বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ভারত-বাংলাদেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক

আপডেট : ২৩ মার্চ ২০২১, ১৬:৩৯

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বাংলাদেশে আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগামী ২৬-২৭ মার্চ নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করবেন বলে জানায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করবেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষ উপলক্ষে নরেন্দ্র মোদির এই সফর।

করোনা মহামারী পর থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এই সফর কোনও বিদেশের প্রথম সফর হবে। এ থেকে বোঝা যায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের  সম্পর্ক কতটা সৌহার্দ্যপূর্ণ। ১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময়  প্রায় ১ কোটি শরণার্থী কে আশ্রয় দিয়েছিল ভারত। শুধু তাই না ভারত সরকার এবং ভারতের সাধারণ জনগণের সম্পূর্ণ সমর্থন ছিল বাংলাদেশের প্রতি।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ভারতীয় সরকার ও জনগণ এবং বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের মধ্যে অপূর্ব সমন্বয় ও সমঝোতা কালক্রমে আমলাতান্ত্রিকতার বেড়াজালে আটকে গেছে, পথ হারিয়েছে অবহেলা আর সন্দেহের চোরাগলিতে।

২০১৫ সালের জুনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে সফর করেন এবং দুই দেশের মধ্যে ২২ টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০০ কোটি ডলারের ঋণ বিষয়ক সমঝোতা হয়, ৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের রিলায়েন্স পাওয়ার বাংলাদেশে একটি ৩ হাজার মেগাওয়াটের এলএনজি ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপনে ৩০০ কোটি ডলার বিনিয়োগে সম্মত হয়। আদানি পাওয়ার ১৫০ কোটি টাকার বিনিয়োগে একটি ১৬০০ মেগাওয়াট কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করবে। দুই দেশ মোট ২২টি চুক্তি স্বাক্ষর করে যার মধ্যে রয়েছে সামুদ্রিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, মানব পাচার ও জাল মুদ্রা রোধ।

এর আগে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে এক নতুন অধ্যায় শুরু হয়। দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অনেক বিষয়ে মতৈক্য পোষণ করেন। সেই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাস-বিরোধী কাজ এবং নিরাপত্তাসংক্রান্ত সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারত একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। অনেকটা অপ্রত্যাশিত ও একপক্ষীয়ভাবে বাংলাদেশ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ভারতের মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য ট্রানজিটের সুবিধা এবং ভারতকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের সুবিধাদানে রাজি হয়। সীমান্ত সমস্যা সমাধানেও নেতারা রাজি হন। 

২০১০ সালের আগস্টে ভারত বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলারের ক্রেডিটকে নির্দিষ্ট খাতে বিশেষত রেলপথে ব্যবহার করার জন্য। ঐ বছরের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে তার বৈঠকে আগরতলা (ভারত)-আখাউড়া (বাংলাদেশ) রেলওয়ে প্রকল্প চূড়ান্ত হয়।  ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের ১০ কিলোমিটারই বাংলাদেশের ভেতর পড়বে। বাংলাদেশের ভেতরের অংশের রেলপথের খরচও ভারত সরকারই বহন করে।

ভারত বাংলাদেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বেশ সক্রিয়। ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্ন খাতে সুদ দিয়েছে। ২০১১ সালে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য ৭৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে ভারত বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেয়। ভারতের বিএইচইএল, আরআইটিইএস থেকে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি ক্রয় করার জন্য ৮৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়।

২০১৬ সালে ১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলারে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করবে ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যাল লিমিটেড (বিএইচইএল)।কোম্পানির সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট কনস্ট্রাকশন-ইপিসি (টার্নকি) চুক্তি করে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল)। বিআইএফপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য এবং বিএইচইএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রেম পাল যাদব চুক্তিতে সই করেন। চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার এই কেন্দ্র নির্মাণে প্রয়োজনীয় ১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করে ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক।

২০১৮ সালে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ১৩০ কিমি দীর্ঘ "ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন" উদ্বোধন করেন। এই পাইপলাইনের মাধ্যমে ৪ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল বাংলাদেশে ভারত থেকে পাঠানো হয়। সেপ্টেম্বর ২০১৮ তে বাংলাদেশের মন্ত্রিসভা একটি চুক্তির খসড়া অনুমোদন করে, যার ফলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মংলা সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পণ্য সরবরাহ করতে পারবে।

প্রতিবেশী দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস। এ আস্থা হঠাৎ এক দিনে বা আপনা–আপনি গড়ে ওঠে না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মতো একটি যুগান্তকারী ঘটনার মধ্য দিয়ে এ আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তি রচিত হয়েছিল।

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন