বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ইতালির অভিজ্ঞতায় করোনা ও কিছু পরামর্শ

আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২০, ০৯:৩৪

বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি করোনা ভাইরাস (Covid-19) দুর্যোগ প্রতিরোধের প্রাকৃতিক মসলার রেসিপিটির সংমিশ্রণ নিয়ে আমার শরীরে আমার অভিজ্ঞতা ও গবেষণাটি বর্ণনা করতে চাই। আমি ইতালীয় বিশ্ববিদ্যালয় ‘লা সাপিয়েনজ’-এ বৈজ্ঞানিক গবেষক (পিএইচডি) হিসেবে কাজ করেছি এবং সামাজিক শিক্ষক হিসেবে বেকার যুবকদের অর্থনৈতিক বিকাশের জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক ইমার্জেন্সি ভলান্টিয়ার প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

করোনা ভাইরাস বিপর্যয়ের প্রভাব থেকে আমার ইতালীয় পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার দীর্ঘ এক করুণ কাহিনি রয়েছে। আসলে আমি করোনা ভাইরাস সম্পর্কে কর্তৃপক্ষের সমস্ত নির্দেশ মানতাম না। সুতরাং বুঝতে পারবেন কত সহজেই আমি সংক্রমিত হয়েছিলাম। সবাই জানেন যে এটি ইতালির পক্ষে সত্যিই কঠিন সময় ছিল এবং সবাই ইতালির প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ও নির্দেশনা শুনেছিল।

ইতালির প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার পরে আমি বুঝতে পেরেছিলাম চিকিত্সা ছাড়াই আমার মৃত্যু প্রায় নিকটবর্তী। আমি অনুধাবন করছিলাম করুণ অবস্থা। হঠাত্ আমি একান্তর এবং আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণার কথা স্মরণ করি। তার পরে আমি (কোভিভ-১৯)-এর বিরুদ্ধে লড়াই করার দৃঢ় অঙ্গীকার করলাম এবং গবেষণা শুরু করলাম।

আমি লক্ষ করলাম যে ইতালিতে বাংলাদেশিরা আক্রান্ত হলেও তা ইতালীয়দের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম।

তার পরে আমি একটি উপসংহারে এলাম যে বাংলাদেশিরা প্রতিদিন তাদের খাবারের সঙ্গে মসলা ব্যবহার করে। ইতালিয়ান ও আমেরিকান জনগোষ্ঠী তদের খাবারের সঙ্গে মসলা সাধারণত ব্যবহার করে না। প্রায় ২০ বছর বাংলাদেশ ছাড়ার পরে আমার খাবারের সঙ্গে মসলা খাওয়ার অভ্যাস নেই।

আমি মসলার উপদানগুলো এবং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার সম্পর্কে অধ্যয়ন ও গবেষণা করার কথা চিন্তা করতে শুরু করি। এবং বুঝতে পারি আমার শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাংলাদেশের বাসিন্দাদের তুলনায় কম, কারণ দীর্ঘদিন ধরে আমি মসলা খাই না।

প্রাক্তন গবেষক এবং একজন শিক্ষত হিসেবে আমি আমার উদ্ভাবিত মসলা (প্রাকৃতিক মসলা) দিয়ে গরম পানীয় ও গরম বাষ্প নাক-মুখ দিয়ে নেওয়ার কারণে এবং লক্ষণগুলো অনুসারে ওষুধও গ্রহণ করেছি এবং আমি করোনা ভাইরাসজনিত মৃত্যুর ক্রিয়া থেকে বেঁচে গিয়েছি এবং এখনো আমি এই রেসিপি চালিয়ে যাচ্ছি।

অন্তত আমার বিশ্বাস যে এটি করোনা ভাইরাসের বিপর্যয় রোধে অসাধারণ কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে কাজ করে। এর সঙ্গে জ্বর, কাশি, হাঁচি ইত্যাদির জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অষুধ সেবন করবেন। তাহলেই করোনা ভাইরাসের আক্রমণ থেকে বেঁচে যাবেন। আমি যে পদ্ধতির কথা বলছি, তা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই উপাদানগুলো পৃথিবীর সর্বস্থানে পাওয়া যায়।

এ কথাও কিন্তু ঠিক, বাংলাদেশের জনগণ ঘনত্বের তুলনায় অনেক কম করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছে এবং মৃত্যুবরণ করছে।

আমি বলতে চাই যে আপনি কারোনা ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য আপনার অনাক্রম্যতা বিকাশ করতে পারেন। আপনার ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত লক্ষণগুলোর জন্য আপনি আপনার ওষুধের সঙ্গে গরম পানীয়টি পান করবেন এবং বাষ্প নেবেন। সুতরাং আপনি করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে যথেষ্ট সফল হবেন। এছাড়া যে ব্যক্তি এখনো আক্রান্ত হননি, তিনি পানীয় পান এবং বাষ্প নাক-মুখ দিয়ে নিয়ে এর সংক্রমণ রোধ করতে পারেন।

আমি এমন কিছু লোককে জানি, যারা এই গরম পানীয় পান করে, বাষ্প নাক-মুখ দিয়ে নিয়ে, ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত লক্ষণগুলোর জন্য ওষুধের সঙ্গে গরম পানীয় পান এবং বাষ্প নাক-মুখ দিয়ে নিয়ে ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে এর সংক্রমণ ও মৃত্যু রোধ করতে পেরেছে।

এখনো আমার আশা, বাংলাদেশের জনগণ ইতালি ও আমেরিকার মতো বিপর্যয়ের মুখোমুখি হবে না। এর অন্যতম কারণ কিন্তু মসলা। বিশেষ করে নিম্নলিখিত উপাদানগুলো আপনি ব্যবহার করতে পারেন :

হলুদ গুঁড়া (Turmeric Powder), গোলমরিচ গুঁড়া (Black pepper powder), আদা বাটা বা গুঁড়া (Ginger paste or powder), লেবুর রস (Lemon Juice)

পানি (Water)

পানি বাষ্পায়িত করার কিছু পদ্ধতি আছে। হলুদ গুঁড়া আধা চা-চামচ, আদা বাটা বা গুঁড়া আধা চা-চামচ, গোলমরিচের গুঁড়া আধা চা-চামচ, লেবুর রস আধা চা-চামচ ১ লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে পাঁচ মিনিট জ্বাল দেবেন, আপনার পানীয় ও বাষ্প তৈরি হয়ে যাবে।

চায়ের মতো পান করারও কিছু ব্যাপার-স্যাপার আছে। পানীয়টির সঙ্গে প্রয়োজনমতো স্বাদ বাড়ানোর জন্য পরিমাণমতো মধু মিশিয়ে নিতে পারেন এবং পান করবেন। প্রয়োজনবোধে স্বাদ বাড়ানোর জন্য পরিমাণমতো লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন এবং পান করবেন। প্রয়োজনবোধে পরিমাণ মতো চা মিশিয়ে নিতে পারেন। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে পানীয় প্রতিদিন তিন বা চার বার চায়ের মতো পান করতে পারেন।

এই পানীয়র রেসিপির সঙ্গে একটি মাঝারি আকারের তেজপাতা সংযুক্ত করে সেই পানীয় পান করলে আপনার ডায়াবেটিক রোগ নিয়ন্ত্রণ হতে সাহায্য করবে।

পানীয় জল আপনার এয়ারওয়েজ ও ফুসফুসকে আস্তরণের শ্লেষ্মা পাতলা করতে সহায়তা করে। সেই শ্লেষ্মা ঘন করতে এবং আঠালো হয়ে যেতে পারে, যা সামগ্রিক শ্বাসকষ্টকে ধীর করে দেয় এবং আপনাকে অসুস্থতা, অ্যালার্জি এবং অন্যান্য শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার জন্য আরো বেশি সংবেদনশীল করে তোলে {শরীরে শ্বাস নিতে জলের প্রয়োজন :ফুসফুসে ৮৫ শতাংশ জল থাকে অক্সিজেন (Oxygen) গ্রহণের জন্য এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্মূল করার জন্য আমাদের ফুসফুস অবশ্যই ক্রমাগত জল দিয়ে আর্দ্র করা উচিত}।

লেখক :গবেষক ও পরামর্শক

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন