শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জামায়াতে নতুন আমির শফিকুর রহমান

আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০১৯, ০০:১৮

ডা. শফিকুর রহমান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নতুন আমীর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। সংগঠনের সদস্যদের (রুকন) প্রত্যক্ষ ভোটে তিনি নির্বাচিত হন। এর আগে তিনি দলের সেক্রেটারি জেলারেল ছিলেন।

 

মঙ্গলবার জামায়াতের ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেছে। গত ১৭ বছর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।দলের সর্বোচ্চ সংখ্যক রোকনের (সদস্য) ভোট পেয়েছেন শফিকুর রহমান। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে দলটি।

 

অধ্যাপক গোলাম আযম, মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী এবং মকবুল আহমাদের পর জামায়াতের চতুর্থ আমির হলেন শফিকুর রহমান। তিনি আমির পদে শপথ নেওয়ার পর দলের মজলিসে শূরার পরামর্শে সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

 

জামায়াত সূত্রের খবর- দলটির সেক্রেটারি জেনারেল হতে পারেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি এর আগে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেছেন।

 

২০১০ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে নিজামীকে গ্রেপ্তারের পর ওই বছরের ৩০ জুন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির হন মকবুল আহমাদ। যুদ্ধাপরাধের দায়ে নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর ২০১৬ সালের ১৬ অক্টোবর আমির নির্বাচিত হন তিনি। গত সেপ্টেম্বরে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসরের ইচ্ছার কথা জানিয়ে তাকে আর আমির পদে বিবেচনা না করতে অনুরোধ জানান।

 

গত মাসে জামায়াতের মজলিসে শূরা দলের আমির নির্বাচন করতে প্যানেল গঠন করে। সেখানে শফিকুর রহমান ছাড়া জামায়াতের দুই নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান ও মিয়া গোলাম পরওয়ারেরও নাম ছিল। দলটির ৪৫ হাজার রোকনের বেশিরভাগ শফিকুর রহমানকে বেছে নেন। তবে তিনি কত ভোট পেয়েছেন তা জানানো হয়নি।

 

জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, আমির নির্বাচনের পর দলের মজলিসে শূরা নির্বাচিত হবে। গঠন করা হবে নতুন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ এবং সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদ।শফিকুর রহমান ২০১৬ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মনোনিত হন। তিনি ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নে ঢাকা-১৫ আসন থেকে অংশ নিয়ে হেরে যান। তার দায়িত্ব নেওয়ার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মের হাতে জামায়াতের নেতৃত্ব যাচ্ছে। ১৯৫৮ সালে জন্ম নেওয়া শফিকুর রহমান ১৯৮৫ সালে জামায়াতে যোগ দেন। তিনি নতুন নামে দল গঠনে জামায়াত যে কমিটি করেছে তার নেতৃত্বেও রয়েছেন।

 

ডা. শফিকুর রহমান ১৯৫৮ সালের ৩১ অক্টোবর মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মরহুম আবরু মিঞা ও মাতার নাম মরহুমা খাতিবুন নেসা। তার  বর্তমান ঠিকানা সিলেট মহানগরীর শাহপরান থানার সবুজবাগ এলাকায়। তিনি ১৯৮৩ সালে সিলেট মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। তিনি ছাত্র জীবনে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সিলেট শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য হন। ১৯৮৬ সাল থেকে ৮৮ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা শাখা জামায়াতের সেক্রেটারি ও ১৯৮৯ থেকে ৯১ পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর এবং ১৯৯১ থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত সিলেট জেলা জামায়াতের আমীর, ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সিলেট মহানগরী জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আরো পড়ুন : হাসপাতালে শিশু মহিমা, সারিতে মায়ের লাশ

তিনি ১৯৯৮ সালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মনোনীত হন। ২০১০ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, ২০১১ সাল থেকে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ও ২০১৭ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করছেন।

 

শফিকুর রহমান একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান, একটি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান এবং একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

 

তিনি সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, গ্রীস, বেলজিয়াম, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, আরব আমিরাত, ফিলিপাইন, ব্রুনেই প্রভৃতি দেশ ভ্রমণ করেছেন।

 

তিনি ২ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক। তার স্ত্রী ডা. আমিনা শফিক ৮ম জাতীয় সংসদের সদস্য ছিলেন। তার ২ মেয়ে চিকিৎসা শাস্ত্রে উচ্চতর শিক্ষা নিয়েছেন এবং একমাত্র ছেলে এমবিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র।

 

ইত্তেফাক/ইউবি