শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে বার ও বেঞ্চের মধ্যে আলোচনা দরকার’

আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০১৯, ২২:১২

বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের যুগপূর্তি উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান

g ইত্তেফাক রিপোর্ট

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এম এ মতিন বলেছেন, ন্যায়বিচার মানে মনিবের আনুগত্য নয় বরং আইনের আনুগত্য। গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বার এবং বেঞ্চ এর মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমাদের চরিত্রে এবং অনুভূতিতে স্বাধীনতার বোধ থাকা প্রয়োজন।

আমরা যদি অধিকার সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন থাকি তাহলেই সত্যিকারের বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আসবে। সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে সংবিধানের বেসিক স্ট্রাকচারের (মৌলিক কাঠামো) চেয়ে জনগণের ইচ্ছাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের এক যুগ পূর্তিতে আয়োজিত মুক্ত আলোচনায় বিচারপতি মতিন এ কথা বলেন। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মানবাধিকার সংগঠন ‘হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন’ এই আলোচনার আয়োজন করে।

বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, বিচারের রায় পক্ষে আসলে বিচার বিভাগ স্বাধীন, আর বিপক্ষে গেলে পরাধীন—এটা ঠিক নয়। বিচার বিভাগের সম্মান রক্ষায় সকলের সচেতনতা প্রয়োজন। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধায়নে একটি স্বাধীন সচিবালয় থাকা খুবই জরুরি। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, হয়তো বিচার বিভাগ হতে আমরা যতটা চাই ততটা পাই নাই, কিন্তু স্বাধীনতার পর হতে বিচার বিভাগের অর্জন কম না।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ সরকারের আস্থাভাজন ও দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতেই হয়ে থাকে। এই যদি হয় বিচারক নিয়োগের অবস্থা, তাহলে সঠিক বিচার আসবে কি করে।

সাবেক জেলা জজ মাসদার হোসেন বলেন, নানামুখী প্রতিকূলতার মাঝে আমরা যে প্রত্যাশায় বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে স্বাক্ষর করেছিলাম, তা হয়তো অনেকটাই কার্যকর হয়েছে। কিন্তু বিচার বিভাগ আর্থিকভাবে স্বাধীন না হলে এই পৃথকীকরণ অনেকটাই মূল্যহীন।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব করা একটা বৈশ্বিক অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কোনো কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারের উদ্দেশ্য থাকে তার বিরুদ্ধে যেন কোনো রায় না আসে, যদিও বিচারের ক্ষেত্রে ইনসাফ ও সদাচার জনগণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ একত্রিত হয়ে গেলে সুশাসনের অভাব পরিলক্ষিত হয়। তাই বিচার বিভাগের বাস্তবিক পৃথকীকরণের জন্য কার্যকর কর্মপন্থা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের প্রেক্ষাপট নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান। তিনি বলেন, বিচার বিভাগ পৃথকীকরণে আমাদের পলায়নপরতার অবসান ঘটুক। মাসদার হোসেন মামলার অর্জনকে পাথেয় করেই আমাদের পথ চলতে হবে। আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।