বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বিশেষজ্ঞমত

করোনা ভাইরাসের জিনম সিকোয়েন্স এবং ভ্যাকসিনের আগমনী বার্তা

আপডেট : ০৫ জুন ২০২০, ১২:১৮

করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাব গোটা বিশ্বকে শাসিয়ে বেড়ানো এক মহাদুর্যোগে পরিণত হয়েছে। এই নতুন ভাইরাস সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অপ্রতুল। নেই কার্যকর কোন ঔষধ। এখনো আবিষ্কৃত হয়নি টীকা।

তবে সবাই আশা করছেন বিজ্ঞানীরা অতি শীঘ্রই টীকা বানাতে সক্ষম হবেন। এরই মাঝে গত ১৮-১৯ মে ২০২০ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘বার্ষিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সমাবেশ’। উক্ত সমাবেশেও সম্ভাব্য টীকার সমতাভিত্তিক বৈশ্বিক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)-এর ভাষ্য মতে, “countries agree 'equitable and timely’ access to coronavirus vaccine”। তাছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধান করোনায় তাঁর দেশে অনেক মানুষের মৃত্যুকে ‘সম্মান’ আখ্যা দিলেও আছেন ভ্যাকসিনের অপেক্ষায়। তিনি আশাবাদ করেছেন ‘এ বছরের শেষ নাগাদ আমারা টীকা পেয়ে যাব’। এসবের সাথে যোগ হয়েছে আমাদেরই দেশীয় একটি প্রতিষ্ঠানের বাবা-মেয়ের করোনাভাইরাসের জিন-নকশা উন্মোচনের ঘটনা। টীকা বানানোর উদ্দেশ্যে তাঁদের এই আবিষ্কারকে বাহবা দিয়ে ব্লগ লিখেছেন স্বয়ং বিল গেটস। এসব শুনে আমাদেরও ভাল লাগে। আশা জাগে মনে। সেই সাথে জানতে ইচ্ছে করে করোনাভাইরাসের জিন-নকশা আসলে কি? কেমন করে বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিন বানান? ভ্যাকসিন আমাদের শরীরে কাজ করে কিভাবে? আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজি।

আশার কথা হল এসব বিষয় দূর থেকে শুনে জটিল, কঠিন মনে হলেও বাস্তবে তা নয়। ভ্যাকসিন বুঝার জন্য বায়োটেকনোলজিস্ট বা ভাইরোলজিস্ট হতে হয় না। সাধারণ জ্ঞানের বিচার বুদ্ধি দিয়ে চিন্তা করলেই বুঝা যায় ভ্যাকসিন বানাতে কত সময় লাগে। বাজারে কেন এখনো করোনার ভ্যাকসিন আসছে না। আর কত দেরী হবে ভ্যাকসিন হাতে পেতে? সামান্য কিছু জেনে বিজ্ঞানী হওয়া যাবে না নিশ্চয়। দরকারও নেই। ভ্যাকসিন বুঝতে পারলেই হয়।

আমরা ইতোমধ্যেই জেনেছি, করোনা একটি আরএনএ (RNA) ভাইরাস। বৃত্তাকার কাঠামোর ব্যাস ৫০ থেকে ২০০ ন্যানোমিটার। ভিতরের দিকে থাকে রিবোনিউক্লিওটাইড বা RNA-এর রশ্মি বা সুতিকা, বাহিরের দিকে থাকে প্রোটিনের আবরণ। আরএনএ রশ্মিটি মূলত ২৯৯০৩টি নিউক্লিওটাইড বেস (Nucleobase)-এর একটি শিকল। আমরা আরও জানি যে, পৃথিবীর সকল RNA শিকলই Cytosine (C), Guanine (G), Adenine (A), এবং Uracil (U) এই চার রকমের নিউক্লিওটাইড বেস দিয়ে তৈরি। আর সকল DNA তে Uracil (U) এর পরিবর্তে থাকে Thymine (T)। বেসগুলো Sugar-Phosphate Backbone এর মাধ্যমে একটার পর একটা জোড়া লেগে শিকল তৈরি করে। মাত্র পাঁচটি নিউক্লিওটাইড বেস দিয়ে পৃথিবীর তাবৎ DNA/RNA কিভাবে তৈরি হয় সে এক বিরাট প্রশ্ন বটে। কিন্তু উত্তরটা সোজা। অনেকটা ২৬টি ইংরেজি বর্ণ বিভিন্ন সজ্জায় বসে যেমন তৈরি হয় লক্ষ কোটি শব্দ/বাক্য/উপন্যাস, তেমনি পৃথিবীর সকল DNA/RNA তৈরি হয় এই পাঁচটি মাত্র নিউক্লিওটাইড বেস দিয়ে। বিভিন্ন সজ্জায় বসে। আর কোন প্রাণের জিন-নকশা উন্মোচন মানে এই শিকলের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিউক্লিওটাইড বেসগুলোর অবস্থান জানা।      

পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বপ্রথম Haemophilus influenzae ব্যাকটেরিয়ার পূর্ণাঙ্গ জিনম সিকোয়েন্স প্রকাশ করেন Pacific Biosciences, USA-এর গবেষক দল, ১৯৯৫ সালে। শুরুতে জিন সিকোয়েন্স করা ছিল খুবই ব্যয়বহুল, সময় সাপেক্ষ। সেই  তুলনায় বৈজ্ঞানিক জটিলতার মানদণ্ডে জিনম সিকোয়েন্স এখন ডাল-ভাত। যেমন, এবছর ১১ জানুয়ারি চীন প্রথম SARS-CoV-2 এর জিনোম সিকোয়েন্স প্রকাশ করেন। সেই থেকে গত ২০ মে ২০২০ তারিখ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে জার্মানির GISAID.ORG-তে করোনা ভাইরাসের জিনম সিকোয়েন্স জমা পড়েছে ৩০৩৮৭টি। তার মাঝে বাংলাদেশ থেকে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে জমা পড়েছে ছয়টি। সার কথা হল, জিনম সিকোয়েন্স জানা এখন আর মুখ্য কাজ নয়। বরং জানা সিকোয়েন্স কাজে লাগিয়ে পরবর্তী ধাপের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করাই প্রধান কাজ। এই মুহূর্তে যেমন করোনার জানা জিনম সিকোয়েন্স ব্যবহার করে একটি ভ্যাকসিন আবিষ্কার করা একান্ত প্রয়োজন।

এখন প্রশ্ন হল, ভ্যাকসিন কি? আমরা জানি, আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেম ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৈরি করে অ্যান্টিবডি। পূর্ণ জীবিত ভাইরাস প্রবেশ করলে শরীর যেমন প্রতিরোধ গড়ে তোলে, মৃত ভাইরাস বা ভাইরাসের কোন সুনির্দিষ্ট দেহাংশ প্রবেশ করলেও তাই। আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার এই বিশেষ গুণকে কাজে লাগিয়েই তৈরি করা হয় ভ্যাকসিন। আসল ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার আগেই ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শরীরের ভিতর প্রবেশ করানো হয় মৃত ভাইরাস বা ভাইরাসের অংশজাত বা ভাইরাসের অংশজাত তৈরি করতে সক্ষম ভাইরাসের এমন জিন। আর এই প্রবঞ্চনার শিকার হয়ে আমাদের ইমিউন সিস্টেম তৈরি করে ফেলে এন্টিবডি। পরবর্তীতে যখন সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ জীবিত ভাইরাস প্রবেশ করে তখন তাৎক্ষণিক ভাবে সক্রিয় হয়ে উঠে পূর্বে তৈরি হওয়া এন্টিবডি। আমাদেরকে রক্ষা করে আসল ভাইরাসের হাত থেকে। আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে জাগিয়ে তুলে এন্টিবডি তৈরি করতে সক্ষম মৃত ভাইরাস বা ভাইরাসের অংশবিশেষই হল ভ্যাকসিন।  

বর্তমানে প্রচলিত ভ্যাকসিন তৈরির পদ্ধতিগুলোতে ভাইরাসের প্রায় সব অঙ্গই ব্যবহৃত হয়, যেমন: ১) Whole pathogen vaccine (মৃত অথবা অক্ষম পূর্ণ ভাইরাস); ২) Subunit vaccine (ভাইরাসের কোন নির্দিষ্ট অংশ, একাধিক অংশ এক সাথে অথবা কৃত্রিম ভাবে তৈরি ভাইরাসের কোন বিকল্প প্রোটিন); ৩) Nucleic acid vaccine (ভাইরাসের নির্দিষ্ট DNA/mRNA/ অথবা কৃত্রিম ভাবে সংশ্লেষিত RNA)। ভ্যাকসিন শরীরে ঢুকানোর একমাত্র উদ্দেশ্য এন্টিবডি/ইমিউন রেসপন্স তৈরি করা। কিন্তু কোন কারণে সামান্য ভুল হয়ে গেলে দিতে হতে পারে মারাত্মক খেসারত। ভুল ভ্যাকসিন হতে পারে প্রাণঘাতী। এ কারণে ভ্যাকসিন তৈরির প্রতিটি ধাপ পর্যবেক্ষণ করা হয় অত্যন্ত সতর্কতার সহিত, নিখুঁতভাবে।

মোটা দাগে ভ্যাকসিন তৈরির ছয়টি ধাপ। প্রথম ধাপে ভাইরাসটি সম্পর্কে বিস্তারিত (Basic understanding of the virus) জানার চেষ্টা করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে খুঁজে বের করা হয় ভ্যাকসিন তৈরির উপযুক্ত উপাদান (Vaccine candidate)। তৃতীয় পর্যায়ে Pre-clinical testing ধাপে উপযুক্ত উপাদান প্রবেশ করানো হয় প্রাণী দেহে। আসল গিনিপিগ ছাড়াও ইঁদুর, বানর, শিম্পাঞ্জি ইত্যাদিকে গিনিপিগ বানানো হয়। চতুর্থ ধাপের (Clinical trials-testing in humans) তিনটি পর্ব। প্রথম পর্বে ৩০-৪৫ জনের সুস্থ স্বেচ্ছাসেবকের দেহে, তারপর ৪০০-৫০০ জনের দেহে এবং সব শেষ পর্বে কয়েক হাজার লোকের দেহে ট্রায়াল ভ্যাকসিনের প্রবেশ করানো হয়। দেখা হয় ট্রায়াল ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা (efficacy and safety)। পঞ্চম ধাপে করা হয় নিরীক্ষা। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এই নিরীক্ষা সম্পন্ন করে তবেই ভ্যাকসিন তৈরির অনুমোদন (Regulatory approvals) দিয়ে থাকেন। সর্বশেষ ষষ্ঠ ধাপে (Production) কোম্পানি ভ্যাকসিন উৎপাদন শুরু করেন। প্রতিটি ধাপেই নিতে হয় কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন। দীর্ঘমেয়াদি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে ১৫-২০ বছরও লাগতে পারে। নির্ভর করে বিনিয়োগ, সমন্বয়, ধৈর্য এবং অনেক সময় ভাগ্যের উপর।

করোনা ভাইরাস এখন আমাদের এই ধৈর্যের পরীক্ষাই নিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০ মে ২০২০ তারিখে দেয়া তথ্য মতে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য বিশ্বব্যাপী ১১৮টি গবেষক দল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মাঝে ১১০টি প্রচেষ্টা আছে দ্বিতীয় ধাপে। ল্যাবরেটরি টেস্ট পর্যায়ে। কবে বাজারে আসবে অথবা প্রতিযোগিতার আদৌ টিকে থাকবে কিনা তা নিয়ে আছে জোর সন্দেহ। বাকি আটটির মাঝে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের উদ্যোগগুলো কিছুটা অগ্রগামী।

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষাধীন ভ্যাকসিনের নাম দেয়া হয়েছে ChAdOx1nCoV-19। তাঁরা Adenovirus নামক অন্য একটি ভাইরাসের জীন এমনভাবে পরিবর্তন করেছেন যেন তা মানুষের দেহে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারবে না। তারপর এই Adenovirus এর জিনের সাথে জুড়ে দেয়া হয়েছে করোনা ভাইরাসের Spike protein (S) এর জিন। এখন এই জিন জুড়ে দেয়া নিরীহ Adenovirus ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করালে দেহে তৈরি হবে করোনার স্পাইক প্রোটিন (S)। আর শরীরে করোনার ‘S’ প্রোটিনের উপস্থিতি দেখে আমাদের ইমিউন সিস্টেম তৈরি করবে করোনারোধি এন্টিবডি। এই হল সরল বাক্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচেষ্টা।

এপ্রিল মাসের ২৩ তারিখ থেকে অক্সফোর্ডের চার্চিল হাসপাতালে প্রথম মানবদেহে Clinical trials শুরু হয়। অক্সফোর্ড, সাউথহ্যাম্পটন, লন্ডন ও ব্রিস্টল শহরের আনুমানিক ১১১২ জন স্বেচ্ছাসেবক এই ট্রায়ালে অংশগ্রহণ করবেন। এই ট্রায়ালের সময়সীমা ২০২১ সনের মে মাস পর্যন্ত উল্লেখ করা হলেও সংশ্লিষ্টরা আগামী অক্টোবর/নভেম্বর নাগাদ এটি শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। নিরাশার খবর হল, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তৃতীয় ধাপে যে ছয়টি লাল বানরের (rhesus macaques) শরীরে ভ্যাকসিন দিয়েছিলেন সেই বানরদের দেহে এন্টিবডি তৈরি হলেও কিছু দিন পর তাদের কারো কারো কিঞ্চিৎ ঠাণ্ডা-কাশি হয়েছে! অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ এখন বানরের এই ঠাণ্ডা-কাশি নিয়ে টেনশনে আছে। তারপরও কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। দ্রুততার সহিত উৎপাদনে যাবার জন্য এরই মাঝে চুক্তি সম্পন্ন করেছেন বিখ্যাত ঔষধ কোম্পানি AstraZeneca এর সাথে।

ভ্যাকসিন তৈরির দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। তাঁদের National Institutes of Health (NIH) এর NIAID (National Institute of Allergy and Infectious Diseases) এবং বায়োটেক কোম্পানি Moderna যে ভ্যাকসিন তৈরি করতে চাচ্ছেন সেটি একটি RNA ভ্যাকসিন। নাম দেয়া হয়েছে mRNA-1273। ভ্যাকসিনটি মূলত স্পাইক প্রোটিন (S) এর জন্য নির্ধারিত mRNA এবং lipid আবরণের একটি সম্মিলন। Lipid এর সাহায্য নিয়ে mRNA প্রবেশ করবে মানব কোষে, কোষের অনুকূল পরিবেশে তৈরি হবে স্পাইক প্রোটিন (S)। আর শরীরে স্পাইক প্রোটিনের উপস্থিতির কারণে তৈরি হবে এন্টিবডি। এই হল সহজ ভাষায় যুক্তরাষ্ট্রের করোনার ভ্যাকসিন।
NIH এবং Moderna এর বিজ্ঞানীরা ভ্যাকসিনের জন্য স্পাইক প্রোটিন এর সিকোয়েন্স চূড়ান্ত করেন এবছর জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ। ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় সন্তোষজনক ফল আসায় U. S. Food and Drug Administration (FDA) মানব দেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি দেয় মার্চ মাসের ৪ তারিখ। সিয়াটল শহরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয় মার্চ মাসের ১৬ তারিখ। এদিকে মার্চ মাসের ১২ তারিখ FDA করোনার mRNA-1273 ভ্যাকসিনকে 'Fast Track' হিসেবে আখ্যায়িত করে। সর্বোচ্চ দ্রুততার সহিত ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছে।

mRNA-1273 ভ্যাকসিন ট্রায়ালে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত ৪৫ জন সুস্থ লোকের দেহে দু'বার করে ভ্যাকসিন দেয়া হয়। এর ফলে তাঁদের রক্তে যে পরিমাণ এন্টিবডি পাওয়া গেছে সেটা করোনা ভাইরাসকে সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করতে অত্যন্ত কার্যকর (Neutralizing Antibody) হিসেবে পরীক্ষিত হয়েছে। ভ্যাকসিনটি সম্পূর্ণ নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এই সমস্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীরা এবছরের জুলাই মাসে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের চতুর্থ ধাপের শেষ ভাগের ট্রায়াল শুরু করার পরিকল্পনা করছেন। আর কোন ভ্যাকসিন ট্রায়ালের চতুর্থ ধাপ সফলভাবে সম্পন্ন করলে সেই ভ্যাকসিন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়ে থাকে। আশা করা হচ্ছে এ বছর সেপ্টেম্বর/অক্টোবর নাগাদ mRNA-1273 ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

যুক্তরাষ্ট্র সেপ্টেম্বরে ভ্যাকসিন বাজারে নিয়ে আসবে আর চীন চুপচাপ বসে থাকবে তা কি হয়? চীন বসেও নেই। জানা মতে চীন কমপক্ষে তিনটি ভ্যাকসিন নিয়ে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। যে উহান দিয়ে করোনার শুরু, সেই উহানের Wuhan Institute of Biological Products-ই নেতৃত্ব দিচ্ছে একটি ভ্যাকসিন তৈরিতে। Sinovac Biotech এর সাথে মিলে বানাতে যাচ্ছে করোনা ভ্যাকসিন Ad5-vectored-COVID-19। ১০৮ জন স্বেচ্ছাসেবকের মাঝে পরিচালিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছেন গত ২২ মে। Safety, tolerability, এবং immunogenicity এসবের মানদণ্ডে এই ভ্যাকসিনের চমকপ্রদ ফল পেয়েছেন তাঁরা। তাছাড়া, চীনের Academy of Military Medical Sciences এবং  বায়োটেক ফার্ম CanSino Bio মিলে যে ভ্যাকসিন বানাতে যাচ্ছে সেটার নাম দেয়া হয়েছে Ad5-nCoV। বর্তমানে মানব দেহে কার্যকারিতা পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায়ে আছে এই ভ্যাকসিন। তাই আশা করা হচ্ছে দ্রুতই বাজারে চলে আসবে চীনের তৈরি করোনা ভ্যাকসিন।

করোনা ভাইরাস থেকে পৃথিবীবাসিকে রক্ষা করার জন্য এখন একটি ভ্যাকসিন জরুরিভাবে প্রয়োজন। প্রশ্ন হল, মহাকাঙ্ক্ষিত সে ভ্যাকসিনটি কবে আসবে এই পীড়িত গ্রহে? সুনির্দিষ্ট করে বলে মুশকিল। তবে পৃথিবীর তাবৎ বিজ্ঞানী ও বিশ্ব নেতৃত্ব কাজ করে যাচ্ছেন একাগ্রতা দিয়ে। সব কিছু দেখে আগামী সেপ্টেম্বর/অক্টোবর মাসে করোনা ভাইরাসের একটা কার্যকর ভ্যাকসিন প্রাপ্তির আশা আমরা করতেই পারি।

 

লেখক:
(সাবেক পোস্ট ডক্টরাল ফেলো, ইন্সটিটিউট ফর রিসার্চ ইন মলিকোলার মেডেসিন, ইউএসএম, পেনাংগ, মালয়েশিয়া।)  
মাননীয় মন্ত্রীর একান্ত সচিব
কৃষি মন্ত্রণালয়

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন