শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাইডেন ও মার্কিন গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ

আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২০, ০৯:০৫

আলেক্সি ডি টকভিল (১৮০৫-১৮৫৯) মার্কিন গণতন্ত্রের একজন প্রতিষ্ঠিত ভাষ্যকার। তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ডেমোক্রেসি ইন আমেরিকা’র প্রথম ভাগ প্রকাশিত হয় ১৮৩৫ সালে। সেখানে তিনি মার্কিন গণতন্ত্রের গতি-প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করেন। 

তিনি দেখান যে, বিভিন্ন দেশ ও জাতির অভিবাসীর সমন্বয়ে মার্কিন গণতন্ত্রে সমতা ও সর্বজনীনতা প্রাধান্য পেয়েছে। এটি ইউরোপে ক্রমশ বিকশিত গণতন্ত্র থেকে ভিন্নতর।

এ ধরনের নতুন সমাজের জন্য গণতন্ত্রই ছিল জুতসই কার্যব্যবস্থা। বিস্ময়ের ব্যাপার, ঐ গ্রন্থে টকভিল তার নিজ দেশ ফ্রান্সসহ ইউরোপে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এই গ্রন্থে গণতন্ত্রের সার্থকতার শর্ত হিসেবে তিনি নাগরিক বহুত্ববাদকে প্রাধান্য দেন। 

আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ড শহরে তিনি গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। জনগণের সার্বভৌমত্বই যে রাষ্ট্রক্ষমতার উত্স, তিনি তার এ গবেষণা দ্বারা তা প্রমাণ করেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ওপরও তিনি গুরুত্বারোপ করেন। প্রাতিষ্ঠানিকতার মাধ্যমে তিনি নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের পরামর্শ দেন। নির্বাচনকে তিনি সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেন। এর মাধ্যমে দায়িত্বশীল নাগরিকতা এবং যৌক্তিক দেশপ্রেমের বিকাশ ঘটবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার রক্ষাকবচ হিসেবে তিনি নাগরিক স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে আরো ভালোভাবে অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। 

তিনি মনে করেন, গণতান্ত্রিক সমাজের সার্থকতা নির্ভর করে অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক চর্চায়। তিনি ধর্মকে মূল্যবোধের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। কিন্তু একই সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয় ধর্মের ব্যবহার নিরুত্সাহিত করেন। সেকালে ইউরোপ থেকে নানা ধর্মের নাগরিকগণ আমেরিকায় বসবাসের জন্য যায়। তাদের মধ্যে বিভাজন এড়াতেই তিনি সম্ভবত এ পরামর্শ দিয়ে থাকবেন। টকভিল তার এসব রাজনৈতিক বিশ্লেষণের চেয়ে সুদূরপ্রসারী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সমাজতাত্ত্বিক বিষয়াবলির প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। সমাজতাত্ত্বিক ও মনস্তাত্ত্বিক যেসব কারণ মানুষকে বিভক্ত করে, সেই বিভাজন দূর করতে সমাজতাত্ত্বিক কার্যব্যবস্থাকে তিনি শ্রেয় মনে করেন।

তিনি বলেন ‘সন্দেহ নাই যে, গণতন্ত্র সর্বাধিক মানুষের জন্য সর্বাধিক সুখ নিশ্চিত করে।’ এই সুখের মাত্রা নিয়ে গরিব, মধ্যবিত্ত ও অভিজাতদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, গণতন্ত্রে সবচেয়ে যারা শক্তিমান শুধু তারাই শাসন করেন না, ‘সকলের তরে সকলে আমরা’ বিষয়টি প্রাধান্য পায়। তবে এখানে বিপদের বিষয় হচ্ছে ‘টাইরানি অব দ্য মেজরিটি’ বা সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বৈরাচার বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি গরিষ্ঠ মতের নিবর্তন সম্পর্কেও সতর্ক করেন।

আলেক্সি ডি টকভিল মার্কিন গণতন্ত্র সম্পর্কে আজ থেকে ১৮৫ বছর আগে যে আশা-আশঙ্কার কথা লিপিবদ্ধ করেছেন তা যেন আজকের কথা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা পুরুষরা এর বিশালত্ব, বিভাজন ও বৈচিত্র্যের কারণে এমন এক সংবিধান তৈরি করেন, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এসব সমস্যাকে ধারণ, সংরক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকে বলা হয় সর্বশ্রেষ্ঠ লিখিত সংবিধান। যুক্তরাজ্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু যেসব সমস্যা যুক্তরাজ্যের শাসনব্যবস্থাকে কখনো কখনো প্রশ্নের সম্মুখীন করেছে সেসব সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে সুলিখিত ও সুনির্দিষ্টকরণকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান নির্মাতারা সতর্ক থাকেন। 

মার্কিন সংবিধানের বড় বৈশিষ্ট্য হলো ‘বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যসাধন’। যুক্তরাষ্ট্র কাঠামোর ক্ষেত্রে মার্কিন সংবিধানকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বা ক্ষমতার ভারসাম্য বিধান হচ্ছে মার্কিন সংবিধানের তাত্পর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। শত শত বছর ধরে সংবিধানটি অনুসৃত হওয়ার কারণে এটি প্রতিষ্ঠানিকতা অর্জন করেছে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মতো মার্কিন সংবিধান যখন-তখন সংশোধন করা যায় না। সংবিধানকে যখন সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয়—এই দুই বিভাজনে ভাগ করা হয়, তখন বলা হয় মার্কিন সংবিধান হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্পরিবর্তনীয় সংবিধান। আর গণতন্ত্র হচ্ছে এর প্রাণ। 

প্রেসিডেন্ট যাতে একনায়কসুলভ আচরণ না করতে পারেন, সেজন্য বিচার বিভাগকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট কর্তৃক প্রণীত যে কোনো আইন অধ্যাদেশ ও বিধান সুপ্রিম কোর্টে আপিলযোগ্য। সেই সঙ্গে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার রশি টেনে ধরার জন্য ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে মার্কিন কংগ্রেসকে। মার্কিন উচ্চপরিষদকে বলা হয় ‘সিনেট’। আর নিম্নপরিষদকে বলা হয় ‘হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ’। তাদেরও রয়েছে নিজস্ব পৃথক পৃথক ক্ষমতা। সংবিধানের আর্টিকেল-১ ও সেকশন-১-এ বলা হয়েছে ‘সকল আইনগত ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে নিহিত।’ 

প্রেসিডেন্ট-প্রদত্ত যে কোনো নিয়োগ ও তার বিবিধ কার্যাবলি সিনেট ও ‘হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভ’ দ্বারা বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রিত। অন্তর্ভুক্ত ৫০টি ‘এস্টেট’ বা রাজ্যের রয়েছে নিজস্ব স্বকীয়তা। প্রতিটি রাজ্যের নির্ধারিত নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতে। আবার নাগরিক সাধারণেরও প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। এভাবে অঞ্চল ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়েছে। এসব করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ও জনপ্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নয়। একটি নির্দিষ্ট ইলেকটোরাল কলেজ বা নির্বাচকমণ্ডলীর প্রতিনিধিত্ব দ্বারা। বিষয়টি কিছুটা জটিল প্রকৃতির।

এবারের নির্বাচন থেকে এই জটিল প্রকৃতির কিছুটা আঁচ পাওয়া গেছে। যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিধর রাষ্ট্র, সেহেতু এই নির্বাচনের প্রতি বিশেষ আগ্রহ বিশ্ববাসীর। একক পরাশক্তি হিসেবে পৃথিবীর শান্তি ও স্থিতিশীলতা নির্ভর করে মার্কিন নেতৃত্বের ওপর। মার্কিন নেতৃত্ব যদি হয় শান্তিবাদী, তাহলে পৃথিবীর চিত্র হবে একরকম। আবার তিনি যদি হন হস্তক্ষেপপ্রবণ তাহলে পৃথিবী অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। 

উড্রো উইলসনকে মনে করা হয় আমেরিকার সবচেয়ে শান্তিবাদী প্রেসিডেন্ট (১৯১৩-১৯২১)। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ অবসানে ও জাতিসংঘ গঠনে তিনি বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। আরেকজন শান্তিবাদী প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ড। ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের সময়ে সরাসরি হস্তক্ষেপে বিরত থাকেন। তার এই ভূমিকার জন্য দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হন। উল্লেখ্য যে, মার্কিন সংবিধানে পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়ন ও প্রয়োগে যতটা ক্ষমতা ভোগ করেন ততটা ভোগ করেন না অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে। মার্কিন অঙ্গরাজ্যগুলো অনেকটাই স্বশাসিত। 

অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে কংগ্রেস প্রেসিডেন্টের চেয়েও বেশি ক্রিয়াশীল। সংবিধান কর্তৃক গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতার সীমারেখা নির্ণীত হওয়ার কারণে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও বিরোধ সীমাবদ্ধ। যখনই ক্ষমতার সীমারেখার ক্ষেত্রে বা গণতান্ত্রিক বিধিবিধান কার্যকর করার ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘিত হয় তখনই বিরোধ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই ধরনের বিরোধ নিরসনের সক্ষমতা সংবিধান, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও নেতৃত্বের রয়েছে।

এক্ষেত্রে বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি ব্যতিক্রম। বিগত চার বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তার ভূমিকার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বজনীন ও সমানাধিকারের নীতির ব্যতিক্রম ঘটে। তিনি মূল মার্কিন নাগরিক ও অভিবাসীদের মধ্যে বিরাজমান চিরাচরিত ঐক্য ও সংহতির বদলে ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বলা হয় অভিবাসীদের রাষ্ট্র। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে সমবেত হয়েছে মানুষ। সাম্প্রতিক কালে অভিবাসীদের ক্রমবর্ধমান অবস্থান গোড়া শ্বেতকায়দের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দীর্ঘকাল থেকে গড়ে ওঠা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জাতীয়তা ও দেশপ্রেমের আদর্শ ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে ওঠে। 

দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প তার যাপিত জীবনের মাধ্যমে যা প্রদর্শন করেছেন তা গণতন্ত্র নয় বরং অন্যকিছু। তার বক্তৃতার ভাষা, মানুষের প্রতি আচরণ এমনকি সমগ্র মার্কিন জনগণের প্রতি তার আহ্বানে এটা কখনোই প্রমাণিত হয়নি যে, তিনি জীবনাচরণে গণতন্ত্রকে ধারণ করেন। অন্যদিকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জীবনাদর্শে ও শাসনব্যবস্থায় যে গণতন্ত্রকে পথনির্দেশনা হিসেবে গ্রহণ করেছেন তা স্পষ্ট। তবে ট্রাম্প যে ক্ষত সৃষ্টি করেছেন তা সুচিকিত্সা করতে অনেকদিন সময় লাগবে। 

তৃতীয়ত, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নাগরিক সুবিধার কথা বলেছেন তা দৃশ্যত অন্যায় কিছু নয়। কিন্তু এর মাধ্যমে অভিবাসী জনগণ, ধর্মীয় গোষ্ঠী, ব্যবসায়ী সম্প্রদায় তথা গোটা বিশ্বের সেবার পরিবর্তে যে বিরূপতা সৃষ্টি হয়েছে তা অগ্রহণযোগ্য। 

পঞ্চমত, দীর্ঘকাল ধরে একই ধারায় পরিচালিত হয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র নীতি। কিন্তু ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে পৃথিবীব্যাপী মার্কিন সহায়তা যেভাবে হ্রাস করেন তা সেবার মানসিকতার পরিবর্তে শক্তি প্রয়োগের মানসিকতার প্রমাণ দেয়। জলবায়ু পরিবর্তনে বৈশ্বিক সহায়তা এবং অবশেষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সদস্যপদ প্রত্যাহার করে ট্রাম্প সংকীর্ণতার পরিচয় দিয়েছেন। 

ষষ্ঠত, বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও মার্কিন মিত্রদের প্রতি তিনি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে ব্যয় হ্রাসের চাপ দিয়েছেন তা ন্যাটোকে খাটো করেছে। ইউরোপের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মনে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

প্তমত, কূটনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে তিনি যে শক্তি প্রয়োগের কৌশল অবলম্বন করেছেন তা শান্তির পরিবর্তে স্থায়ী উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। ইরান তার উজ্জ্বল উদাহরণ। 

অষ্টমত, ঐক্যের বদলে বিভেদ সৃষ্টি করে তিনি আরব বিশ্বকে বিভক্ত করেছেন। নবমত, খাশোগি হত্যা মামলায় সৌদি যুবরাজকে প্রশ্রয় দিয়ে তিনি ন্যায়ের ব্যতিক্রম করেছেন। দশমত এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি গণতন্ত্রের অপরিহার্য শর্ত ভঙ্গ করেছে, তা হচ্ছে নির্বাচনে গণরায়কে অস্বীকার করা। তৃতীয় বিশ্বে যে মামলার মানসিকতা অহরহ লক্ষ করা যায়, তা ট্রাম্পকে পেয়ে বসেছে।

লেখক :অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ,

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন