শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

স্মারক

কান পেতে শুনি...

আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ২১:৩৬

১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদেরদের গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের কাহিনি কারো অজানা নয়। স্বাধীনতার পরও তাদের বিভিন্ন কুকীর্তির প্রমাণ বেরিয়ে আসে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহু গণহত্যার চিহ্ন তথা বধ্যভূমির খোঁজ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্ বধ্যভূমির একটি হলো মিরপুরের ‘জল্লাদখানা বধ্যভূমি ১৯৭১’।

বধ্যভূমির প্রবেশপথের ফটকের গায়ে লেখা—‘কান পেতে শুনি, কী বলতে চাইছে মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমি’। ভেতরে প্রবেশ করতেই প্রথমে নজরে আসে একটি মাটির স্মারক। ‘শূন্য হূদয়’ নামের এই স্মারকটির স্থপতি কবি রবিউল হুসাইন। এর চারপাশ ঘুরে জানা যায়, সারা দেশে বিভাগ অনুযায়ী ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৪৭৭টি বধ্যভূমির কথা। এছাড়া রয়েছে একটি ফলকচিত্র। গণহত্যার এই প্রতীকী দৃশ্যের শিরোনাম ‘জীবন অবিনশ্বর’। এর পাশে রয়েছে একটি ঘর যেটি সংগ্রহশালা নামে পরিচিত। এর প্রবেশপথে রয়েছে একটি ঘণ্টা, যেটি বাজিয়ে প্রবেশ করতে হয়। প্রবেশ করে জানা গেল মিরপুরে শহিদদের নামের তালিকা। তালিকা দেখেই চারপাশের স্মৃতিচিহ্নের দিকে তাকাই। কত নির্যাতনের চিহ্ন বহন করে চলেছে এই বধ্যভূমির মাটি। জল্লাদখানা স্মৃতিপীঠের পূর্বদিকে রয়েছে ‘স্মৃতি টাওয়ার’। এই স্মৃতি টাওয়ার কত স্মৃতি বহন করে চলেছে কে জানে!                                                                                                                         

দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। স্মৃতি টাওয়ারের নিচে বসে আছি। দেখলাম, তিন সদস্যের একটি ছোট্ট পরিবার এসেছে বধ্যভূমি দেখতে। মনে হলো এই অংশটা তাদের অনেক চেনা-জানা! সবচেয়ে কনিষ্ঠ সদস্য অর্থাত্ পাঁচ বছর বয়সী শিশুটির আচরণ নজরে পড়ার মতো। বধ্যভূমি থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে বের হওয়ার সময় শিশুটি সামনে যা পাচ্ছে বিশেষ করে ছোটো ছোটো গাছ, বড়ো গাছ থেকে নুইয়ে পড়া লতাপাতা আঁকড়ে ধরছে। শিশুটি ধরছে তো ধরছেই বেশ জোরেশোরে ধরে রাখছে এবং মা-বাবাকে এখান থেকে না-যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছে। কান পেতে শোনার চেষ্টা করলাম! শিশুটি বলছে, ‘আমি নানার কাছে থাকব, নানার কাছে যাব।’ শিশুটির মা-বাবা যেন শিশুটির এই আবদারের কাছে  অসহায়! শিশুটির বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলাম, এই বধ্যভূমিতে তাদের পরিবারের দুঃসম্পর্কের এক সদস্য শহিদ হয়েছেন। তাঁরা প্রায়ই শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে এখানে আসেন। কিন্তু ফিরে যাওয়ার সময় শিশুটি যেন কান পেতে অনেক কথা শুনে যায়...।