বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পাঁচ ধাপে ২৩০টি পৌরসভায় ভোট

সহিংসতা-অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি

আপডেট : ০২ মার্চ ২০২১, ১০:১৫

চলমান পৌরসভা নির্বাচনে সহিংসতা এবং অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গোলযোগ-সহিংসতা ও দখলের অভিযোগের মধ্যে নির্বাচন কমিশন বরাবরই দাবি করেছে, সুষ্ঠু ও ভালো ভোট হয়েছে। কিন্তু কোথাও কোথাও বাস্তবচিত্র ছিল কিছুটা ভিন্ন। পাঁচ ধাপে অনুষ্ঠিত ২৩০টি পৌরসভার কমবেশি সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।

প্রতি ধাপে প্রাণহানি হলেও পরবর্তী ধাপে তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। যদিও ইসির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রিটার্নিং অফিসার বা ইসির মনিটরিং সেল নির্বাচন কমিশনকে বরাবরই সঠিক তথ্য উপস্থাপন করেনি। এদিকে পাঁচ ধাপের ভোটে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১৮৫টি পৌরসভায় বিজয়ী নৌকার প্রার্থীরা। ভরাডুবি হয়েছে বিএনপির প্রার্থীদের। মাত্র ১১টিতে জয় পেয়েছে তারা।

২৩০ পৌরসভায় কেমন ভোট হলো জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির খোন্দকার ইত্তেফাককে বলেন, ভোট ভালো হয়েছে। যেসব জায়গায় সহিংসতা হয়েছে আমরা প্রতিরোধ করেছি। তবে কোনোভাবেই প্রাণহানি কাম্য নয়। প্রাণহানি যে শুধু এবার হয়েছে তা নয়, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে অতীতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। তবে আগামীতে যাতে কোনো প্রাণহানির ঘটনা না ঘটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি থাকবে।

গত ২৮ ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত পাঁচ ধাপে ২৩০টি পৌরসভায় ভোট হয়। ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে পঞ্চগড়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারের গাড়িতে হামলা করে দুর্বৃত্তরা। পাবনার চাটমোহরে ভোটকেন্দ্রে মারা এক জন আওয়ামী লীগ সমর্থক। গত ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপেও সহিংসতার মাত্রা আরো বৃদ্ধি পায়। কিশোরগঞ্জ ও বোয়ালমারীতে ব্যালটবাক্স ছিনতাই হয়। দাগনভূঞায় ককটেল বিস্ফরণ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। কুলাউড়ায় দফায় দফায় ধাওয়া-পালটাধাওয়া এবং চান্দিনায় দুই প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়।

গত ৩০ জানুয়ারি সংঘর্ষ, মারামারি, কেন্দ্র দখল করে ব্যালট বাক্স ছিনতাই, নির্দিষ্ট প্রতীকে প্রকাশ্যে সিলমারাসহ প্রার্থীদের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে ভোট হয়। ভুঞাপুরে এক নারীসহ দুই জনের হাতের কবজি ও আঙুল কর্তনের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরার কলারোয়া নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান নিখোঁজ হন। যদিও অনিয়মের ঘটনায় নলছিটি, ভুঞাপুর ও কলারোয়ার ভোটের গেজেট স্থগিত রেখে তদন্ত নামে নির্বাচন কমিশন।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপেও সংঘাত ও সংঘর্ষ এড়ানো সম্ভব হয়নি। ভোটে সংঘর্ষ এবং গোলাগুলি হয়। পটিয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থীর ভাই খুন হন। সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম ধাপের ভোটেও সৈয়দপুরে এক জন নিহত হয়েছেন। নান্দাইলে তিন কাউন্সিলর প্রার্থী আটক হয়েছেন। রাজশাহীর চারঘাট পৌরসভা নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও বিভিন্ন ধাপের ভোটের আগে-পরে সংঘাত-সহিংসতা ও প্রাণহানিও হয়েছে। ঝিনাইদহে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর মধ্যে এক জন মারা যান। মাদারীপুরের কালকিনিতে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থীকে তুলে নেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করছে ইসি। এবারের পৌরসভা নির্বাচনে গোলযোগ ও সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সমালোচনা করেছেন।

পাঁচ ধাপের ভোট বিশ্লেষণ: পাঁচ ধাপে দেশের ২৩০টি পৌরসভায় ভোট হয়। এতে ৭৭ লাখ ২৪ হাজার ৮৯৭ ভোটারের মধ্যে ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। ভোটের হার ৬৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। নির্বাচনে মধ্যে ৪৯ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৭ কাস্টিং ভোটের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ২৯ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৫ ভোট। কাস্টিং ভোটের মধ্যে দলটির প্রাপ্ত ভোটের হার শতকরা ৫৯ দশমিক ৯২ শতাংশ।

নির্বাচনে কাস্টিং ভোটের মধ্যে বিএনপি পেয়েছে ১০ লাখ ৪৬ হাজার ৩৬ ভোট। অর্থাৎ কাস্টিং ভোটের মধ্যে বিএনপি পেয়েছে ২১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা কাস্টিং ভোটের মধ্যে ৯ লাখ ৪৭ হাজার ১০৬ ভোট (১৯ শতাংশ) পেয়েছে। ২৩০টি পৌরসভার মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পেয়েছে ১৮৫টি, বিএনপি ১১টি এবং স্বতন্ত্রসহ অন্যান্যরা ৩৪টি। অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় পার্টি-জাপার এক জন ও জাসদের এক জন প্রার্থী বিজয়ী হন।

ইত্তেফাক/এমআর