শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মুক্তির পথিকৃৎ নেলসন ম্যান্ডেলা

আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২১, ০৪:০২

নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি। তিনি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যিনি বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহুবর্ণভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব, প্রখর রসবোধ, তিক্ততা ভুলে বৈরী প্রতিপক্ষের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো উদারতা, এসব মিলিয়ে নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন এক জীবন্ত কিংবদন্তি। শান্তিতে নোবেলজয়ী ও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবিরোধী আন্দোলনের কিংবদন্তি নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার জন্মদিন আজ। এই মহান নেতাকে সম্মান জানিয়ে ১৮ জুলাইকে ম্যান্ডেলা দিবস ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ।

নেলসন ম্যান্ডেলা ১৮ জুলাই ১৯১৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা নাম রেখেছিলেন রোলিহ্লাহলা ডালিভুঙ্গা মানডোলা। স্কুলের শিক্ষক তার ইংরেজি নাম রাখলেন নেলসন। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার আপামর মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ‘মাদিবা’। তরুণ বয়সে তিনি চলে আসেন জোহানেসবার্গে। সেখানে তিনি আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের যুব শাখার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে পড়েন দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে। একই সঙ্গে তিনি কাজ করেন আইনজীবী হিসেবেও।

No description available.

পরবর্তীকালে ১৯৪৩ সালে আফ্রিকার ন্যাশনাল কংগ্রেসে এবং ১৯৪৪ সালে ইয়ুথ লীগ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ সালে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেফতার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবনের কারাদণ্ড দেয়। দীর্ঘ ২৭ বছর কুখ্যাত রবেন দ্বীপের কারাগারে বন্দি থাকতে হয় ম্যান্ডেলাকে। ১৯৯০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগার থেকে মুক্ত হন ম্যান্ডেলা।

কারাগার থেকে বের হয়ে নিজ দলের হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নেন। ম্যান্ডেলা এমন এক দক্ষিণ আফ্রিকার স্বপ্ন দেখেছেন, যেখানে সব জাতি, সব বর্ণের মানুষ সমান সুযোগ নিয়ে একসঙ্গে থাকতে পারবে। পুরনো দক্ষিণ আফ্রিকাকে পেছনে ফেলে নতুন আফ্রিকা গড়ার কাজটা সহজ ছিল না।

কিন্তু নেলসন ম্যান্ডেলা অতীতের তিক্ততার প্রতিশোধ নেওয়ার পরিবর্তে তার সাবেক কৃষ্ণাঙ্গ নিপীড়কদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেন। শুরু হলো এক নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার পথ চলা। এর ফলে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদের অবসান ঘটে। ১৯৯৪ সালের নির্বাচনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ রাষ্ট্রপতি হন তিনি। ১৯৯৪ সাল থেকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন । তার আগে ১৯৯৩ সালে এফ ডব্লিউ ডি ক্লার্কের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার পান তিনি।

তার অসীম সাহস, দক্ষ নেতৃত্ব ও নিঃস্বার্থ নীতির জন্য সারা বিশ্বের মানুষ তার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। শান্তির স্বপক্ষে কাজ করা এবং আফ্রিকার নবজাগরণে ভূমিকা রাখার জন্য গত চার দশকে তিনি ২৫০টিরও অধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ ও সিনেট সদস্যদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে বিশ্ববরেণ্য এই মহান নেতাকে মর্যাদাপূর্ণ কংগ্রেশনাল স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর তার বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে।

লেখক: শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ইত্তেফাক/এমআর

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন