শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাসে অগ্নিসংযোগের অপরাধীদের আড়ালকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া জনগণের দাবি: তথ্যমন্ত্রী 

আপডেট : ২২ নভেম্বর ২০২০, ২১:১৯

'বাসে অগ্নিসংযোগের অপরাধীদের আড়ালকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া জনগণের দাবি' বলেছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ।

রবিবার (২২ নভেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সভাকক্ষ থেকে অনলাইনে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় থেকে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্যদের মাঝে 'বকনা বাছুর' বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যশেষে সাংবাদিকদেরকে তিনি একথা জানান। রাঙ্গুনিয়ার ইউএনও মো: মাসুদুর রহমান, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মুহাম্মদ মুস্তাফা কামাল প্রমুখ এসময় রাঙ্গুনিয়া প্রান্তে সংযুক্ত ছিলেন। 

তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'গত ১২ নভেম্বর হঠাৎ করে গাড়িতে আগুন দেয়া হলো এবং ২০১৩, ১৪, ১৫ সালে যেভাবে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল ঠিক একইভাবে এই ন্যক্কারজনক কাজটির পর আরেকটি ন্যক্কারজনক কাজ করা হয়েছে, সেটি হচ্ছে এটিকে অস্বীকার করা।'

'এই অপরাধীদের খুঁজে বের করার পর সেটা যদি বিএনপির দলীয় কেউ হয়, তাদের বিরুদ্ধে  দলগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, সেই কথা না বলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবসহ বিএনপির সমস্ত ঊর্ধ্বতন নেতারা এটি নিয়ে প্রচণ্ড মিথ্যাচার করেছেন, এটিকে অস্বীকার করেছেন' উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, 'মিথ্যাচার করে বিএনপি তাদের দলের মধ্যে যেসমস্ত দুষ্কৃতিকারী আছে তাদেরকে আড়াল করার চেষ্টা করেছেন। যে দুষ্কৃতিকারীরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তারা যেমন অপরাধী, যারা এ নিয়ে মিথ্যাচার করে এই দুষ্কৃতিকারীদের আড়াল করার চেষ্টা করেছেন তারা এবং যারা এই ক্ষেত্রে মদদ ও অর্থ দিয়েছেন তারাও আইনের চোখে অপরাধী।' 

ড. হাছান বলেন, 'আপনারা জানেন, ইতোমধ্যে ভিডিও ফুটেজ দেখে অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অতি সম্প্রতি যুবদল, ছাত্রদলের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বনানীতে কোথায় বসে এই পরিকল্পনা হয়, কোথা থেকে অর্থ এসেছে সেগুলো তারা স্বীকার করেছে।' 'এই স্বীকারোক্তির পর মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব কি বলবেন' প্রশ্ন রাখেন তথ্যমন্ত্রী।

জনগণের দাবির কথা উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, 'যারা বাসে আগুন দিয়েছে, পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করেছে, তারা যেমন অপরাধী, এই ঘটনা নিয়ে যারা মিথ্যাচার করে তাদেরকে আড়াল করে অপরাধীদের রক্ষার অপচেষ্টা চালিয়েছেন তারাও সমভাবে অপরাধী, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে জনগণের দাবি।'

'স্বাধীনতার ইতিহাস নতুন প্রজন্ম জানছে বলেই বিএনপির গাত্রদাহ'

সাংবাদিকরা এসময় মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্য 'স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে' এর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মন্ত্রী বলেন,  '১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর ২১ বছর ধরে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। স্বাধীনতার খলনায়ককে নায়ক বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। ঠিক তেমনিভাবে স্কুলের দপ্তরীকে হেডমাস্টার বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাধীনতার এই বিকৃত ইতিহাস নতুন প্রজন্মের কাছে পরিবেশন করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে।'

'এরপর ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা স্বাধীনতার মহানায়ক বাংলাদেশের মহান স্থপতি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার সুযোগ্যকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণের রায় নিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়ার পর সেই বিকৃতির গতি বন্ধ হয়েছিল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে সেটির সংশোধন সম্ভবপর হয়েছিল' বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। 

'২০০১ সালের পর আবারও স্বাধীনতার ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'শুধু বিকৃত করাই নয়, টেলিভিশনের অনেক ফুটেজ ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। রেডিও-টেলিভিশনে সংরক্ষিত আর্কাইভ থেকে প্রায় সমস্ত জিনিস ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে, যাতে এই সত্যগুলো পরবর্তী প্রজন্ম না জানে। এরপরও কিছু কিছু থেকে গেছে। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতার সঠিক ইতিহাস ধীরে ধীরে দেশের জনগণ ও নতুন প্রজন্ম জানছে বিধায় মির্জা ফখরুল সাহেব ও বিএনপির গাত্রদাহ শুরু হয়েছে। যে দলের নেতারা দুর্নীতি আর খুনের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর জন্মদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে পালন করে, তাদের রাজনৈতিক দৈন্য সেই জায়গায় গেছে, এ কারণেই তাদের এই গাত্রদাহ।'

এসময় বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মন্তব্য 'দেশে গণতন্ত্র নেই, আছে শেখ হাসিনার শাসনতন্ত্র' এর জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'গয়েশ্বর বাবু যে সকালে একবার, বিকেলে আবার আওয়ামী লীগ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন, এটিই প্রমাণ করে দেশে গণতন্ত্র আছে। দেশে গণতন্ত্র হরণ করে বন্দুক উঁচিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান। আর যখন ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করে বঙ্গবন্ধুর খুনীকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা বানীয়ে গাড়িতে পতাকা লাগিয়ে দেয়া হয়েছিল, তখনও গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছিল।'

'দেশে গণতন্ত্র আছে, এই গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করার ক্রমাগত অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি' বলেন ড. হাছান মাহমুদ। 

সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, জাতীয় সম্প্রচার আইন ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে আছে, খুব শীঘ্রই এটা শেষে মন্ত্রিসভা হয়ে পার্লামেন্টে যাবে।

টাকা পাচারের বিচার প্রসঙ্গে হাইকোর্টের নির্দেশনাকে দুর্নীতি দমনের ক্ষেত্রে এবং যারা টাকা পাচার করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে এটি সহায়ক উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, 'এই রায়ের জন্য হাইকোর্টকে আমি ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।' 

ইত্তেফাক/এমএএম