বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বন্যার বহুমাত্রিক প্রভাব ও প্রতিকার: চাই সস্মিলিত প্রচেষ্টা

আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২০, ১০:৪১

বাংলাদেশ নদী বিধৌত সমতল ব-দ্বীপ অঞ্চল। দেশের প্রায় ২৫০টির মত নদী জালের মত জড়িয়ে রেখেছে প্রিয় বাংলাদেশকে।ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বাংলাদেশ প্রায়ই নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি দারিদ্রতা ও অভাবের মত বন্যাও যেন এদেশের মানুষের কাছে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায় প্রতিবছর নিম্নাঞ্চলের মানুষকে বন্যার সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। দেশের বৃহৎ নদীগুলো পাহাড়ি বৃষ্টিপাত ও হিমালয়ের বরফ গলা পানি বয়ে এনে প্রায় প্রতিবছরই বন্যা ঘটায়। নিরীহ মানুষগুলোর জীবন করে তোলে যন্ত্রণাময়। বন্যা বাংলাদেশের জন্য অনেকটা অভিশাপস্বরূপ। প্রতিবছর বন্যা দেশের মানুষের প্রাণহানি ও ধন সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি  করে থাকে। পৃথিবীর মোট ভৌগোলিক অঞ্চলের ৩.৫ শতাংশ বন্যাপ্রবণ এলাকা। অন্যদিকে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৬.৫ শতাংশ মানুষ বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে বসবাস করে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে স্মরণকালের বড় বন্যাগুলো হয়েছিল  যথাক্রমে ১৯৭৪ সালে ১৯৭৭ সালে ১৯৮০ সালে১৯৮৭ সালে ১৯৮৮ সালে ১৯৮৯ সালে ২০০৪ সালে ২০০৭ সালে। তবে ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালের বন্যায় দেশে  ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। সে বন্যায় দেশের অধিকাংশ অঞ্চল ডুবে গিয়েছিল। অনেক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মারা যায়। রাস্তা-ঘাটের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। প্রকট খাদ্য সংকট সৃষ্টি হয়েছিলো। এদিকে ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় থেকে সৃষ্ট বন্যা সাম্প্রতিককালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় মৌসুমী বন্যা দেখা দেয়। এতে কয়েক লক্ষ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ব্যাপক ক্ষতি হয় গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের। অনেকের ফসলিজমি ও বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

এবার আসা যাক এবারের বন্যার কথায়। বন্যায় দেশের প্রায় ৩০টি জেলা কমবেশী প্লাবিত। মানুষ এখন আর শুধু ঘরবন্দী নয় পানি বন্দী হয়ে নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। করোনা সংকটের মধ্যে এ বন্যা যেন মরার উপর খাঁরার ঘা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশ এমনিতেই এক চরম ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। যুদ্ধ করছে এক অদৃশ্য শত্রু করোনার বিরুদ্ধে। আক্রান্ত ও নিহত মানুষের মিছিল দিনদিন লম্বা হচ্ছে। করোনার প্রভাবে দেশের অর্থনীতি নাজুক। কল-কারখানায় উৎপাদন কমেছে। বহুমানুষ চাকুরি হারিয়ে গ্রামে ফিরে গেছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে পেশা বদলের চিন্তায় নিমগ্ন কর্মহারা মানুষগুলো। মধ্যবিত্ত বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গবীব আরো গরীব হচ্ছে। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা অনেকটায় স্থবির। বন্যা এসব সংকটকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

পদ্মা-মেঘনা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার ফলে দেশে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উজান থেকে নেমে আসা পানির আধিক্য এবং অতিবৃষ্টিই বন্যার মূল কারণ। বন্যা শুধু মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তা কিন্ত নয়, গোটা দেশের অর্থনীতিকেই বিপর্যস্ত করে ফেলে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনও কৃষিনির্ভর। বন্যায় সেই কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। গ্রামীণ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশে গ্রামে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
তাদের অধিকাংশই আবার দিন আনে দিন খায়। বন্যায় রাস্তাঘাট সবকিছু ডুবে যায় বলে তাদের রোজগারের পথ অনেকটায় বন্ধ হয়ে যায়। ফলে বন্যা কবলিত এলাকায় খাদ্যের অভাবে মানুষগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হয়। বন্যার করালগ্রাসে মানুষের ঘরবাড়ি, কৃষি জমি, বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বহু মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়ে। এবারের বন্যার প্রভাবও তার ব্যতিক্রম নয়। বহুমানুষ ইতোমধ্যে তাদের সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব। ফসল হারিয়ে বাকরুদ্ধ। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য চিন্তিত। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। সরকারের আয়ের একটি বড় অংশ আসে কৃষি থেকে। কিন্তু প্রতিবছর বন্যার কারণে ফসলের উৎপাদন ব্যহত হয়। ফলে প্রিয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় যা দেশের সার্বিক উন্নয়নের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বন্যার ফলে দেশে প্রতিবছর নানা প্রজাতির কৃষিজফসল নষ্ট হয। এতে খাদ্য সংকট দেখা দেয়। দেশের খাদ্য চাহিদা মেটাতে অনেক সময় বাইরের দেশগুলো থেকে খাদ্য আমদানি করতে হয়। অর্থনীতির উপর চাপ পড়ে।

বাংলাদেশের ভূ-প্রাকৃতিক গঠন বন্যার প্রধানতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনাসহ বিভিন্ন নদীগুলো বাংলাদেশকে আড়াআড়িভাবে অতিক্রম করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। বর্ষাকালে নদীগুলোর পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে বন্যার সৃষ্টি করে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ঢালু। আবার প্রতিবছরই বিভিন্ন কারণে নদী সমুহের গভীরতা কমে যাচ্ছে। এতে বাড়তি পানি নিষ্কাশনের সুযোগ দিনদিন কমে যাচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত পানি বন্যার সৃষ্টি করে থাকে। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর উত্তরে হিমালয় পর্বত অবস্থিত। তাই ভূ-প্রাকৃতিক কারণে বাংলাদেশ বৃষ্টিবহুল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়। বাংলাদেশে অবস্থিত নানা ধরনের বিল, হাওর, জলাশয় ও নদীসমুহ বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ করে থাকে যা পরবর্তীতে শুষ্কমৌসুমে সেচ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু নদীবাহিত পলি জমে এসব জলাশয় ও নদ-নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানি ধারণ ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ফলে অতিরিক্ত পানি নদীর চারপাশের সমতলভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে প্লাবনের সৃষ্টি করছে। বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমে প্রবাহিত হয় বলে দক্ষিণমুখী নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হয়। একইসাথে প্রবল বৃষ্টির ফলে বঙ্গোপসাগরের পানি বৃদ্ধি পায়। এই অতিরিক্ত পানির স্রোত আবার দেশের অভ্যন্তরে আসে। ফলে অতিরিক্ত পানি আটকে থেকে বন্যার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে হিমালয় পর্বতে জমে থাকা বরফ সূর্যের তাপে গলতে থাকে। এই বরফ গলা পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করে অনেক সময় বন্যার সৃষ্টি করে থাকে।

শুধুমাত্র প্রকৃতিগত কারণেই দেশে বন্যা হয়ে থাকে তা কিন্ত নয়। মনুষ্যসৃষ্ট কারণসমূহের কারণেও দেশে বন্যা হয়ে থাকে। প্রশাসনের নাকের ডগায় ক্ষমতাশালী মানুষগুলো দেশের খাল-বিল ছোট ছোট নদী-নালা, পুকুর-ডোবা ভরাট করে নানা স্থাপনা গড়ে তুলেছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থার অভাবে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি উপচে পড়ে বন্যা ঘটাচ্ছে। এই ঢাকা শহরের কথায় ধরা যাক। মেগাসিটি ঢাকার মধ্যদিয়ে প্রবাহমান প্রায় সকল খাল, নদী-নালা, পুকুর-ডোবা ভুমিদশ্যুরা ভরাট করে বহুতল বিশিষ্ট অট্রালিকা নির্মাণ করেছে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শিতলক্ষা  দখলে-ভরাটে শীর্ণকায় নালায় পরিনত হয়েছে। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই তিলোত্তমা ঢাকা বন্যার রূপ ধারণ করে ব্যাপক জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে থাকে। দেখার যেন কেউ নেই। ওয়াসার নজিরবিহীন ব্যর্থতা নগরবাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। এছাড়া নদীর উপর নির্মিত অবকাঠামো মানুষের সুবিধার পাশাপাশি কখনো কখনো অসুবিধাও সৃষ্টি করে থাকে। নদীর উপর ব্রিজ, কালভার্ট, জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করার ফলে এগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়।

দেশে বন্যার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো বনাঞ্চল ধ্বংস করা। বনাঞ্চল ধ্বংস করার ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে আমাদের প্রকৃতি ও জীববৈচিত্রের উপর। অতিমুনাফার লোভে আমরা নির্বিচারে বনাঞ্চল উজার করে ফেলেছি। শিল্প-কারখানা থেকে নিঃশৃত কার্বণ পরিবেশ ও প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতি সাধন করলেও আমরা নির্বিকার থেকেছি। বন উজার করে নিত্য নতুন ইটভাটা তৈরি করেছি। যা আমাদের প্রকৃতি ও জলবায়ু পরিবর্তন করে কখনো অনাবৃষ্টি কখনো অতিবৃষ্টি বন্যার সৃষ্টি করছে।

এছাড়া পার্শ্ববর্তী ভারতের তৈরি ফারাক্কা বাঁধের কু-প্রভাবে দেশ প্রতিবছর আকষ্মিক বন্যায় প্লাবিত হয়ে থাকে। খরামৌসুমে বন্ধুরাষ্ট ভারত ফারাক্কা বাঁধের প্রতিটি দরজা বন্ধ করে বাংলাদেশকে মরুভূমিতে পরিনত করার প্রয়াসে লিপ্ত থাকলেও বর্ষা মৌসুমে সম্পুর্ণ নিজেদের স্বার্থে বাঁধের সবকটা দরজা খুলে দিয়ে দেশে অপ্রত্যাশিত বন্যা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই ফারাক্কা বাঁধকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বন্যার কারণ বলা হয়ে থাকে। যা আমাদের জন্য অভিশাপ। এছাড়া শুধু ফারাক্কা বাঁধই নয় ভারত তিস্তাসহ প্রায় সবকটি নদীর উজানে তাদের সীমান্তে একতরফাভাবে বাঁধ নির্মাণ করে খরামৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের মরুকরণে ভূমিকা রাখলেও বর্ষা মৌসুমে পানি ছেড়ে প্রতিবছর ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। কিন্ত সমাধান আমাদের হাতে নেই।

যেহেতু বন্যার সাথেই আমাদের বসবাস। তাই বন্যা প্রতিরোধে আমরা কিছু স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারি। যেমন নদীর গতিপথ পরিষ্কারের জন্য উন্নত প্রযুক্তিতে ড্রেজিং করে নদীর গতিপথে জমে থাকা পলি অপসারন করতে পারি। এতে করে নদীসমুহের পানি ধারনক্ষমতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

যেসব হাওর বিল ভরাট হয়ে গেছে সেগুলো দখলমুক্ত করে পুনঃখনণের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। দখল হয়ে যাওয়া অসংখ্য নদী দখলমুক্ত করে নদীর দুইপাড়ে স্থায়ী বনাঞ্চল তৈরি করা যেতে পারে। এতে করে একদিকে যেমন নদীসমুহ পাড়ভেঙ্গে মাটিতে ভরাট হওয়ার হাত থেকে নদী রক্ষা পাবে অন্যদিকে নদীর  গভীরতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। আর নদী ভরাট করে যেসব অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে বা ভরাটের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে তা অনতিবিলম্বে অপসারণ করে নদীকে তার স্বাভাবিক অবস্থায়  ফিরে আনার উদ্যোগ গ্রহণ এখন আর স্লোগান নয় সময়ের দাবি। এছাড়া অবকাঠামো নির্মাণে সর্তকতা অবলমাবন করতে হবে। নদীর উপর রাস্তা-ঘাট ব্রীজ-কালভার্ট  এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে সেগুলো নদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করতে না পারে। নদীর পাড়ে ব্যাপকভাবে সামাজিক বনায়ন করা হলে নদী ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভবপর হবে।

উপরোক্ত উপায়ে কেবলমাত্র বন্যার ভয়াবহ কমানো যেতে পারে মাত্র কিন্তু স্থায়ীভাবে তা বন্ধ করা যাবে না। কাজেই বন্যা পরবর্তী পুর্নবাসনে বিভিন্ন ধরণের প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আশুপ্রয়োজন। যেমন :

(ক) পানিবন্দি মানুষের বাসস্থানের সুবিধা প্রদানের জন্য দেশের বন্যাকবলিত এলাকায় পর্যাপ্ত সংখ্যক আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা যেতে পারে। যাতে তারা বন্যাকালে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে পায়।

(খ) বন্যা কবলিত মানুষদের খাদ্য-পানীয় সরবাহ নিশ্চতে কার্যকরি সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে খাদ্য সাহায়্য প্রদানের উদ্যোগ বৃদ্ধি ও তা চলমান রাখা অতীব জরুরী। 

(গ) বন্যার পানি নেমে গেলে মানুষ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হতে পারে। অতীত অভিজ্ঞতাও সেটাই বলে। তাই আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে সার্বিক প্রস্ততি গ্রহণ এখনই করতে হবে। স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে প্রয়োজনীয় ঔষাদিসহ প্রস্তত করে রাখতে হবে। যদিও করোনাকলে স্থাস্থ্যবিভাগের বেহালদশা দেশবাসীকে চরম হতাশ করেছে। ক্ষুব্ধ করেছে। স্থাস্থ্যখাতের অনিয়ম-দুর্নীতি দেশ বিদেশে দেশের ভাবমূর্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। জাতি হিসেবে আমাদেরকে লজ্জিত করেছে। অপমানিত করেছে।

(ঘ) বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের নানা ধরনের প্রকল্পের আওতায় এনে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেন্জ। তাই বন্যার পর ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুণর্বাসনে সহজশর্তে সার,বীজ, কীটনাশক সরবরাহ করতে হবে। নাম মাত্র সুদে বা বিনা সুদে কৃষিঋন প্রদানের উদ্যোগ হতে পারে দেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে মাইলফলক। 

একটা কথা সবসময় মনে রাখতে হবে, কৃষক বাঁচলে দেশের কৃষি বাঁচবে। আর কৃষি বাঁচলে দেশের অর্থনীতি বাঁচবে। আমরা বাঁচবো। তাই দেশের অর্থনীতির স্বার্থে দেশের কৃষিকে বাঁচাতে সরকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। আর যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপাদন করে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদেরকে বহুবিদ প্রণোদনা দিয়ে তাদের স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিশ্চিত করতে হবে। খেটে খাওয়া কৃষকের চাহিদা কিন্ত খুবই নগন্য। তারা চায় শুধু তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মুল্য। দুঃজনক হলেও সত্য, আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা সময়ে সময়ে কৃষকের এই অতিসামান্য চাহিদাটুকুই মিটাতে পারে না কিছু অতিলোভি মুনাফাখোর মানুষদের জন্য। যেমন এবারও চামড়া সিন্ডিকেটের কারণে এতিমের হক চামড়ার মুল্যে ভাগ বসিয়েছে একশ্রেনীর মুনাফাখোর মানুষ। করনো মহামারিও এদেরকে মানুষ করতে পারেনি। দুর্নীতি-অনিয়ম থেকে এদেরকে বিরত রাখতে পাররেনি।

বন্যা বাংলাদেশের মানুষের কাছে নতুন কোন বিষয় নয়। নানা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মত এই ঘাতক বন্যা দেশের মানুষের কাছে চিরায়িত সংস্কৃতির এক অভিন্ন অংশে পরিণত হয়েছে। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এটি বন্ধ করা আমাদের পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়। তারপরও বন্যার ক্ষতিকর প্রভাব যতটুকু পারা যায় ততটুকু কমানোর চেষ্টা করা উচিত। এ জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

লেখক: প্রফেসর ড. মোহা. হাছানাত আলী, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

ইত্তেফাক/বিএএফ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন