মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সরকার সংকটে পড়েছে মনে করছে বিএনপি

আপডেট : ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০২:৩১

অনেকটা হঠাৎ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান, বহিষ্কারের ঘটনা এবং সাম্প্রতিক সময়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক বলে মনে করছেন না বিএনপি নেতারা। তারা মনে করছেন, এর নেপথ্যে টানা তিন দফায় দাপটের সঙ্গে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ বড়ো ধরনের সংকটের আবর্তে পড়েছে। সংকট উত্তরণের জন্য পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে একটা ‘ইতিবাচক ভাবমূর্তি’ তৈরি করতে চাইছে।

 

বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি কোনো চ্যালেঞ্জ তৈরি করার মতো অবস্থানে না থাকলেও তাদের কোথাও কোনো চ্যলেঞ্জ বা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, দখল, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাস, জুয়া, ক্যাসিনো এবং সামাজিক অপরাধের ঘটনা নতুন নয়, তবে এভাবে ছাত্রলীগ, যুবলীগের বিরুদ্ধে আকস্মিক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণকে ভিন্ন চোখে দেখছেন বিএনপি নেতারা। এনিয়ে নানা আলোচনা ও বিশ্লেষণ চলছে বিএনপিতে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারার নামই সংকট। এই সংকটেই এখন আওয়ামী লীগ নিক্ষিপ্ত হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট করার মাধ্যমে জনগণের বিরাগভাজন বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ হচ্ছে। ‘উন্নয়নের গণতন্ত্রের’ নামে লুটপাট-দুর্নীতির চক্রে পড়ে গেছে তারা। আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কিছু নেতা ‘দানবের মতো চেহারা’ নিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। কোনো ইস্যুকেই সামাল দিতে পারছে না এই সরকার। এনিয়ে মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ তৈরি করেছে এবং আওয়ামী লীগের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাওয়ার মতো অবস্থায় চলে গেছে। এই পরিস্থিতিতে তারা যা করছে তাতে সংকট কাটবে না। তাসের ঘরের মতো যে কোনো সময় এই সরকার পড়ে যাবে। সংকট কাটাতে হলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। মানুষের ভোটাধিকার ফেরত দিতে হবে। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, গভীর কোনো সংকটে না পড়লে এই সরকার এ ধরনের অভিযান চালাবে এটা জনগণ বিশ্বাস করে না। কোথাও কোনো সমস্যা হয়েছে। রহস্যজনক কারণে অভিযান চালাতে গিয়ে সংকট আরো বাড়িয়েছে তারা। যদিও তারা এই অভিযানের কৃতিত্ব শেখ হাসিনাকে দিচ্ছেন। তবে সরকার কিছু প্রশ্নের মুখে পড়েছে। প্রশাসনের নাকের ডগায় ৬০টি ক্যাসিনো চলল বছরের পর বছর ধরে তারা কি জানতেন না? দুর্নীতি-চাঁদাবাজি-ব্যাংক লুটপাট-নানা অপকর্ম চলে আসছে এক দশক ধরে, সরকার নীরবে দেখেছে, কিছুই করেনি। এই অভিযানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আলাদা কোনো নির্দেশের প্রয়োজন পড়ে না। দুর্নীতিবিরোধী অভিযান তো চলমান প্রক্রিয়া। ১/১১ এর মতো কোনো সরকার হঠাত্ করে ক্ষমতায় আসেনি যে, হঠাত্ করে অভিযান চালাতে হবে। তাহলে কি ৯ লাখ কোটি টাকা পাচার হওয়ার পর সরকারের ঘুম ভেঙেছে? ব্যাংকগুলো খালি হওয়ার পর এখন সরকারের ঘুম ভেঙেছে? তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলকে নানাভাবে দমন করে এই সরকার টিকে আছে। গুম খুন করে সরকার টিকে আছে। যে কোনো কিছু হলেই বিএনপিকে ব্লেম দিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। সরকার এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকারের অবস্থা তাসের ঘরের মতো। এ কারণে কোথায় ১০-২০ জন লোক একত্রিত হতে দিতে চায় না। গুজব বা সত্য হোক ক্ষমতা নিয়ে ক্ষমতাসীনদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। এটা মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। ১৪ দলে যে পালাবদল তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। আওয়ামী লীগ যেহেতু গণতন্ত্রের অনুপস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব করা—এমন সব অভিযোগের মুখে রয়েছে, সেজন্য ‘দুর্নীতিবিরোধী’ একটা অবস্থান তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে কাছে টানার চেষ্টাও থাকতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত সরকার সংকট কাটাতে পারবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শুধু ছাত্রলীগ ও যুবলীগই নয়, সারাদেশে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের যে জাল বিস্তৃত হয়েছে তার দিকে তাকালেই পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং আওয়ামী লীগের ও তাদের সরকারের সংকটের চিত্র পরিষ্কার হবে। প্রশাসনের সহায়তায় জোর করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে আছে। তবে আওয়ামী লীগ সমাধানহীন সংকটের মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এ থেকে আর বেরুতে পারবে না। অভিযানের নামে দুর্নীতির ছোটোখাটোদের ধরে লাভ নেই। সংকট সমাধানের চেষ্টা করুন। ১০ বছরে ঘরে ঘরে টাকশাল বানিয়েছে। ব্যাংকের বদলে বাড়ির ভোল্টে টাকা রাখছে। শিক্ষাঙ্গনে টর্চার সেলে শিক্ষার্থীদের হত্যা-নির্যাতন করা হচ্ছে। পুরোদেশটাই কারাগার বানিয়ে এখন এ সামান্য অভিযান দিয়ে সংকট কাটবে না। আমার ধারণা তারা এই শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে ভয়াবহ কোনো সংকট থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজছে।

আরও পড়ুন: আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্য আটক

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, গত কয়েক দিনে পুলিশি অভিযানে বেআইনি কার্যকলাপের চিত্র এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনে অবাধ বাণিজ্য, আইনের শাসনকে অবজ্ঞা করার যে রূপ প্রকাশিত হয়েছে তা ভয়াবহ। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে বর্তমান অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে গিয়ে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। রাষ্ট্র বড়ো ধরনের অভ্যন্তরীণ সংকটে নিপতিত এবং স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। তারা অভিযান চালাচ্ছে, সেটায় কেবল চুনোপুঁটি ধরা হচ্ছে। রাঘব বোয়ালরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। সরকার অনির্বাচিত। ফলে জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য এ ধরনের অভিযান চালাতে পারে কিন্তু অন্য আরো অনেক কারণ আছে এর নেপথ্যে। সংকট কাটাতে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে।

ইত্তেফাক/ইউবি