মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

অণুগল্প

সুবেহ সাদিক

আপডেট : ১১ জুন ২০১৯, ১৯:৪৬

 

সুবেহ সাদিকে, প্রায় কাছাকাছি সময়ে হাসপাতালে এসে গেল প্রায় কাছাকাছি বয়সের দুই শিশু। ছেলেটার মুখ নীল, মেয়েটারও তাই। রাস্তায় পড়ে ছিল মেয়েটা। ছেলেটাকে কে যেন এনে ‘একটু আসছি’ বলে নিখোঁজ হয়ে গেছে আঁধারে।

ঘুম জড়ানো হাসপাতালে আড়মোড়া ভাঙায় শিশু দুটির প্রায় কাছাকাছি রকমের যন্ত্রণা। গোঙানির ভেতর দুজনই ডাকে ‘মা’, দুজনই পায় না মাকে, পায় না আসলে কাউকেই। প্রায় কাছাকাছি সময়ে জ্ঞান হারানো শিশুদের চোখে গড়িয়ে পড়েছিল গরম কান্নার ফোঁটা। ইমার্জেন্সিতে থাকা প্রায় কাছাকাছি বয়সের ডাক্তার গোটা দুই-তিন ‘অক্সিজেন’, ‘রক্ত’, ‘অপারেশন’ ইত্যাকার চাহিদা জানাতে জানাতে দেখে চোখ ডলতে ডলতে আসা পুলিশ জাগিয়ে দেয় পুরো সূর্য, আলোতে জেগে ওঠে প্রশ্নটা—‘সাথে কে আছে?’

কেউ নেই। ছেলেটারও ছিল না। মেয়েটারও নেই। ছোট্ট শরীরে আঁচড়ানো-কামড়ানোর ক্ষত প্রায় কাছাকাছি রকমের দুজনেরই। মেয়েটার শরীরে হামলে পড়েছিল মানুষ না পশু, সংখ্যায় ছিল তা এক না একাধিক, তদন্ত করলেই জানা যাবে বলে আশ্বস্ত করে পুলিশ। ছেলেটার শরীরেও প্রায় কাছাকাছি রকমের ঝামেলা। শিকার হয়েছিল সে মানুষ না পশুর, সংখ্যায় ছিল তা এক না একাধিক, তদন্তের আশ্বাসে মিলে যায় প্রায় কাছাকাছি রকমের স্বস্তি।

গণমাধ্যমে তোলপাড় চলে দিনভর। ছেলেটা বলাত্কারের শিকার। মেয়েটা ধর্ষণের। টিভিতে খবর-পাঠিকার সুন্দর উচ্চারণে শব্দ দুটি মিষ্টি হাসি মেখে বেরিয়ে পড়তেই কান খাড়া হয়ে যায় ছেলেটা আর মেয়েটার প্রায় কাছাকাছি বয়সের শিশুটির। তখন সে পড়ে যায় গোঁজামিল আঁধারে। বলাত্কার কী, ধর্ষণই বা কাকে বলে, এইসব প্রশ্ন করতে চেয়েছিল সে। টিভিটা বন্ধ করে হাতের তালুতে চকলেট নিয়ে কাছে যে টেনে নিল তাকে, হামলে পড়ার পর মানুষ না পশু ছিল, ছিল এক না একাধিক, তা বলতে পারেনি শিশুটাও। প্রাণহীন শরীরে ক্ষত ছিল এতটাই, শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা জানা যায়নি এখনো। তদন্ত করলেই জানা যাবে বলে মিলে যায় আশ্বস্ত এবারও।

পরবর্তী সুবেহ সাদিকে প্রায় কাছাকাছি সময়ে ছেলেটা আর মেয়েটাও যাত্রা করেছিল অসীমে। তৃতীয় শিশুটির সঙ্গে। কে জানে, সঙ্গে ছিল কি না আরো আরো শিশু, সংখ্যায় তারা কতজন, তদন্ত শেষ হোক, জানা যাবে অতঃপর।