শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পররাষ্ট্রবিষয়ক স্বপ্নের টিম বানালেন বাইডেন

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২০, ০৫:০৭

জো বাইডেনের কাছে সহযোগিতাপূর্ণ ও সম্মানজনকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে ট্রাম্প অবশেষে অনিচ্ছা সত্ত্বেও এগিয়ে এসেছেন। আর মানুষ বিস্ময়ের সঙ্গে এটাও দেখতে পাচ্ছে, ট্রাম্পের বিদায়ী প্রশাসন কীভাবে আসন্ন নতুন সরকারের পক্ষে আসতে পারে।

তবে ট্রাম্প যেভাবে মামলা-মোকদ্দমায় হেরে যাচ্ছেন এবং এর বিপরীতে বাইডেনের পক্ষে যেভাবে কয়েক মিলিয়ন ভোট বেড়েছে, এই অবস্থায় মার্কিন নির্বাচনের পরাজিত ব্যক্তি কোন বিষয়ে কী বলতে চাইছেন, সে ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে এখন আর আমি সত্যিই বিশেষ ভাবতে চাই না। আমি বরং মনোযোগ দিতে চাই আমেরিকার ফ্যাসিবাদের ব্যাপারে। ফ্যাসিবাদ যেভাবে আমেরিকার অন্দরে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছে, তার বিপরীতে আমরা আরো ভালো একটি পথরেখা কীভাবে তৈরি করতে পারি, আমি সেদিকে মনোনিবেশ করতে চাই।

এটা বলা হচ্ছে যে, আমেরিকান গণতন্ত্রের পথে ট্রাম্প নামের কাঁটা এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি। ইতিমধ্যে এমন কথাও শোনা গেছে, ২০২৪ সালে ট্রাম্প আবারও প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হয়ে লড়তে পারেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই বাস্তবতা আমি অস্বীকার করতে পারি না। এবং এটাও শোনা যাচ্ছে যে, বাইডেনের অভিষেকের দিনেই একটি সমাবেশের মাধ্যমে ট্রাম্পের এটি ঘোষণা করার পরিকল্পনা আছে।

উদ্বেগের বিষয় হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রবেশযোগ্য রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা বিষয়াদি সুরক্ষার ব্যাপারেও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যে ট্রাম্পের বিপুল ঋণ বকেয়া রয়েছে। এমনকি ট্রাম্পের কাছে ইতিমধ্যে রাষ্ট্রীয় গোপনীয় যেসব বিষয়ের প্রবেশাধিকার রয়েছে, তা ফাঁস হলে কিংবা বিক্রি করা হলে ব্যাপারটি আমেরিকার জন্য ধ্বংসাত্মক হতে পারে।

এর সঙ্গে এই খবরও যুক্ত করা যেতে পারে যে, এনবিসি নিউজে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্টরা অফিস ছাড়ার পরেও কিছু পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়ে সাধারণত তাদের অবহিত করা হয়ে থাকে। ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সির চার বছরে এটা প্রমাণ করেছেন যে, তিনি একরকম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই বিপজ্জনকভাবে বেপরোয়া এবং বিস্ময়করভাবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সমর্থনকারী।

এনবিসি নিউজ এ ব্যাপারে বলেছে যে, রাষ্ট্রের গোপনীয় ‘ক্লাসিফায়েড তথ্য’ এখন ঋণভারে ন্যুব্জ প্রেসিডেন্টের জন্য একটি ‘মুনাফাকেন্দ্র’ হিসেবে প্রতিভাত হতে পারে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস সম্প্রতি এই খবর প্রকাশ করেছে যে, ব্যক্তিগত গ্যারান্টার হিসেবে ট্রাম্প তার ব্যবসার কাজে ৪২১ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছেন। ফোর্বসের তদন্তে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, ট্রাম্পের কাছে ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি অর্থ পাওনা থাকতে পারে।

স্পষ্টতই এটা অনুধাবন করে আমরা বিস্মিত হচ্ছি যে, ট্রাম্পের আগামী পদক্ষেপগুলো কীভাবে আমেরিকা ও বিশ্বকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে এই আঁধারের মাঝেও এখন যে বিষয়গুলো আমার মনে এক অভাবিত আশার আলো সঞ্চারিত করছে, তার একটি হচ্ছে বাইডেন এবং তার দল আমেরিকান রাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনার ব্যবস্থা নিচ্ছে। অথবা তারা যুক্তরাষ্ট্রকে সেই স্বর্ণালি সময়ে ফিরিয়ে নেবেন, যেই আমেরিকাকে এই বিশ্ব চেনে এবং ভালোবাসে।

আমার মনে হয়েছে, গত সপ্তাহের শুরুতে এই বার্তাই নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার মূল মন্ত্রীপরিষদ এবং জাতীয় সুরক্ষার দিকটি প্রকাশ করার সময় বিশ্বকে জানিয়েছেন। বাইডেন এনবিসি নিউজের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘আমরা আবারও শীর্ষে যাচ্ছি। আমেরিকা বিশ্বে তার ভূমিকা পুনরায় প্রকাশ এবং একটি জোট নির্মাণ করতে চলেছে।’

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহ্যবাহী মিত্রদের বেশির ভাগ দেশের জন্য এটি একটি সুসংবাদ হবে, যাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ও অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পদ্ধতির সঙ্গে গত চার বছর ধরে লড়াই করেছিলেন।

এ মাসের শুরুর দিকে বাইডেন যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন, তখন এই দেশগুলোর মধ্যে আশাবাদ ও স্বস্তির বাতাবরণ তৈরি হয়। জলবায়ুর জন্য প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত হিসেবে সাবেক সেক্রেটারি অব স্টেট জন কেরি এবং সেক্রেটারি অব স্টেট হিসেবে অ্যান্টনি ব্লিংকেনের কথাই ধরা যাক। তারা বহু বছরের অভিজ্ঞ। আশা করা যায়, তারা আমেরিকাকে আরো সুবিবেচিত ও বহুপক্ষীয় পথে ফিরিয়ে আনবেন।

ক্যালিফোর্নিয়ার খ্যাতিমান অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর এবং ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক চেয়ারপার্সন জেনেট ইয়েলেনকে জো বাইডেন ট্রেজারি সেক্রেটারি হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি এই পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রথম কোনো নারী কর্মকর্তা হতে যাচ্ছেন।

বিদেশি রাষ্ট্রের সরকারগুলো জানতে পারছে যে, সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং সেই সময়কার প্রশাসন থেকে বাইডেনের টিম বেছে নেওয়া হচ্ছে। দৃশ্যত ইউরোপীয় মিত্ররাও ব্লিংকেন এবং জাতীয় সুরক্ষা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানকে বেছে নেওয়ার বিষয়ে বিশেষভাবে উত্সাহী। কারণ ইউরোপীয় বিভিন্ন কর্মকর্তা এবং সাবেক মার্কিন কূটনীতিকদের কাছে তারা যোগ্য ও অভিজ্ঞ হিসেবে পরিচিত।

বাইডেন তার ক্যাবিনেট সেই সব ব্যক্তিকে দিয়ে সাজাচ্ছেন, যারা আমেরিকাকে পুরোনো ঐতিহ্যে ফিরিয়ে নেবেন। একই সঙ্গে এই বার্তা স্পষ্ট করা হচ্ছে যে, আমেরিকান প্রশাসন অভিজ্ঞদের দ্বারাই পরিচালিত হওয়ার পুরোনো ধারায় ফিরে যাচ্ছে। আমেরিকার মিত্রসহ দেশটির জনগণের কাছে বাইডেন বিষয়টি নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছেন যে, আগামী চার বছর আমেরিকা পরিচালিত হবে সবচাইতে অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের মাধ্যমেই। স্পষ্টতই, এই সংকটের মুহূর্তে আমেরিকাকে দেশটির নিরাপদ হাতগুলোর ছায়াতেই রাখা হচ্ছে।

অনুবাদ :তাপস কুমার দত্ত

ইত্তেফাক/এএইচপি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন