অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা কাজী আনিসুর রহমানের প্রায় শত কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আদালতের নির্দেশে গতকাল সোমবার অবৈধ সম্পদ মামলার তদন্তে উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান এসব সম্পদ জব্দ করেন। তিনি বর্তমানে পলাতক আছেন।
জব্দকৃত সম্পদের মধ্যে রয়েছে রাজধানীর কলাবাগানে পাঁচ তলা বাড়ি, ধানমন্ডি ও ওয়ারীতে দুটি ফ্ল্যাট, এলিফ্যান্ট রোডের মালটিপ্ল্যানে তিনটি দোকান ও ১৩ স্কয়ার ফুট বাণিজ্যিক স্পেস এবং গুলশান-২ এলাকার একটি মার্কেটে দুটি দোকান, রাজধানীর বাইরে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের বোয়ালিয়ায় বিলাসবহুল বাড়ি, একটি পেট্রোল পাম্প, ৩০ কোটি টাকার ১৫ বিঘা জমি ও কেরানীগঞ্জে ৪০ কাঠা জমি রয়েছে।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের ছেলে কাজী আনিস ২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় অফিসে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ শুরু করেন। যুবলীগের নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা সৃষ্টির মাধ্যমে ২০১২ সালে তিনি যুবলীগের উপদপ্তর সম্পাদকের পদ বাগিয়ে নেন। ঐ কমিটির দপ্তর সম্পাদকের পদটি খালি থাকায় ছয় মাসের মধ্যে তাকে ঐ পদ দেওয়া হয়। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি আনিসকে।
সম্পদ জব্দের ব্যাপারে দুদকের পরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য জানান, ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কাজী আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের বিরুদ্ধে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের দায়ে মামলা করে দুদক। দায়েরকৃত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান সম্প্রতি আদালতে কাজী আনিসের সম্পদ জব্দ করার আবেদন করেন। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি আদালত কাজী আনিসের সম্পদ জব্দ করার আদেশ দেয়। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা ধারাবাহিকভাবে তার সকল সম্পদ জব্দ করার কাজ শুরু করেন।
দুদক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর দুদকের দায়ের করা মামলার এজহারে বলা হয়, আনিসুর রহমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিজ নামে ও বেনামে অর্জিত ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং ১ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের মালটিপ্ল্যান সেন্টার লেভেল একটি ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রসুলপুরে ২৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি, ঢাকার আর কে মিশন রোডে আমিন ভবনের পঞ্চম তলায় ১৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার স্বামীবাগ রোডে ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডিতে ফ্ল্যাট, শুক্রাবাদের শেরেবাংলা নগরে ৭৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডি ১৫ নম্বর রোডের একটি ফ্ল্যাটসহ সর্বমোট ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অনুরূপভাবে আরফিন এন্টারপ্রাইজ কোম্পানির শেয়ার মূল্য ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্টেশনের শেয়ার মূল্য ৩৬ লাখ টাকা, প্রাইজবন্ড ৩ লাখ টাকা, গাড়ির মূল্য ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ মোট ১ কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।
বিএফআইইউ থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র অনুসারে তার বিরুদ্ধে ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ডাচ্ বাংলা ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিং অ্যাকাউন্ট এফডিআর এইচটিসিসহ বিভিন্ন ফর্মে ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে যা আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই এবং এসবের সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট বৈধ উত্স নেই।
অন্যদিকে, তার স্ত্রী সুমি রহমানের নামে ১ কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকার স্থাবর ও ৫৬ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকার অস্থাবর অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
২০১৯ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। অভিযানে ঢাকার বিভিন্ন ক্রীড়াক্লাবে যুবলীগ নেতাদের সম্পৃক্ততার তথ্য বেরিয়ে আসে। ক্যাসিনোকাণ্ডসহ নানা অনিয়মে যুবলীগের সামনের সারির কয়েকজন নেতা গ্রেফতার হন। সে সময় কাজী আনিসের কয়েক বছরের মধ্যে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে এলে গা ঢাকা দেন এই যুবলীগ নেতা। পরে ১১ অক্টোবর তাকে বহিষ্কার করে যুবলীগ।
ইত্তেফাক/এসআই