একদিকে করোনা, অন্যদিকে বন্যা। এই নিয়ে এবার দেশবাসীর ঈদুল আজহা।
এ ব্যাপারে টেলিফোন ও ইমেইলে প্রাপ্ত পাঠকদের অভিমত আজ প্রকাশিত হলো।
আজকের রাত পোহালেই আগামীকাল মুসলমানদের দ্বিতীয় আনন্দ উত্সব ঈদুল আজহা। একদিকে করোনা পরিস্থিতি, অন্যদিকে বন্যা। এই দুই নিয়ে মানুষের মধ্যে এবার ঈদের আনন্দের রেশ নেই।
এই পরিস্থিতিতে রাজধানী থেকে গ্রামের বাড়ি ফিরছে কিছু মানুষ। শিকড়ের টানে যাচ্ছে স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে একসঙ্গে ঈদ আনন্দে থাকার উদ্দেশ্যে। কতটুকু সার্থক হবে তা একমাত্র বিধাতাই জানেন।
অ্যাডভোকেট মো. রবিউল হোসেন রবি
কাজীপাড়া, মিরপুর, ঢাকা
ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই আনন্দ। সেটা ঈদুল ফিতর হোক বা ঈদুল আজহা হোক। ঈদ আনন্দ পারস্পরিক ভালোবাসার ও ভাগাভাগির, যা মানুষকে উজ্জীবিত রাখে, প্রাণের স্পন্দন বাড়িয়ে দেয় বহু গুণ। পরিবারের গণ্ডি ছাড়িয়ে এর বিস্তৃতি বহুদূর। তবে এবছর ভয়, শঙ্কা ও সন্দেহ—এবারের দুই ঈদেরই অনিবার্য অনুষঙ্গ। এবারের ঈদুল আজহায় যুক্ত হয়েছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা। যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। কষ্টের ওপর কষ্ট, গরিবের দুঃখের দিনগুলো যেন কিছুতেই শেষ হতে চায় না। বিষণ্নতায় ভরা স্মরণীয় ঈদ। সবাই এ থেকে মুক্তি চায়; কিন্তু কীভাবে মুক্ত হবে কেউ জানে না। বিধাতা সবাইকে হেফাজত করুন এবং এ মহাসংকট থেকে উত্তরণের তৌফিক দান করুন।
মো. জিল্লুর রহমান
ব্যাংকার ও লেখক
সতিশ সরকার রোড,
গ্লোরিয়া, ঢাকা
দুর্যোগ পরিস্থিতিতে ঈদ উদ্যাপন বাঙালি মুসলমানদের জন্য নতুন কিছু নয়! বৃষ্টি-বর্ষণ তো মাঝেমধ্যেই, থইথই বন্যার কারণে নৌকায় দাঁড়িয়ে ঈদের নামাজ পড়ার নজিরও এদেশে রয়েছে। জীবনে টিকে থাকতে হলে সতর্কতা ও সাবধানতা জরুরি; কিন্তু খোদ জীবনকেই স্থবির করে যে সতর্কতা, তা আ্ত্তঘাতী হতে পারে। কারণ জীবন মানে সচলতা, স্থবিরতার অপর নাম মৃত্যু! আর কে না জানে, করোনা ও বন্যা দুটো একসঙ্গে মোকাবিলা মানেই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য।
বিলকিছ আক্তার
কাউনিয়া, রংপুর-৫৪৪০।
সর্বনাশা এই করোনা ও বন্যা সৃষ্ট অভাব আমাদের আবার স্মরণ করিয়ে দিল ‘সাধ্যের বাইরে যে সাধ তা কালে পূরণ হবার নয়, সাধ্যের মধ্যেই আছে সকল সত্য।’ আসুন সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বাঁচি। আর সেটাই হবে এই করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে আমাদের সবার ঈদের আনন্দ! সবাইকে আগাম ঈদের শুভেচ্ছা—ঈদ মোবারক।
মেনহাজুল ইসলাম তারেক
পার্বতীপুর, দিনাজপুর-৫২৫০।
ঈদ শব্দটি যেন আশ্চর্যজনক মনে হচ্ছে। করোনার মধ্যে এ বছর ঈদুল ফিতর তবুও আনন্দের সঙ্গে কাটালেও বন্যাকবলে ঈদুল আজহা দুঃস্বপ্নের মতো কাটবে। যেখানে আমাদের জীবন-জীবিকা ও স্বাস্থ্য হুমকির মুখে সেখানে আনন্দ শব্দটি একদমই বেমানান হয়ে পড়েছে। ঈদ, ঈদ... ঈদ ধ্বনি এবার শুনা যাবে না।
সিহা ফাতেমা হাসান
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, রংপুর।
দশম শ্রেণি
রংপুর জেলা।
একদিকে বন্যা দেশবাসীর কান্না। অন্য দিকে করোনা সেও তো পৃথিবী ছেড়ে যেতে চায় না। ঈদ মানে আনন্দ ঈদ মানে খুশি। ঈদের কাছে করোনা করেছে মাথা নত, তাই বাঙালি আজ করোনার সঙ্গে করেছে সমঝোতা।
মনোজ কুমার বিশ্বাস
বিশ্বাস ফার্মেসী, পার্বতীপুর, দিনাজপুর।
দেশের প্রায় সবকটি নদীর পানি বেড়ে বিপত্সীমা অতিক্রম করছে। চারদিকে বন্যার্তদের হাহাকার। পানিবন্দি বানভাসিদের দুঃখ-কষ্টের সীমা নেই। এবার ঈদুল আজহা আমাদের সবার জন্যই অন্য রকম।
সালেহা আফরিন বেবি
শিবগঞ্জ, সিলেট।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিরূপ প্রভাব বিরাজমান, কেননা একদিকে বন্যা আর অন্য দিকে করোনা, এ যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। কিছুদিনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা, যা পুরো মুসলিম উম্মাহ তথা বাংলাদেশের জন্য বড় ধর্মীয় উত্সব।
তবুও বাঙালি জাতি যেহেতু উত্সবপ্রিয় জাতি হিসেবে পরিচিত তাই এত সমস্যার মধ্যেও তারা তাদের নিজেদের আনন্দ ঠিকই খুঁজে নিয়ে উত্সব পালন করবে বলে আশা রাখি।
ফারজানা বিনতে মুরাদ ঈরা
যশোর
এবারের ঈদ এসেছে ভয়াবহ বন্যা ও করোনার কঠিন সময়ে। সারা পৃথিবী বদলে দিয়েছে করোনা ভাইরাস। সব কিছুতে এখন সাবধানতা আর সতর্কতা মুখ্য। করোনা ও বন্যা পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটে এই ঈদে অসুস্থ প্রতিযোগিতা কম হবে। বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে গরু কিংবা কার থেকে কে কত বড় গরু কিনলেন তা হবে না। অসুস্থ প্রতিযোগিতা দেখে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর মনে যে দহন সৃষ্টি হতো, তা কম হবে। এখন করোনা ও বন্যার কারণে মানুষের ঘরে ঘরে কষ্ট। খাদ্য ও জরুরি পণ্য নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে, তাই কোরবানির ত্যাগের মহিমায় নিজেদের জীবন আলোকিত করে ঈদ উত্সবের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে দেশের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পাশে এগিয়ে আসতে হবে বিত্তবানদের।
মো. সাইমুন, চন্দনাইশ
শিক্ষার্থী- সরকারি কমার্স কলেজ,
চট্টগ্রাম।
করোনা এবং বন্যা এই দুই দুর্যোগে মানুষের আর্থিক ও মানসিক অবস্থা বর্তমানে বেশ শোচনীয়। নিম্নবিত্ত এবং সিংহভাগ মধ্যবিত্তের জন্য এবার ঈদুল আজহার উত্সব তাই স্পষ্টতই দীর্ঘশ্বাসের বার্তাবাহক। কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা সঙ্কট ও গণপরিবহনে ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের ভিড় না থাকা এটারই সাক্ষী। কাজকর্ম অনেকটা স্বাভাবিক হলেও সর্বশেষ ঈদুল ফিতরের মতো এই ঈদের উত্সবও বিধিনিষেধের বেড়াজালে সীমিত হবে। বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষজন নিজেদের আঙিনায় ফেরার প্রহর গুণছে। আর সারাদেশের মানুষ দিন গুণছে করোনা মুক্ত নতুন ভোরের প্রত্যাশায়।
আবু ফারুক
বনরুপা পাড়া
সদর, বান্দরবান।
করোনার কারণে বহু মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তার ওপর বন্যার কারণে অনেকের বাসস্থান, কৃষিক্ষেত্র, গবাদিপশু ও মত্স্য চাষের ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যা ও ঈদকে ঘিরে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। সংক্রমণের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি পশুর হাট। তাই অনেকে ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশু কোরবানি দিতেও ভয় পাচ্ছেন। আশ্রয় কেন্দ্রে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে না পারায়, বন্যার কারণে সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে অনির্দিষ্ট কালের জন্য দৈনন্দিন জীবনযাপন মানুষের কাছে অসহনীয় হয়ে উঠছে। তাই করোনা ও বন্যায় মিশে মানুষের ঈদ আনন্দ একাকার হয়ে গেছে।
মোহাম্মদ শহীদউল্যা
হকভিলা,
মেরাদিয়া, ঢাকা।
মরণব্যাধি করোনা ভাইরাস চলাকালে অস্বাভাবিক বন্যা পরিস্থিতিতে এবং নদীভাঙন যেন মানুষের ‘গোদের ওপর বিষফোড়া’। ঈদে কেনাকাটা এবং বাড়ি যাওয়া স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হওয়া একটি দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। চলাচলের ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। জনগণের মধ্যে ঈদের আনন্দ আছে বলে মনে হয় না।
খন্দকার কামরুজ্জামান
৩৬৩/১০, উত্তর পীরেরবাগ
মিরপুর, ঢাকা।
করোনার অপ্রতিরোধ্য তাণ্ডবের মধ্যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় যখন মানুষ দিশেহারা তখন সামনে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। আর্থিক দৈন্যতার দরুণ উচ্চবিত্ত শ্রেণি ছাড়া আর সবার মনে ঈদুল আজহার উত্সব আনন্দের ছোঁয়া দিতে অপারগ। চলমান দুর্যোগে নিম্ন আয়ের ও কর্মহীন মানুষ সঞ্চয় ভেঙে জীবনের অনিবার্য প্রয়োজন মেটাচ্ছে। অনিশ্চিত অবস্থায় রয়েছে জীবন ও জীবিকার স্বাভাবিক ছন্দ। এমন ক্রান্তিলগ্নে পশু কোরবানির ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্যের অক্ষমতায় সিংহভাগ মানুষের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনের ব্যস্ততায় ফিরতে উদগ্রীব। সামর্থ্যবানদের অকৃত্রিম মানবিকতায় পবিত্র উত্সবের কিছুটা আনন্দের ভাগীদার হতে পারে অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী।
এ এফ এম সালাহউদ্দীন
বান্দরবান সদর, বান্দরবান পাবর্ত্য জেলা।
দেশের অনেক এলাকায় বন্যা চলছে, বন্যার কারণে বানভাসি মানুষ খুব কষ্টের মধ্যে আছে, এর মধ্যে মহামারি। এক দুর্বিষহ অবস্থা বানভাসী মানুষের। তাদের ঈদ নেই বললেই চলে। এবারের ঈদটি সবাই সচেতনতার মাধ্যমে কাটাবে এবং মানুষের সহায়তায় এগিয়ে আসবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার কাছে।
এস এম হূদয়,
ফ্রিল্যান্স সংবাদকর্মী, ঢাকা।
একদিকে করোনা অন্য দিকে বন্যা, প্রায় দেড় কোটি মানুষ কর্মহীন, জীবিকাহারা। রাজধানী ঢাকার আশপাশ বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। শরীয়তপুর, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রংপুর, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ সারা দেশের এক তৃতীয়াংশ, নিম্নাঞ্চল কম বেশি বন্যায়, পানির নিচে। ভানবাসিদের দুর্বিষহ পানিবন্দি জীবন। নদীভাঙনে তীরবর্তী, রাস্তাঘাট, আউস ফসল, ঘড়-বাড়ি, নদীগর্বে বিলীন হয়ে নদী পাড়ের মানুষ দিশেহারা। এবারের ঈদ উত্সব হবে হাসি-কান্নার। সবকিছু মিলে যাবে না ভালো।
জিয়াউল হক সরকার,
পূবাইল,গাজীপুর।
দেশের অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল কম বেশি বন্যায়, পানির নিচে। দেশে করোনা শনাক্ত ২ লাখ ২৫ হাজার, মৃত্যু ৩ হাজার, আতঙ্কে জনজীবন। মানুষের কাছে নাই টাকা পয়সা, ঈদ উত্সব ভালো যাবে না।
কাউছার সরকার,
আনুসরকারের কান্দী, সখীপুর, শরীয়তপুর।
আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজধানী থেকে গ্রামের উদ্দেশে ফিরতে শুরু করেছে কিছু মানুষ। মহামারির প্রভাবে মানুষের কোরবানি দেওয়ার আর্থিক সংগতি এবার কমে গেছে। যার যার সামর্থ্য অনুযায়ী কোরবানির পশু এবার কিনছে।
যেহেতু মানুষের মনে এবার সুখ নেই। করোনা মহামারিতে ও দেশে বন্যা পরিস্থিতিতে মানুষের আর্থিক অবস্থা এখন আর আগের মতো নাই। সব মিলিয়ে ঈদ যেন এবার ম্লান হয়ে পড়েছে।
মো. খায়রুল ইসলাম (ফুল)
আরাপপুর, ঝিনাইদহ
স্বাভাবিক সময়ে ঈদের আগে বাড়ি ফেরার প্রবল প্রতিযোগিতা থাকলেও এবার পরিস্থিতি ভিন্ন রকম। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাড়ি ফেরা নিয়ে সবাই চিন্তিত। যার কারণে এবার বাস, রেল স্টেশনে কাউন্টারে টিকিট পেতে তোড়জোড় নেই। ভিড়ও নেই।
মানুষের এখন চোখে-মুখে কষ্ট রয়েছে। একদিকে মহামারি করোনা, অন্যদিকে বন্যা। এই দুইয়ের মধ্যে ঈদ আনন্দ এবার অন্যরকম হবে।
বজলুল
ধানমন্ডি, ঢাকা