শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এক দফার আন্দোলনে যাচ্ছে বিএনপি

আপডেট : ১০ ডিসেম্বর ২০১৯, ১০:০১

বিএনপির নজর এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দিকে। আগামী বৃহস্পতিবার সেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জামিন শুনানি হবে। তার জামিন হবে কি হবে না, তার ওপর ভিত্তি করে পরিকল্পনা তৈরি করছেন দলের নীতিনির্ধারকগণ। দলের স্থায়ী কমিটির এক জরুরি বৈঠকে নেতারা এই মর্মে একমত হয়েছেন যে, প্রায় দুই বছর ধরে কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসনের জামিন না হলে এক দফা আন্দোলনে যাবেন তারা। নেতারা বলছেন, বেগম জিয়ার মুক্তি ইস্যুতে কঠোর আন্দোলনে যেতে দীর্ঘদিন তৃণমূলের চাপে রয়েছেন তারা। তাই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে সারা দেশের জেলা ও মহানগর নেতাদের বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী গত কয়েকদিন ধরে জেলায় জেলায় নেতারা প্রস্তুতিমূলক বৈঠকও করছেন বলে জানা গেছে। তৃণমূলের সঙ্গে সমন্বয়ের জন্য কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কমিটির এক জন সদস্য ইত্তেফাককে বলেন, ১২ ডিসেম্বর বেগম জিয়ার জামিন ইস্যুতে আমরা গত বৃহস্পতিবার আলোচনা করেছি। জামিন না হলে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে আগামী বৃহস্পতিবারের পরে। দলের সংসদ সদস্যদেরকে সংসদ থেকে পদত্যাগ করতে বলা হবে। তবে আমাদের কিছু কৌশল আছে। সেই কৌশল এখন আমরা জানাতে চাই না।

দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল জাসাস নেতাদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারতের পর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা মাজারে ফুল দিয়ে শপথ নিয়েছি, বেগম জিয়া ও দেশের গণতন্ত্র মুক্তির জন্য লড়াই জোরদার করব।’ তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আদালতে তার জামিন শুনানি আছে। সরকার যদি আদালতকে ব্যবহার করে তার জামিন আটকে দেয়, তাহলে রাজপথেই এর সমাধান হবে। মানুষ তখন সরকার পতনের আন্দোলনকে বেছে নিতে বাধ্য হবে। আমরা আশা করি আদালতে বেগম জিয়া বয়স, অসুস্থতাসহ সব বিবেচনায় ন্যায় বিচার পাবেন। এ মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা না গেলে তার জীবনশঙ্কা রয়েছে। দিন দিন মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন। সুতরাং আমাদের যা করণীয় আমরা করব।

স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, আমরা যদি দেখি বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার জামিন হয়নি, তা হলে এ দেশে এক দফার আন্দোলন হবে। আর তা হবে সরকার পতনের আন্দোলন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালত, আপিল বিভাগ ও বিএসএমএমইউ এক কাছে যদি সুবিচার না পাই, তাহলে এই সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প নাই। আর এই পতন ঘটিয়েই আমাদের নেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। সেজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

এদিকে দলের সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে রাজপথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে নারী শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত আলোচনা সভায় গয়েশ্বর রায় বলেন, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে যদি আমরা পার্লামেন্টে যোগ দিয়ে থাকি, তাহলে আজকে আমাদের দায়িত্ব সর্ব প্রথম পার্লামেন্ট থেকে পদত্যাগ করে জনগণের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামা। আমরা পার্লামেন্টে থাকব, আবার সরকারের পতন চাইব, এটা জনগণ পছন্দ করবে না।

দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গতকাল এক আলোচনা সভায় বলেন, ‘এক দফা আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। খালেদা জিয়াকে চিকিত্সাবিহীন রেখে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে, তা জাতীয়তাবাদী শক্তি হিসেবে আমরা মেনে নিতে পারি না। আমাদের ঝুঁকি নিতেই হবে।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ১২ ডিসেম্বর খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে বুঝতে হবে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের কারণে হয়নি। যদি তাই হয়, তাহলে ১২ ডিসেম্বরের পর এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। গতকাল নাটোরে বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচিতে বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এদিকে গতকাল বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা সারাদেশের আদালত চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে বিক্ষোভ শেষে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে সমাবেশে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়া ন্যায়বিচার না পেলে আইনজীবীরাও বসে থাকবে না, রাজপথে নামবে। এদিকে বিএনপি নেতারা জানান, রাজপথের যে কোনো আন্দোলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০-দলীয় জোটের শরিকদের পাশে রাখবে দলটি। এই আন্দোলনে তাদেরকেও সম্পৃক্ত করতে চায় বিএনপি। ইতিমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক জন সদস্য দুই জোটের একাধিক শরিকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।

ইত্তেফাক/আরকেজি