শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাপুলের এমপি পদ

স্পিকারের চিঠি পেলেই ব্যবস্থা নেবে ইসি

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:৩৬

কুয়েতে দণ্ডপ্রাপ্ত লক্ষ্মীপুর-২ আসনের কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলের সংসদ সদস্য (এমপি) পদ থাকা বা না থাকার বিষয়ে স্পিকারের চিঠি পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আইনানুযায়ী পাপুল দুই বছরের অধিক দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তার এমপি পদ থাকছে না। গত সপ্তাহেই নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্পিকারের চিঠি পেলেই পাপুলের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাপুলের আসনে নির্বাচন করার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। এসব ব্যাপারে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যাখ্যাও তারা নিয়েছেন। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির খোন্দকার ইত্তেফাককে বলেন, এখন পর্যন্ত এ সংক্রান্ত কোনো চিঠি নির্বাচন কমিশনে আসেনি। স্পিকারের চিঠি এলে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ১২ (১) (ডি) ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য হওয়ার এবং সদস্য সংসদ থাকার যোগ্য হবেন না যদি তিনি অনুচ্ছেদ ৭৩, ৭৪, ৭৮, ৭৯, ৮০, ৮১, ৮২, ৮৩, ৮৪ এবং ৮৬-এর অধীন কোন অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে থাকেন, তার মুক্তি লাভের তারিখ থেকে পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে। এছাড়াও সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনো সংসদ সদস্য দুই বছরের অধিক সময়ের জন্য দণ্ডিত হলে এবং সেই রেকর্ড সংসদের কাছে পৌঁছালে সংবিধান অনুযায়ী সংসদ আসন শূন্য ঘোষণা করা হবে। স্পিকার তার সদস্যপদ বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করবে।

অর্থ ও মানব পাচার এবং ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে গত বছরের জুনে কুয়েতে গ্রেফতার হন লক্ষ্মীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র এমপি পাপুল। গত ২৮ জানুয়ারি তাকে চার বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। সাবেক আইনমন্ত্রী ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মনে করেন, নির্বাচন কমিশন তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করলেও আইনি প্রতিকার চেয়ে তিনি দেশের কোনো আদালতে যেতে পারবেন না। এমনকি কুয়েতে আপিল করলেও সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।

ইতিমধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে রায়ের কপি এসে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পাপুলের রায়টা আমরা পেয়েছি। আরবি এবং ইংরেজি ভাষায় ৬১ পাতার রায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্পিকারের কাছে এগুলো পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এখন তারা বিধি মোতাবেক অ্যাকশন নেবেন।

রায়ের কপি আসার পর এখন কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে? জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখন স্পিকারকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তিনি দুই ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা নির্বাচন কমিশনকে বলতে পারেন। প্রথমটা হলো, তার সংসদ সদস্যপদ বাতিলের জন্য নির্বাচন কমিশনকে স্পিকার অবহিত করতে পারেন। দ্বিতীয়ত, রায়ের কপিটিসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তিনি বলতে পারেন। এখানে আইনে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা আছে। যেহেতু নির্বাচন কমিশনের গেজেটে তিনি সংসদ সদস্য হয়েছেন, তাই তার সংসদ সদস্যপদ বাতিল করতে হবে নির্বাচন কমিশনকেই। স্পিকারের চিঠি পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা মিডিয়া থেকে যদ্দুর জেনেছি, বৃহস্পতিবারই স্পিকারের কাছে রায়ের কপি এসেছে। এরপর তো তিন দিন বন্ধ। ফলে সোমবার হয়তো আমরা অফিসে গেলে বিষয়টি জানতে পারব। স্পিকারের চিঠি পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনে যা আছে, সেটাই করবে নির্বাচন কমিশন।

ইত্তেফাক/কেকে