শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

১৮ মামলার আসামি, চাল চোর ও বিএনপির সাবেক নেতা আছেন

আপডেট : ২২ অক্টোবর ২০২১, ১১:১৬

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের রেজ্যুলেশনের বিরুদ্ধে এবারও নানা অভিযোগ উঠেছে। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে তৃতীয় ধাপের আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও তৃণমূল থেকে কেন্দ্রে পাঠানো রেজ্যুলেশনে তথ্য গোপন করা হয়েছে। ১৮ মামলার আসামি, ভিজিএফর চাল চোর, সরকারি অর্থ আত্মসাত্কারী, বিএনপির সাবেক নেতাসহ দলের হাইব্রিডদের নামও রয়েছে তৃণমূলের প্রস্তাবে। জনপ্রিয়দের বাদ দিয়ে অনেক জায়গা থেকে এসেছে বিতর্কিত একক প্রার্থীর নাম। এ কারণে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হচ্ছে মনোনয়ন বোর্ডের।

তৃণমূলের রেজ্যুলেশন, বিভিন্ন জরিপ রিপোর্ট ও মন্ত্রী-এমপিদের সুপারিশ যাচাই-বাছাই করে মনোনীত একক চেয়ারম্যান প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজ গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু করেছে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ড। প্রতিদিন দুটি করে বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। সেই হিসেবে টানা চার দিন মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক হওয়ার কথা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৮ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় ১ হাজার ৭টি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ৫ হাজার ৪৮৬ জন।

ভুল তথ্য দেওয়া হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমন সতর্কবার্তা কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তা আমলে নেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কোনো কোনো জেলা থেকে তথ্য গোপন করে বিতর্কিতদের নাম কেন্দ্রে পাঠাচ্ছেন। যারা এ ধরনের কাজে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত ছিল সর্বনিম্ন তিন জনের নাম তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা রেজ্যুলেশন আকারে কেন্দ্রে পাঠাবেন। কিন্তু স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এক শ্রেণীর নেতারা অর্থের বিনিময়ে বিতর্কিত একজনের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। দলের পদে না থেকেও দলীয় পদবি ব্যবহার করছেন কেউ কেউ। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সাবেক পদ ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে অতীতে তিনি ঐ পদে কখনোই ছিলেন না।

তৃতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী অনেকের বিরুদ্ধে ধানমন্ডিস্থ দলীয় সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে অভিযোগ জমা পড়েছে। এবার প্রার্থী বাছাইয়ের আগে তৃণমূলের সব অভিযোগ আমলে নেওয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে যেসব অভিযোগের সঙ্গে যথাযথ তথ্যপ্রমাণের কাগজপত্র নেই, সেগুলো জমা নেওয়া হচ্ছে না। যে অভিযোগগুলোর সত্যতা পাওয়া যাচ্ছে, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে মনোনয়ন বোর্ডে পাঠানো হচ্ছে। পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার নাগডেমরা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন-অর-রশিদ। তার বিরুদ্ধে দলের তৃণমূলের তিন জন আওয়ামী লীগ নেতাসহ সাত জন যৌথভাবে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের প্রমাণও সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. হারুন-অর-রশিদকে ভোট দিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করি। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পরই ২০১৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর গরিব অসহায় মানুষের ভিজিএফর চাল বিতরণ না করে গোপনে ১২৯ বস্তা চাল তার নিজ গ্রামের শ্যামল নামক এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। বিষয়টি সাঁথিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানতে পারলে তা উদ্ধার করে থানায় মামলা করেন। এছাড়া চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অবৈধভাবে সোনাতলা বাজারের জামে মসজিদের জায়গা দখল করে দোকানঘর নির্মাণ করেন। মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে তা বিক্রিও করে দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস থেকে দোকানঘর ভাঙার নোটিশও করেছিল। কিন্তু চেয়ারম্যানের ক্ষমতার দাপটে তা কার্যকর হয়নি।

এদিকে আরেকটি জেলায় আওয়ামী লীগের একজন নেতা ১৮ মামলার আসামি। তৃণমূলের রেজ্যুলেশনে তার একক নাম পাঠানো হয়েছে। অথচ যোগ্য অনেক প্রার্থী সেখানে রয়েছেন। নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী বর্তমান এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৫৫০ টন চাল (যার মূল্য ২ কোটি টাকার বেশি) আত্মসাৎ করার লিখিত অভিযোগ করেছেন তৃণমূলের নেতারা। এছাড়া আরও কয়েকটি ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপির সাবেক নেতাসহ দলের হাইব্রিডদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব বিতর্কিত নেতাদের পক্ষে এক শ্রেণির মন্ত্রী-এমপিরাও সুপারিশ করেছেন। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় ধাপের ইউপি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের আগে এবং মনোনয়ন পাওয়ার পরে অনেক অভিযোগ জমা পড়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে। মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকে এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করা হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ১৫ প্রার্থী পরিবর্তনও হয়েছে।

ইত্তেফাক/এমআর