বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্রচলিত পন্থায় সরকারের ঘোষিত কর্মসংস্থানের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়

আপডেট : ২২ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০২

বাংলাদেশে বর্তমান কর্মসংস্থানের প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এ গতিতে এগুলে ২০৩০ সাল নাগাদ সরকার ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে। সরকার যুব উন্নয়নকে জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম এজেন্ডা হিসেবে ঘোষণা করেছে। কিন্তু প্রচলিত পন্থায় সরকারের ঘোষিত কর্মসংস্থানের লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়।

মঙ্গলবার গুলশানের একটি মিলনায়তনে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সংলাপে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে ‘প্রান্তিক যুব সমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিষেবার ভূমিকা’ শীর্ষক এই সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. মুজিবুল হক এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক এমপি। সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। সংলাপে আরো বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা, বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সভাপতি বাবুল আক্তার, ইউসেফ বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক তাহসিনা আহমেদ, জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (জেসিআই) সভাপতি সারাহ কামাল, বিডি জবসের প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি ও উন্নয়ন কর্মীরা।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম উল্লেখ করেন, জাতীয় যুব নীতিতে বর্ণিত ১৬টি ক্যাটাগরির প্রান্তিক গোষ্ঠীর মধ্যে চার ধরনের মানুষের ওপর জরিপ চালানো হয়। এক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ে সমতলের ‘আদিবাসী’, শহরের বস্তিবাসী, মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও সিলেটে অবস্থানরত শহুরে যুবগোষ্ঠীর ৩৩৩ জনকে বেছে নেওয়া হয়। গবেষণায় অংশ নেওয়াদের ৬০ শতাংশ মনে করেন, গ্রামীণ প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো কেবল নামেমাত্র দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে ঠিক মতো প্রশিক্ষণের ক্লাস হয় না, ভালো প্রশিক্ষক নেই। শিক্ষায় সরকার অনেক সাফল্য অর্জন করলেও প্রান্তিক যুবকেরা এর সুফল পুরোপুরি পায়নি। তিনি বলেন, সমতলের ‘আদিবাসী’ ও সিলেট অঞ্চলের শহুরে যুবগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ শতাংশ মনে করেন তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অর্ধেক জাতীয় মানের নিচে রয়েছে। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা মনে করেন, তাদের বিজ্ঞান, গণিত বিষয়ের শিক্ষকের অভাব রয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে সিপিডির চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, দেশের অর্থনীতিতে যে ধরনের জনশক্তির চাহিদা রয়েছে, সে ধরনের জনশক্তির সরবরাহ নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, চাকরিপ্রার্থীর রাজনৈতিক পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা কোনোভাবেই কাম্য নয়। দক্ষ ও যোগ্য জনশক্তি বাছাইয়ের জন্য সমাজে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বাংলাদেশ শূন্য থেকে শুরু করে এখন অনেক উন্নতি করেছে। কাজেই ধীরে ধীরে আমরা অন্য লক্ষ্যগুলোও অর্জনে সক্ষম হবো। নাহিম রাজ্জাক প্রচলিত শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, অনেকে এমএ পাস করার পরও একটি রচনা সঠিকভাবে লিখতে পারে না। আমাদের অর্থনীতি যেহেতু বেসরকারি খাত নির্ভর, তাই বেসরকারি খাত দক্ষ জনশক্তি তৈরির কোর্স কারিকুলাম তৈরিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শিক্ষা ব্যবস্থার ত্রুটির বিষয়ে জোর সমালোচনা করেন সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শিক্ষাখাতে জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ১ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ দেয়। এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম। শিক্ষার মানের বিষয়ে তিনি বলেন, হজার হাজার শিক্ষার্থী জিপিএি-৫ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারে না। এমন মানহীন শিক্ষা দিয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি সম্ভব নয়। তিনি কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর জোর দেন। সারাহ কামাল বলেন, আদের শিক্ষা অনেকটাই সার্টিফিকেট নির্ভর। কর্মমুখী শিক্ষায় তেমন জোর দেওয়া হয় না। যা বেকারত্ব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাবুল আক্তার বলেন, দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরতদের ৮০ শতাংশই যুবশ্রেণির। কিন্তু তাদের মধ্যে দক্ষতার বেশ ঘাটতি রয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত গাইবান্ধার যুবক সুমন খন্দকার বলেন, তাদের গ্রামের কয়েকজন একটি সরকারি প্রশিক্ষণে গেলেও সেখানে তিন দিনের বেশি ক্লাস হয়নি। ঐ প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক সরকার ঘোষিত এক লাখ টাকার ঋণ নিতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছিল। হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য ঝুমা বলেন, সরকার তাদেরকে স্বীকৃতি দিলেও যেই উদ্দেশ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে সেটা পূর্ণ হয়। হিজড়াদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি।

ইত্তেফাক/আরকেজি