শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মেলা নন-ফিকশনের আগ্রহ ফিকশনে

আপডেট : ১৫ নভেম্বর ২০১৯, ২২:০৩

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ প্রাঙ্গণে বসেছিল তিনদিন ব্যাপী নন-ফিকশন বইমেলা। শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। মেলা চলাকালে স্টলগুলোতে তরুণ-তরুণীদের অধিকাংশের চাহিদা তালিকায় ছিল গল্প উপন্যাস কিংবা কল্প-কাহিনির বইয়ের। নন-ফিকশন বইয়ের প্রতি আগ্রহ দেখায়নি বেশিরভাগ ক্রেতা। নন-ফিকশন বইয়ের মেলায় পাঠকরা খোঁজ নিয়েছেন ফিকশন বইয়ের। পাঠকদের নন-ফিকশন বই সম্পর্কে ধারণা না থাকা, ফিকশন বই পড়তে অভ্যস্ততার কারণে এমনটা হচ্ছে বলে মনে করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

স্টলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিক্রি হওয়া বইয়ের অধিকাংশ পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত কিংবা খুবই পরিচিত লেখকদের। আগামী প্রকাশনী, শ্রাবণ প্রকাশনী, দিব্য প্রকাশসহ বেশ কয়েকটি স্টলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত মেলায় আগত ক্রেতারা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও তথ্যভিত্তিক বইয়ের চেয়ে ফিকশন বইয়ের খোঁজ নিয়েছে বেশি। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার তারা স্টলে ফিকশান বই তুলনামূলক কম রেখেছে বলে জানায়। মেলায় নন-ফিকশন বইয়ের স্টলের চেয়ে ফিকশন বই আছে এমন স্টলগুলোতে ভিড়ও বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

মেলায় আসা শিক্ষার্থী তানভীর সাঈদ বলেন, নন-ফিকশন বইকে একাডেমিক বই হিসেবে বিবেচনা করি। তাত্ত্বিক এবং একাডেমিক বইগুলো সবসময় পড়তে হয়। তাই তাত্ত্বিক জীবন থেকে বেরিয়ে এসে আনন্দ পাওয়ার জন্য এই ফিকশন বইয়ের প্রতি মনোযোগ দিতে হয়।

দেশের খ্যাতনামা ২৬টি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণে শুরু হওয়া এই মেলায় বিক্রির হারও কম। চারটি প্রকাশনা সংস্থা ছাড়া বাকি প্রকাশনাগুলোতে বিক্রীত বইয়ের সংখ্যা ৩০ থেকে বড়ো জোর ৬০টি। নন-ফিকশন বইয়ের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ কম হওয়ায় এ পরিস্থিতি বলে জানান বিক্রেতারা।

তবে এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও আগত অতিথিরা। তারা জানান, নন-ফিকশন বইগুলা সব সময় খুঁজে পাওয়া যায় না। প্রয়োজনের সময় বইয়ের সবচেয়ে বড়ো বাজার নীলক্ষেতেও মেলে না এসব বই। এতে দুর্ভাবনায় পড়তে হয় পাঠকদের। নন-ফিকশন বইমেলা হওয়ায় আমরা এক ধরনের ভারমুক্ত হতে পারি। প্রয়োজনীয় বইগুলো কিনে রাখতে পারেন বলেও জানান তারা।

বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জ্ঞানের জগতে ফিকশন বইয়ের চাইতে নন-ফিকশন বইয়ের গুরুত্ব অনেক বেশি। তাত্ত্বিকভাবে সমৃদ্ধ হতে এসব বই আমাদের সাহায্য করে। তবে সারা বিশ্বে নন-ফিকশনের বাজার বড়ো হলেও বাংলাদেশে এর পরিমাণ খুবই কম। তারা জানান, অতীতে ফিকশন বইয়ের লেখক বেশি হলেও এখন নন-ফিকশনের লেখকই বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. এম এম আকাশ বলেন, দেশে নন-ফিকশন বইয়ের গুরুত্ব থাকলেও এ নিয়ে কোনো মেলা হয় না। কিন্তু তিন দিনব্যাপী আয়োজিত মেলা আমাদের আশা দেখিয়েছে। আশা করি, সামনের দিকে নন-ফিকশন বই নিয়ে মেলার পরিসর আরো বৃদ্ধি পাবে।

তবে মেলায় ফিকশন বইয়ের চাহিদার বিষয়ে তিনি বলেন, দেশে নন-ফিকশন বইয়ের বাজার খুবই অল্প। সুতরাং এখানেও ক্রেতা না থাকা কিংবা কম হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু এ ধারা অব্যাহত থাকলে এক সময় এই বইয়ের বাজার বাড়বে।

বইমেলা সম্পর্কে ৫ম নন-ফিকশন বইমেলার আহ্বায়ক এম এম মূসা বলেন, মেলার উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থী এবং পাঠকদের মধ্যে নন-ফিকশন বই পড়া সম্পর্কে আগ্রহ তৈরি করা। এটি বাংলাদেশের প্রথম নন-ফিকশনভিত্তিক বইমেলা। অন্য মেলাগুলো ফিকশন, নন-ফিকশন একসঙ্গে আয়োজন করা হয়। আমরা চাচ্ছি শিক্ষার্থীদের মধ্যে নন-ফিকশন বই পড়ার আগ্রহ তৈরি করতে। তিনি জানান, ‘ফিকশন, নন-ফিকশন বই সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের খুব বেশি ধারণা নেই। আর শিক্ষার্থী এবং পাঠকরা সাধারণত ফিকশন বই পড়ে অভ্যস্ত, যার কারণে তারা ফিকশন বই খুঁজে। এ ধরনের উদ্যোগ চলমান থাকলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফিকশন এবং নন-ফিকশন নিয়ে আলাদা আগ্রহ তৈরি হবে।’