শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নৌদুর্ঘটনা কেন হয়?

আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২০, ১১:০৭

যাত্রীবাহী নৌযান। ঝড়, বন্যা বা অন্য কোনো কারণে দুর্ঘটনাকবলিত হতে পারে। কিন্তু আমাদের যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে যদি দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটা মেনে নেওয়া কঠিন। 

সম্প্রতি বুড়িগঙ্গায় ছোটো একটি লঞ্চ (টেডি লঞ্চ) ডুবে গেছে। অন্য লঞ্চ ছোটো লঞ্চটিকে সরাসরি আঘাত করে। সিসি টিভি ফুটেজে এমনটা দেখা গেছে। ভাগ্য ভালো, এই দুর্ঘটনা রেকর্ড হয়েছে। অনেক দুর্ঘটনা রেকর্ডই হয় না। 

প্রকৃত কারণ কী, তা কম সময়েই আমরা জানতে পারি। আবার যারা দুর্ঘটনা ঘটায়, তাদের উপযুক্ত বিচার হয় না। মামলা হলে কিছুদিন জেল খেটে বেরিয়ে যায়। বুড়িগঙ্গায় এ সময়ে লঞ্চ ডোবার কথা নয়। ঝড়, বন্যা কিছুই নেই। এটা নিছক হত্যাকাণ্ড—কারণ যে লঞ্চটি আঘাত করেছে, সেটি দূর থেকেই ছোটো লঞ্চটিকে দেখেছে। অবশ্য বেপরোয়া লঞ্চ চালনা, একটির গায়ে ওপরটির উঠে যাওয়া, মাঝনদীতে ধাক্কাধাক্কি, বিপজ্জনক প্রতিযোগিতা নতুন কিছু নয়।

বুড়িগঙ্গায় বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য খেয়াঘাট। ছোটো ছোটো নৌকা খেয়া পার করে। দিন-রাত সব সময়। এদের কারণে নৌযান চলাচল ব্যাহত হয়। বরিশালে যে বড়ো লঞ্চগুলো যায়, সেগুলো ২০০ থেকে ২৫০ ফুট লম্বা। ইচ্ছে করলে হুট করে বাসের ব্রেক কষে লঞ্চ থামানো যায় না। হুট করে নৌকা এলে সমস্যা হয়। 

বাল্কহেড (বালুবাহী জাহাজ) রাতে চলাচল করা নিষেধ। তবু অবাধে চলাচল করছে। এগুলো দূর থেকে দেখে চেনা যায় না। এগুলোতে সিগন্যাল বাতি থাকে না। অধিকাংশ পানিতে ডুবে থাকে। ফলে নৌযানের সঙ্গে দুর্ঘটনা ঘটে। অনেকবারই নৌযান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাল্কহেড বন্ধে প্রশাসন নীরব। কারণ এখানে অবৈধ ইনকামের সুযোগ আছে। মাঝে মাঝে লোকদেখানো অভিযান চলে। 

বাল্কহেডের সঙ্গে সংঘর্ষে বড়ো নৌযান ভয়াবহ দুর্ঘটনাকবলিত হতে পারে। তখন আমাদের তাকিয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই। আমাদের সব উদ্ধার-জাহাজ মিলে বড়ো লঞ্চ টেনে তুলতে পারবে না। ১০০-১৫০ ফুট লম্বা লঞ্চ, নিদেনপক্ষে ওজন ১০০ টনের বেশি। সেটা তোলার সক্ষমতা আমাদের নেই। বহু আলোচনা হলো। বহু কথা হয়েছে ভারী নৌযান তোলার সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারে। দুঃখজনক, বাস্তবে কোনো কাজ হয়নি। উদ্ধারকারী জাহাজ বৃদ্ধ হামজার আয়ু শেষ। 
যাত্রীবাহী, মালবাহী যত নৌযান গত এক দশকে ডুবে গেছে, তার আশিভাগই আমরা তুলতে পারিনি। ডুবন্ত নৌযান অন্য নৌযান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি করছে। এমনও হয়েছে, বিভিন্ন চ্যানেল ডুবন্ত নৌযানের কারণে নৌচলাচল বন্ধ হয়েছে। নদী খননের কথা নাহয় নাই বললাম। চরম ঝুঁকি নিয়ে বরিশালের লঞ্চগুলো চলাচল করে। দুর্ঘটনা ঘটলে মৃতদের পরিবারকে টাকা দেওয়া হয়। তবে এই টাকা দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আগে কেন খরচ করা হয় না?

ডুবে যাওয়া ছোটো লঞ্চটির ফিটনেস ছিল কি না। বড়ো নদীতে এত ছোটো লঞ্চ চলার অনুমতি কেন দেওয়া হলো? কঠিন সত্য হলো, নৌ সেক্টরে কোথায় কী কী সমস্যা—সেটা কারো অজানা নয়। অনেক কমিটির অনেক সুপারিশ জমা আছে। বাস্তবতা হলো, কেন সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি তা দেখার কেউ নেই। দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যু হলে আমরা নড়েচড়ে বসি। তদন্ত কমিটি হয়। ব্যস ঐ পর্যন্তই। বর্ষা মৌসুম এখন। মেঘনায় দুর্ঘটনাঝুঁকি বাড়বে। তাই আমাদের নৌ সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরাতে কাজ করতে হবে। কালক্ষেপণ করার সুযোগ নেই।

বরিশাল

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন