শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সমকালীন বজ্রপাত

আপডেট : ১২ জুন ২০২১, ১৯:২৫

বাংলাদেশে বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পৃথিবীজুড়েই বজ্রপাত ঘটে। তবে বজ্রপাতের থাবা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশেই বেশি। তবে বৈশ্বিক মহামারি করোনার এই দুঃসময়ে বাংলাদেশের মানুষের সামনে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বজ্রপাতের আঘাত নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বজ্রপাতে প্রাণহানি ও আহতের সংখ্যা কমাতে মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর বজ্রপাতের কবল থেকে রক্ষা পেতে ২০টি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি করেছে। এসব নির্দেশনা জানা ও মানার বিকল্প নেই। বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতিক খুঁটিতে বিদ্যুত্স্পর্শের সম্ভাবনা বেশি থাকে; তাই বজ্রপাতের সময় পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিতে এবং উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকতে হবে। এ সময় জানালা থেকে দূরে থাকার পাশাপাশি ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলা, টিভি-ফ্রিজ না ধরা, গাড়ির ভেতর অবস্থান না করা এবং খালি পায়ে না থাকা। বজ্রপাত শুরুর অন্তত আধ ঘণ্টা সময় সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত হয় সুনামগঞ্জে। হাওরাঞ্চলেই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটে। তবে এবার খোদ রাজধানীতেও বজ্রপাতের ঘটনায় একাধিক প্রাণহানির খবর প্রকাশ পেয়েছে মিডিয়ায়। বাংলাদেশে সাধারণত বজ্রপাত হয় মার্চ থেকে জুন মাসে। সরকারি তথ্যমতে, দেশে গত এক দশকে বজ্রপাতে মারা গেছেন আড়াই হাজারের বেশি মানুষ।

বজ্রপাতে মাঠে-ঘাটে কৃষক ও কর্মজীবী শ্রেণির মানুষই বেশি মারা যাচ্ছেন। তাঁরা কেউ কাজ করছিলেন মাঠে- খামারে, কেউবা নৌকায় খেয়া পার হচ্ছিলেন, জেলেরা ধরছিলেন মাছ। কর্ম-কোলাহলে আচমকা ঝরে গেছে অনেক প্রাণ। বাংলাদেশে গত দেড় মাসেই ১৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি একটি সংস্থা।

বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা দেয়। তখন বজ্রপাতরোধে সারা দেশে তালগাছ রোপণ কর্মসূচিও হাতে নিয়েছিল সরকার। তালগাছ খুবই ধীরগতির বর্ধনশীল গাছ। ঐসব গাছের বর্তমান হাল বা কতটুকু পরিণত হয়েছে তা জানা যায়নি। তালগাছ পুরোপুরি পরিণত হতে ২০-৩০ বছর পর্যন্ত লেগে যায় বলে এসব গাছ থেকে সুফল পেতে আরো অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে। ততদিন মানুষের প্রাণহানি থেমে থাকবে না। বজ্রপাতরোধে এটা একটি সনাতন পদ্ধতি। আধুনিক প্রযুক্তির এই যুগে সনাতন পদ্ধতির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না থেকে সারা দেশে যথাশীঘ্রই আধুনিক ‘বজ্রনিরোধক পোল’ বসানো জরুরি। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও একসময় বজ্রপাতে বহু মানুষের মৃত্যু হতো। তারা বজ্রনিরোধক খুঁটি বা পোল স্থাপন ও মানুষকে সচেতন করার মধ্য দিয়ে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে এনেছে। একইসঙ্গে বৈজ্ঞানিক তথ্যভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাভিত্তিক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে এসব দেশ। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপের দেশগুলোসহ পূর্ব এশিয়ায় বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা বহুলাংশে কমেছে। তাহলে আমরা কেন শুধু তালগাছের ওপর নির্ভরশীল থাকব বজ্রপাতে মানুষের জীবনের সুরক্ষায়?

তৌহিদ বিল্লাহ