শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চিরদিনের জন্য জনগণের মন থেকে চলে গেছে আওয়ামী লীগ: মির্জা ফখরুল

আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০১৯, ২২:১২

৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির নয়, আওয়ামী লীগের পরাজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ফখরুল বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বরের ভোট ডাকাতির নির্বাচন একটি কাজে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ চিরদিনের জন্য জনগণের মন থেকে দূরে চলে গেছে। পরাজয় আমাদের হয়নি। পরাজয় হয়েছে আওয়ামী লীগের, নৈতিকভাবে তাদের পরাজয় হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, পরাজয় মনে করলেই পরাজয়। আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমাদের এখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমগ্র দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে দুর্বার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনতে হবে। আমাদের ভাইদের মুক্ত করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে।

শুক্রবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত দলের প্রতিষ্ঠাতা, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী উপলে এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ সব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। হতাশার কোনো জায়গা নেই। এগিয়ে যেতে হবে। তরুণদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। শহীদ জিয়া আমাদের সে শিক্ষা দিয়েছেন। যারা হতাশ, তারা কখনো জিয়াউর রহমানের অনুসারী হতে পারে না। আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নয়, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই নির্বাচন হয়েছে। আজকে দশ বছর ক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ এতো ‘উন্নয়ন’ করেও ভোট ডাকাতি করেছে। কারণ তারা বিএনপিকে ভয় পায়। দেশের ৮০ ভাগ মানুষ আওয়ামী লীগের বিদায় ও বিএনপিকে ক্ষমতায় দেখতে চেয়েছিল। যা গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে তারা জেনেছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা এবার সাহস
নিয়ে নির্যাতন সহ্য করে মাঠে ছিল।

ড. মোশাররফ হোসেন বলেন, আমাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। হামলা-মামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর পুনর্বাসন করতে হবে। সংসদ সদস্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করবেন। সর্বোপরি কাউন্সিলের মাধ্যমে দলকে পুনর্গঠন করতে হবে। আমরা যারা ব্যর্থ হয়েছি নতুনদের জন্য আমাদের সরে যেতে হবে। তৃণমূলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। আমরা এগিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বর দেশে কোনো নির্বাচন হয়নি। সম্পূর্ণ নীল নকশার নির্বাচন হয়েছে। কোনোভাবেই সংবিধান সম্মত নির্বাচন হয়নি। জনগণের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। বিদেশি গণমাধ্যমের দিকে তাকালে দেখবেন সবাই একই কথা বলছে। এই নির্বাচনে অনিয়ম নিয়ে সংবাদ লিখছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, আমি হতাশ, হতবাক ও বিস্মিত হয়েছি এবারের নির্বাচনী প্রক্রিয়া দেখে। দুইটি কারণে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তার একটি ছিল- নির্বাচনে গেলে হয়তো একটি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হবে এবং বিএনপির এই যে হাজার হাজার লাখ, লাখ নেতাকর্মী উজ্জীবিত হবে। ফলে দলের ভেতরে গতি সঞ্চারিত হবে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে- আমরা সবাই জানি যে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু সেই জায়গা থেকে অন্তত পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচনের চেষ্টা সরকার করবে এই বিশ্বাস নিয়েই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু না আমরা সংলাপে যাওয়ার পর আশ্বাস দেয়া হলো যে আর গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার করা হবেনা। অথচ নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত আমাদের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এভাবে নির্বাচন করা যায় কী করে? ছাত্রদল, যুবদল না থাকলে নির্বাচনে যাওয়া যায় কেমনে? 

তিনি আরো বলেন, আসলে শহীদ জিয়ার ফিরিয়ে দেয়া নির্বাচনী ভোটাধিকার আমরা আবারো হারালাম। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছে। মিথ্যা মামলার আসামী করা হয়েছে। আমি সহ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং অন্যান্য নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের গাড়িতেও হামলা চালিয়েছে। নির্বাচনের আগেরদিন পর্যন্ত মামলা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: ‘বিয়ে করাটাই নারী জীবনের একমাত্র সাফল্য নয়’

আগামীতে দলের করণীয় প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন, এখন দলকে পুনর্গঠন ও নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করতে হবে।ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদেরকে অভয় দিতে হবে। তাদের মাঝে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের যাদের বয়স হয়েছে তারা সরে যাবো। কিন্তু এই দলটিকে তো রাখতে হবে। দুই তিন মাসের মধ্যে আবারো দল পুনর্গঠন করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদের যৌথ পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। আরো বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, আবদুল মান্নান, ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর বীরবিক্রম, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও আহমেদ আযম খান। উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া ও আতাউর রহমান ঢালী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মাদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ।

ইত্তেফাক/এমআই