শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতারাই সবসময় অভিযুক্ত হয়

আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০৯:৫৪

বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ ক্যাম্পাসে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের অভিযোগ নতুন নয়। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তখন সেই দলের ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগগুলো ওঠে। তারা এতটাই বেপরোয়া থাকেন যে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে—এমনটি তারা মনে করেন না। সর্বশেষ সিলেটের এমসি কলেজে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ছয় জনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।

নারী নেত্রী খুশি কবীর ইত্তেফাককে বলেন, ‘এসব ধর্ষণ বা গণধর্ষণের ঘটনাগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাশালীরা জড়িত থাকায় তাদের বিচার হয় না। আবার অনেক সময় পুলিশ এসব ক্ষমতাশালীদের গ্রেফতারও করে না। আমি তাদের কথা বলছি, যারা রাজনৈতিকভাবে বা আর্থিকভাবে ক্ষমতাশালী। কেউ কেউ গ্রেফতার হলেও তারা আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে। ফলে এই অপরাধীদের বিরুদ্ধে সমাজে খুব ভালো বার্তা যাচ্ছে না। এই কারণে এদের থামানোও যাচ্ছে না। এই অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অবশ্যই অপরাধ কমে যাবে।’

সিলেটের এমসি কলেজের ঘটনার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অধিকার সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন ও যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এক ছাত্রী। এই ধর্ষণের অভিযোগ দিয়েও বিচার না পাওয়ায় সদ্য সাবেক ভিপি নূরুল হক নুরকেও আসামি করেন এই ছাত্রী। এই ঘটনায় দুটি মামলা হলেও পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করেনি। ওই ছাত্রী শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, তিনি বিচার না পেলে আত্মহত্যা করবেন।

১৯৯৩ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের এক ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ করেন ছাত্রদল নেতা সীমান্ত, মিতুল ও জাপানসহ কয়েকজন। পরিসংখ্যান বিভাগের সামনের জঙ্গলের মধ্যে তারা গণধর্ষণ করে। ঘটনার পর তত্কালীন তথ্যমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে যান এবং ছাত্রীর বাবাকে ডেকে সমঝোতা করে দেন। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যান; আর কোনো দিন তিনি ক্যাম্পাসে ফেরেননি। এমনকি ছাত্রীর বাবাও কাঁদতে কাঁদতে ক্যাম্পাস চত্বর ছাড়েন। এই ঘটনার পর ১৯৯৫ সালে পরিসংখ্যান বিভাগের এক ছাত্রীকে অর্থনীতি বিভাগের সামনে থেকে প্রকাশ্যে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে আগে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা সীমান্ত। এই ঘটনায়ও সীমান্তের কোনো বিচার হয়নি।

আরও পড়ুন: ১০ গুণ বেশি দামে কেনা হয় যন্ত্রপাতি

১৯৯৮ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনায় দেশের সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তাল হয়ে ওঠে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের তত্কালীন সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন মানিকের ধর্ষণের সেঞ্চুরির স্বঘোষিত ঘোষণায় সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। এই মানিক বিএনপি আমলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। সেসময় প্রায় ছয় মাস বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ থাকে। ঘটনার পর ছাত্রলীগের অনেক নেতাকেই বহিষ্কার করা হয়। আন্দোলনের একপর্যায়ে মানিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। এরপর আর মানিককে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার বন্ধু মহলের অনেকেই দাবি করেছেন, ২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারি ইতালিতে হার্ট এটাকে মানিক মারা গেছেন।

এরপর ২০০০ সালে থার্টি ফাস্ট নাইটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বাঁধন নামে এক ছাত্রীকে লাঞ্ছিত করা হয়। তখনও ক্ষমতাসীন ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে তাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর থেকেই থার্টি ফাস্ট নাইটে ছাত্রীদের হলের বাইরে আসা বন্ধ করা হয়। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও কোনো তরুণীকে থার্টি ফাস্টের প্রোগ্রামে অংশ নিতে দেওয়া হয় না।

২০১৭ সালে মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের তত্কালীন ছাত্রলীগ সভাপতি এইচ এম জাহিদ মাহমুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ তোলেন ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমাতুজ জোহরা। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী জাহিদ ছাড়াও মুজিবুর রহমান অনিকসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন।

ইত্তেফাক/এএএম