্পর্কে কালাম মিয়ার মতোই সালেহা বেগম জানান, পুরো বছরই ধুলোবালি আর পোস্টারে কিছুই বোঝা যায় না নামফলক আর জীবনবৃত্তান্ত। ২১ ফেব্রুয়ারি আসলেই সিটি করপোরেশনের লোকজন এসে ঘষামাঝা এবং রং করেন।     

ছবি: ইত্তেফাক

সড়ক নিয়ে কমপক্ষে ২০ জনের সঙ্গে ইত্তেফাক অনলাইনের এ প্রতিবেদকের কথা হয়। অধিকাংশের মতামত- ভাষা শহীদদের নামে নামকরণ করা সড়কে থাকা মার্কেট, দোকান, বাসাবাড়ির নাম লেখার সময় বাধ্যতামূলক ভাষা শহীদদের নাম লিখতে হবে। তাহলে সবার মধ্যে সড়কগুলোর পরিচিতি পাবে। 

২০০৭ সালের জানুয়ারিতে ধানমন্ডির ৯ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক কাজী গোলাম মাহবুব সড়ক, ৮ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক গাজীউল হক সড়ক, ৭ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক আব্দুল মতিন সড়ক, ৬ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক আব্দুর রশিদ তর্কবাগিশ সড়ক, ৫ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক আবুল কালাম শামসুদ্দীন সড়ক, ৪ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক অলি আহাদ সড়ক, ৩ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক মোহাম্মদ সুলতান সড়ক, ১ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক ডা. গোলাম মাওলা সড়ক, ১৫ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী সড়ক, ৯/এ নম্বর সড়ককে ভাষাসৈনিক তোয়াহা সড়ক ও মিরপুর টেকনিক্যাল কলেজের মোড় থেকে মিরপুর-১ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত সড়ককে ভাষাসৈনিক প্রিন্সিপাল আবুল কালাম সড়ক হিসেবে নামকরণের প্রস্তাব দেয় অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের আওতাধীন রাস্তা, অবকাঠামো এবং স্থাপনার নামকরণ উপ-কমিটি।

পরে ২০০৭ সালের ২৫ জুলাই ঢাকা সিটি করপোরেশনের ১১তম সাধারণ সভায় এ প্রস্তাব গ্রহণ করেন প্রয়াত সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। ২০১১ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন ভাগ হয়ে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন হয়।

ইত্তেফাক/ইউবি/কেকে