শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে গৌরবের ধারাবাহিকতা মিলছে না

আপডেট : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ০২:০০

স্বাধিকার থেকে স্বাধীনতা, ছয় দফা, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ, ৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা অবিস্মরণীয় ভূমিকা রেখেছেন। তবে ছাত্রলীগের বর্তমান নেতৃত্ব নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার তথ্য উঠে আসার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের সাবেক নেতারা বলেছেন, একালের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে সেকালের গৌরবের ইতিহাসের ধারাবাহিকতা খুঁজে পাওয়া যায় না। এখন প্রয়োজন কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ঢেলে সাজিয়ে ছাত্রলীগের নতুন অগ্রযাত্রা শুরু করা। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগ তার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি নীতি নিয়ে ছাত্রলীগের পথচলা শুরু হয় ইতিহাসের এমন এক সন্ধিক্ষণে যখন দ্বিজাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্রের জন্ম হয় বিশ্ব মানচিত্রে। বঙ্গবন্ধু পরিষ্কার বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাঙালির ইতিহাস’।

আরো পড়ুন: স্বামী বাসর ঘরে ঢুকে দেখলেন স্ত্রী ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা

১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন শেখ শহীদুল ইসলাম। তিনি গতকাল ইত্তেফাককে জানান, ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এদেশে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, শিক্ষা আন্দোলন, ছয় দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই সময়ে ছাত্রলীগের অনেক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন, কারাবরণ করেছেন। কিন্তু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কখনো আদর্শের রাজনীতি থেকে বিচ্যুত হননি। কোনো লোভ বা অর্থলিপ্সা তাদের আদর্শচ্যুত করতে পারেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক ছাত্রলীগ নেতৃত্বের যে কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে তা কেবল দুঃখজনকই নয়, ছাত্রলীগের গৌরবজনক ভূমিকার কালিমা লেপন করছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে আমি এতে লজ্জিত, দুঃখিত ও ব্যথিত। আমরা আশা করি এই ধরনের কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা প্রতিহত করবে এবং যোগ্য নেতাদের নেতৃত্বের আসনে বসাবে। যাতে ছাত্রলীগের হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করা যায়। ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানকে স্বাগত জানান শেখ শহীদুল ইসলাম। ১৯৮১-১৯৮৩ মেয়াদে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বপালনকারী ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন জানান, ছাত্রলীগের এমন অবস্থার সৃষ্টি হবে এটা স্বপ্নেও ভাবিনি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ছাত্রলীগ হারানো গৌরব ফিরে পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

১৯৯২-১৯৯৪ মেয়াদে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্বপালনকারী মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী গতকাল ইত্তেফাককে জানান, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগের অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ভূমিকা রয়েছে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমিও বর্তমান ছাত্রলীগ সংক্রান্ত বিভিন্ন রিপোর্ট দেখেছি। এই রিপোর্টগুলো যদি সত্য হয় তাহলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে আমি অবশ্যই মর্মাহত হবো। আর এ রিপোর্টগুলো যদি মিথ্যা প্রমাণিত হয় তাহলে আমি খুবই খুশি হবো। কারণ বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আমাদের আদর্শিক সংগ্রামের মূল ভিত্তি ও প্ল্যাটফরম।

ইত্তেফাক/বিএএফ