শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মার্কিন মুলুকে বাংলাদেশিদের জয়জয়কার

আপডেট : ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ১০:৩৯

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়ে শপথ নিয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোসেফ রবিনেট বাইডেন; সংক্ষেপে জো বাইডেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন পার করা জো বাইডেন জীবনের নানা চড়াইউতরাই পাড়ি দেওয়ার মাধ্যমে হোয়াইট হাউজ সিংহাসনের রাজা হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন সাম্রাজ্যকে বিভক্তির মাধ্যমে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছেন।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার স্বৈরতান্ত্রিক ও একগুঁয়ে শাসনের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সমগ্র বিশ্ব থেকে কার্যত আলাদা করে ফেলেছিলেন। এমনকি মার্কিনিদের সঙ্গে পুরোনো বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেও সম্পর্কের ফারাক তৈরি হয়েছিল সে সময়ে। তাই পুরো পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্রকে আবার চালকের আসনে বসাতে মরিয়া নতুন প্রেসিডেন্ট। জো বাইডেন একদল উচ্চশিক্ষিত, রাজনৈতিক পরিপক্বতা সম্পন্ন এবং অঞ্চলভেদে কাজে লাগানো যায় এমন সব ব্যক্তিত্বকে নিজের গুরুত্বপূর্ণ সব পদে বসিয়ে দিচ্ছেন। সেদিক বিবেচনায় জো বাইডেনের কেবিনেট বিশ্ব পরিচালনায় একটি পরিপক্ব ক্যাবিনেট হতে যাচ্ছে।

বাইডেনের পররাষ্ট্রনীতিতে রয়েছে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমলের স্পষ্ট ছাপ। তিনি নারী-পুরুষ, বর্ণবিদ্বেষসহ সবকিছুকে দূরে সরিয়ে রেখে নিজের গতিপথ সাজিয়ে নিচ্ছেন নিজের মতো করে। জো বাইডেন বারাক ওবামা আমলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এমন সব রাজনৈতিক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিকে আবার তার কাছে নিয়ে আসছেন। ট্রাম্প আমলে আমেরিকার যে অপূরণীয় ক্ষতিসাধন হয়ে গেছে তা নিরসনে তাকে অতি আগ্রহী বলে মনে করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পালাবদলের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোতে এসেছে স্বস্তির নিঃশ্বাস।

জো বাইডেনের প্রশাসনে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন জায়েন সিদ্দিকী। তিনি হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চিফ অব স্টাফের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হিসেবে নিযুক্ত হন। তারপর একে একে আরও তিন জন বাংলাদেশি গুরুত্বপূর্ণ সব পদে নিয়োগ লাভ করেন। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পল্লী উন্নয়ন সচিবালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি চিফ অব স্টাফ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান ফারাহ আহমেদ এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টিমের গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পান রুমানা আহমেদ। তারা দুজনেই সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আমলেও মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

সর্বশেষ বাংলাদেশি হিসেবে মার্কিন প্রশাসনের হোয়াইট হাউজের সিনিয়র কাউন্সিলর পদে নিয়োগ লাভ করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান কাজি সাবিল। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন এবং বিশ্বখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কর্মজীবনে তিনি ব্রুকলিন ল স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক ছিলেন এবং ডেমস নামে একটি সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্বরত ছিলেন। তার সংগঠনের মূল কাজ ছিল বর্ণ ও জাতিগত সাম্য, অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি, নীতিগত গবেষণার আলোকে গণতান্ত্রিক চেতনার আলোকে সর্বসাধারণকে উজ্জীবিত করা। আর এর মাধ্যমেই তিনি নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের নজরে আসেন।

জো বাইডেনের প্রশাসনে বাংলাদেশিদের নিয়োগ লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক যেন আরও অনেক দূর এগিয়ে গেল। দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিসহ সব গুরুত্বপূর্ণ খাতে অবদান রেখে চলেছেন। বিশ্ব মোড়ল খ্যাত মার্কিনিদের প্রশাসনে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ যেন বিশ্ব দুয়ারে নিজেদের মেলে ধরার সুযোগে আরও অনেক দূর এগিয়ে গেল। বাংলাদেশের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদার মূলকভাবে সন্ত্রাসবাদ দমন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্কে ব্যাপক অগ্রগতি হবে—এই প্রত্যাশা সবার। তাছাড়া রোহিঙ্গা সংকট বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোহিঙ্গাদের ওপরে সৃষ্ট গণহত্যা ও মানবাধিকার-বহির্ভূত কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করার পাশাপাশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আর্থিক অনুদান করলেও নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সমস্যার পূর্ণাঙ্গ সমাধান করবেন—এই প্রত্যাশা সবার। তাছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে সদা সোচ্চার জো বাইডেন রোহিঙ্গাদের দ্রুত নিরাপদ পুনর্বাসনসহ নাগরিকত্ব নিশ্চিতের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাংলাদেশকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করবেন এবং বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত সব সম্পর্ক বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যাবেন এই প্রতীক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ।

লেখক: শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।

ইত্তেফাক/এমআর

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন