শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অণুগল্প

ফাঁদ

আপডেট : ১৭ এপ্রিল ২০১৯, ১৯:৪৯

 

মাঝরাত। টিকাটুলি থেকে যাত্রাবাড়ি পর্যন্ত রাস্তায় রাত দশটার পর যান চলাচল নিষিদ্ধ। এমনিতে সন্ধ্যা থেকে কারফিউ।

রাস্তার উপর কয়েকটা ছায়া দেখা গেল। রাস্তার ঢালু দিয়ে চুপিসারে তারা এগিয়ে এসেছে। মুক্তিসেনার কয়েকজন বিচ্ছু। গুঁড়িগুঁড়ি পায়ে তারা উঠে এল মেইন রোডে। এ রাস্তায়  সারা রাত মিলিটারি লরি চলে। পাকিস্তানি মিলিটারি। এ রোড ধরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায় বাঙালি নিধন করতে। যায় তাদের রসদপত্র। গোলাবারুদ। এ মুহূর্তে রাস্তা সুমসাম। কোনো গাড়ির বহর দেখা যাচ্ছে না। এখনই মোক্ষম সময়।

বিচ্ছুরা দ্রুত কাজ শুরু করে দিল। যাত্রাবাড়ির দিকে চলাচলের বড় সড়কটার উপর। পেতে দিল কয়েকটা ছোট ছোট মাইন।

ওদের মধ্যে কে একজন বলে উঠল: এতটুকু মাইন। এতে কি খানসেনাদের ভারী ভারী লরির কিছু হবে?

আরেকজন বলল: ছোট হলে কী হবে, ধানি লঙ্কা।

কমান্ডার শশব্যস্ত হাত চালাতে চালাতে বলল: কথা কম। এই টুকুতেই যা হবার হবে। এতটুকু হলেও চলবে। তারপর দেখবে ধুন্ধুমার খেলা। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে এখান থেকে কেটে পড়।

অল্প সময়ের কাজ। দ্রুতই শেষ হলো। কমান্ডারের নির্দেশে ওরা দ্রুত সরে গেল জনবসতির দিকে। আলাদা আলাদা গ্রুপে।

রাস্তায় আবার গভীর নীরবতা। মুক্তিযোদ্ধারা যার যার  নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে কান পেতে রইল কোনো কিছু একটা ঘটার অপেক্ষায়।

রাস্তার উপর উজ্জ্বল বাতির আলো জ্বলে উঠল। হেডলাইট। পরপরই শোনা গেল ঘর্ঘর আওয়াজ। মিলিটারিদের ভারী লরিগুলো এগিয়ে আসছে। রাতের বুক চিরে নিরীহ জনপদে আতঙ্ক ছড়িয়ে। কার্ফ্যুর নীরবতা ভেঙে।

হঠাত্ বিকট বিস্ফোরণ। পাকিস্তানি আর্মি ভর্তি দুটি লরি গড়িয়ে পড়েছে রাস্তার পাশে খাদে। আহত লোকগুলো আর্তনাদ করছে। হুলস্থূল পড়ে গিয়েছে অন্য আর্মিদের মধ্যে। এত রাতে এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে। নিশ্চয়ই বাঙালি বিচ্ছুগুলো আশেপাশে ছিড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাদের উপর এখনি হামলে পড়বে। দেখা দিল চরম আতঙ্ক। হট্টগোল আরো বেড়ে চলল।

বিস্ফোরণের কাছাকাছি এলাকাতেই মিলিটারিদের যাত্রাবাড়ি চেকপোস্ট। সাড়া পড়ে গেল সেখানেও। তাদের কাছে মনে হলো, উল্ল­াস করতে করতে মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছুগুলো এদিকেই এগিয়ে আসছে।

চেকপোস্টের আর্মিরা সতর্ক হয়ে গেল। তারা পজিশন নিল। ঘটনাস্থল লক্ষ্য করে গোলাগুলি শুরু করে দিল।

ওদিকে আক্রান্ত হয়ে মাইনকবলিত লরির আর্মিরা ভাবল, বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চারপাশ থেকে মুক্তিরা তাদের ঘিরে ফেলেছে। হামলা চালিয়েছে। তারাও পজিশন নিল। শুরু করল পালটা গুলিবর্ষণ। রাতভর তারা নিজেরাই নিজেদের মারার জন্য পাগলপারা হয়ে উঠল। ভোরের আলো না ফোটা পর্যন্ত এ আত্মঘাতী যুদ্ধ চলতেই থাকল।