বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফল

কমলালেবু

আপডেট : ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৮:৩২
অতি সুস্বাদু, উপাদেয় ও পুষ্টিকর জনপ্রিয় ফল। এর রূপ ও গুণ দুই-ই মনোমুগ্ধকর। সবাই এ ফল খেতে পছন্দ করে। আসাম বা দক্ষিণ-পূর্ব চীন কমলালেবুর জন্মস্থান। আমেরিকা, স্পেন, ভারত, ইতালি, জাপান, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, ব্রাজিল, মরক্কো, আলজেরিয়া, গ্রিস, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, ইসরাইল, মিশর, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে কমলালেবু চাষ হয়। বাংলাদেশে বান্দরবান জেলার রোমা, থানসী, নাইক্ষ্যংছড়ি প্রভৃতি স্থানে রয়েছে কমলাবাগান। রাঙামাটি জেলার সাবেক উপত্যকায় এর ব্যাপক আবাদ হয়। সিলেটের জাফলং ও জৈন্তা এবং মৌলভীবাজার জেলায় দেশি জাতের কমলাগাছ দেখা যায়। কমলালেবু সাধারণত তিন রকম—টক কমলালেবু, মিষ্টি কমলালেবু ও ঢিলা খোসাযুক্ত কমলালেবু। শেষোক্ত প্রজাতির চাহিদা বাজারে বেশি। ফল গোলাকার থেকে ডিম্বাকার-একক, কখনো কখনো যুগ্ম। ফল ত্বকের বর্ণ সোনালি হলদে বা কমলা। ফলত্বক পাতলা থেকে সামান্য স্থূল, কোয়ার সঙ্গে ফলত্বক শক্তভাবে লেগে থাকে। কোয়াগুলো পারস্পরিক ঘন সন্নিবিষ্ট, ফলগুলো নিটোল, ফলের রস সুমিষ্ট, সুগন্ধি ও ঈষত্ অম্ল স্বাদযুক্ত। কমলালেবু খুবই পুষ্টিকর। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’। দাঁত, মাড়ি ও পেশি মজবুত রাখার জন্য ভিটামিন ‘সি’ বিশেষ প্রয়োজন। স্কার্ভি রোগ প্রতিরোধে ভিটামিন ‘সি’ বিশেষ ভূমিকা পালন করে। শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি লোটিন ও কলাজেন উত্পাদনেও ভিটামিন ‘সি’ ভূমিকা রাখে। প্রতি ১০০ গ্রাম কমলালেবু থেকে পাওয়া যায় ০.৯ ভাগ প্রোটিন, ১০.৪ ভাগ শর্করা, ০.৩ ভাগ সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৪ ভাগ খনিজ পদার্থ, ০.০৫ ভাগ ক্যালসিয়াম, ০.০২ ভাগ ফসফরাস, ০.১ ভাগ লৌহ, ভিটামিন ‘এ’ ৩৫০ আইইউ ও ১২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি-১। প্রতি কেজিতে পাওয়া যায় ৪৯০ ক্যালোরি শক্তি। কমলালেবুর খোসায় রয়েছে প্রচুর পেকটিন ও মূল্যবান তেল। কমলালেবু তৃপ্তিদায়ক ও তৃষ্ণানিবারক। তাছাড়া ক্ষুধাবর্ধক, বেদনাশক এবং কফ ও পিত্ত নাশক। কমলালেবু রস, জেলি হিসাবের প্রক্রিয়াজাত করে বহুদিন রাখা যায়। ফলের রসে সাইট্রিক অম্ল বেশি থাকায় এটি বেশ অম্লভাবাপন্ন। এজন্য সালাদ ও শরবত তৈরিতে এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যকে স্বাদযুক্ত করতে ব্যবহূত হয়। আমাদের দেশে অনেকে বিভিন্ন তরকারির স্বাদ ও সুগন্ধির জন্য রোদে শুকানো কমলার খোসা বা ছাল ব্যবহার করে থাকেন। খোসা ও পাতা দিয়ে প্রসাধনী ও সুগন্ধি তেল তৈরি করা হয়। আচার ও চাটনিতেও ব্যবহার করা হয় খোসা। টাটকা লেবুর খোসা নিংড়ে মুখে মাখলে ব্রণে আরাম হয়। শুকনো ছাল অম্লরোগ ও শারীরিক দৌবল্য কাটাতে ব্যবহার হয়ে থাকে। কমলার হলুদ নির্যাস সূর্যের ক্ষতিকর আলোকরশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করে। একইসঙ্গে ত্বককে করে নরম স্থিতিস্থাপক। প্রতিদিন এক গ্লাস কমলার জুস খেলে ত্বকের সৌন্দর্য বাড়ে। ত্বক হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় ও লাবণ্যময়। এটি একাধারে ত্বক, চুল ও নখের জন্য উপকারী।