বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘খালেদা জিয়ার সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার’

আপডেট : ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯, ২০:১৩

গত ২৫ দিন যাবৎ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার স্বজনদের দেখা করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

রিজভীর অভিযোগ, তার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিতে দেশনেত্রীর ভাই-বোন-স্বজনরা সাক্ষাৎ করার আবেদন করলেও কারা কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনার নির্দেশে অনুমতি দিচ্ছেন না। গত ২৫ দিন হলো দেশনেত্রীর সঙ্গে তার স্বজনদের সাক্ষাৎ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। গত ১৩ নভেম্বরের পর আর সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। ফলে দেশনেত্রীকে নিয়ে আমরা চরম শঙ্কা ও উৎকন্ঠায় আছি। একজন বন্দির সঙ্গে স্বজনদের দেখা করতে না দেওয়া এক চরম মানসিক নিপীড়ন।

আজ রবিবার বিকাল ৪টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কোনো নিষ্ঠুর স্বৈরতান্ত্রিক দেশেও বন্দিদের সঙ্গে এরুপ দুর্ব্যবহার করা হয় না, যা করা হচ্ছে বেগম জিয়ার ওপর। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে সাক্ষাতের জন্য বারবার আবেদন করার পরেও কারা কর্তৃপক্ষ তাতে কোনো কর্ণপাতই করেননি। কারাবিধি অনুযায়ী ৭ দিন পরপর বন্দিদের সঙ্গে সাক্ষাতের নিয়ম। অথচ বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে এই বিধান করা হলো ১৫ দিন পরপর। এখন সেই ১৫ দিনের বিধানকেও সরকারের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ অগ্রাহ্য করছে কারাবিধি লঙ্ঘন করে। সরকার কর্তৃক সকল ন্যায়সঙ্গত অধিকার থেকে বেগম জিয়ার ওপর বঞ্চনার পরিমাণ দিনকে দিন ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করছে। এই কদর্য মানসিক নির্যাতনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে দুর্বল ও বিপন্ন করা। এই অমানবিক আচরণে দেশের জনগণ ক্ষুব্ধ। এ নিয়ে শুধু তার আত্মীয়-স্বজনরাই নয়, দেশ-বিদেশের মানুষ উদ্বেগাকুল ও উৎকণ্ঠিত। অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার আত্মীয়-স্বজনদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

রিজভী বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার শারিরীক অবস্থা চরম আকার ধারণ করেছে। এই মুহূর্তে কারামুক্ত হয়ে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ না করলে জীবনহানির ঝুঁকি রয়েছে। সুচিকিৎসার অভাবে তার অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। শেখ হাসিনা ও তার পারিষদবর্গ বেগম খালেদা জিয়ার অবনতিশীল শারিরীক অবস্থা নিয়ে রীতিমত রসিকতা করছেন। এই রসিকতা এক নিষ্ঠুর মানসিক বিকারগ্রস্ততার লক্ষণ। বেগম জিয়ার জামিন যেন না হয় সেজন্য সরকার প্রধান নিজেই প্রকাশ্যে সমাবেশে রায় ঘোষণা করছেন। এতে করে এই মিডনাইট সরকারের ভয়ংকর অশুভ ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আমরা বর্তমানে তার শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চরম আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছি।রিজভী বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন, সরকারের কারসাজিতেই বেগম জিয়ার জামিন নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম, নিম্ন আদালতে বিচারের নামে বেগম জিয়া অবিচারের শিকার হলেও উচ্চ আদালতে তিনি সুবিচার পাবেন। আমরা বিশ্বাস করতে চেয়েছিলাম, উচ্চ আদালতের বিচারকরা দেশের সংবিধান, আইন সর্বোপরি নিজেদের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবেন। জনগণ যেন হতাশ না হয় সেদিকে উচ্চ আদালতের সম্মানিত বিচারকবৃন্দ খেয়াল রাখবেন। কর্তৃত্ববাদী দুর্বিনীত শাসনের প্রকোপে জনগণের মধ্যে বিচার ব্যবস্থা যেন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে না ওঠে, সেদিকেও তাদের দৃষ্টি রাখতে হবে।নিম্ন আদালতের বিচারকদের মতো নয়, বরং উচ্চ আদালতকে ন্যায়বিচার অক্ষুন্ন রাখতে হবে, তা না হলে মধ্যরাতের নির্বাচনের সরকার বেগম জিয়ার জামিনে বাধা দিতে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। যদি খালেদা জিয়া বারবার অবিচারের শিকার না হন, সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব উচ্চ আদালতের।

তিনি বলেন, আইনগত এবং মানবিক সবদিক থেকেই বেগম খালেদা জিয়া জামিন পাওয়ার আইনগত অধিকার রাখেন। অথচ দেশের জনগণ দেখছে, নানা অজুহাতে বেগম খালেদা জিয়ার জামিন পেতে নানা রকমের অজুহাত তুলে প্রলম্বিত করা হচ্ছে তার বন্দি জীবন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, কারাবন্দি খালেদা জিয়া রাজার হালেই আছেন এবং ভাল আছেন, সেখানে সবকিছু পরিস্কার হয়ে যায় যে, বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলকারী সম্রাজ্ঞীর হালে থাকা সরকারপ্রধানের অভিপ্রায়টি কি?

আরও পড়ুন: রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ সম্পাদক আব্দুল ওয়াদুদ

রিজভী বলেন, তাকে বাঁচাতে হলে এখনই জামিন ও সুচিকিৎসা দরকার। তাই আমরা জনগণের পক্ষ থেকে সরকারকে বলতে চাই-বেগম জিয়ার জামিন নিয়ে এবার কোনো রকমের টালবাহানা করে জামিনে কোনো বাধা দিবেন না। আপনাদের সব গণভিত্তি কর্পুরের মতো উবে গেছে। শেখ হাসিনার স্বনির্মিত দুঃশাসনের শৃঙ্খল থেকে জনগণকে মুক্ত করতে হবে। মানুষের ক্ষোভ ও বঞ্চনা সংহত করে তা আন্দোলনে রুপদান করতে জনগণ রাজপথে নামতে শুরু করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস-চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মকর্তা রেজাউল করিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ইত্তেফাক/কেকে