শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে মারা গেলেন স্কুলশিক্ষিকা

আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২০, ২২:৩৩

কয়েকদিন ধরেই সংবাদপত্রের পাতাজুড়ে ছাপা হচ্ছে সাধারণ রোগেরও চিকিৎসা পাচ্ছে না মানুষ। এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে রোগীকে, কিন্তু চিকিৎসা মিলছে না। আবারও ঠিক এমন ঘটনায় প্রাণ হারারেল স্কুলশিক্ষিকা মাহমুদা খানম (৭২)।

গোপালগঞ্জের বাসিন্দা এই নারী স্বামীর মৃত্যুর পর চার বছর ধরে অসুস্থ্য। কিডনি, ফুসফুসে পানি জমা ও নিউমোনিয়াসহ নানা সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা নিয়েছেন এ্যাপোলো হাসপাতালে। কিন্তু গতকাল বুধবার এ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ তাকে ভর্তি করেনি। কয়েকটি হাসপাতালে চেষ্টা করেও মায়ের চিকিৎসা করাতে পারেনি সন্তানরা। শেষ পর্যন্ত রাত ১০টার দিকে মগবাজারের রাশমনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে মারা যান তিনি।

মাহমুদা খানমের মেয়ে মাসুদা পারভীন চম্পা ইত্তেফাককে বলেন, বাবার মৃত্যুর পর চার বছর ধরেই আমার মা অসুস্থ্য। দীর্ঘ সময় তিনি এ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিত্সা করিয়েছেন। সর্বশেষ গত ৪ মার্চ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিলেন পাঁচ দিন। সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফেরেন। অসুস্থতার কারণে তিনি হাঁটতেও পারতেন না। ঘর থেকে বের হতেন না। কিছুদিন পরপর তিনি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতেন। সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ আবারও অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ্যাপোলো হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানকার ডাক্তাররা করোনা রোগী সন্দেহে ভর্তি নেননি। কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিতে বলেন। আমরা বারবার বলেছি, তিনি নিউমোনিয়ার রোগী। এ্যাপোলোতে নিয়মিত চিকিত্সা করান। তার পরও তারা কোনো কথা না শুনে ফিরিয়ে দেন।

চম্পা বলেন, বুধবার সকালে মায়ের অবস্থার অবনতি হলে আবারও এ্যাপোলো হাসপালে নিই। এবারও সেখানে ভর্তি করেনি। স্থানীয় থানার ওসি চেষ্টা করেও সেখানে ভর্তি করতে পারেননি। এরপর আরো কয়েকটি হাসপাতালে নেওয়া হলে সবাই বলেছে রোগীর অবস্থা খারাপ, আইসিইউ লাগবে। কিন্তু কেউ ভর্তি করেনি। সর্বশেষ রাতে মগবাজারের রাশমনো হাসপাতালে নেওয়া হলে তারাও আইসিইউ দেয়নি। ফলে জরুরি বিভাগেই মারা যায় মা। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, আমার মায়ের করোনা হয়নি, বিনা চিকিৎসায় তিনি মারা গেলেন। কীভাবে নিশ্চিত হলেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার ছুটি ঘোষণার পর আমরা কেউ ঘর থেকে বের হয়নি। আমার মা তো বিছানায় থাকেন। আমরা সবাই সুস্থ, অথচ মাকে এই রোগ কীভাবে ধরবে? আতঙ্ক থেকেই হাসপাতালগুলো আমার মায়ের চিকিত্সা করল না।’

গোপালগঞ্জ সদরের প্রয়াত থানা শিক্ষা অফিসার সৈয়দ জাকারিয়া সুলাইমানের স্ত্রী মাহমুদা খানম গোলালগঞ্জ সদরের বিনাপানি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। অবসরের পর ঢাকায় আমাদের সঙ্গেই থাকেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে এক ভাই অস্ট্রেলিয়া ও এক বোন কানাডা থাকেন। গত এক বছরের বেশি সময় তারা দেশে আসেনি। উচ্চশিক্ষিত ভাইবোনেদের মধ্যে তিন জন ঢাকায় থাকেন। আর একজন থাকেন গোপালগঞ্জে।

ইত্তেফাক/আরএ